Friday, June 7, 2019

এমি সিজেয়ার-এর পরাবাস্তব কবিতা ( ১৯১৩ - ২০০৮ ) । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

এমি সিজেয়ার-এর পরাবাস্তব কবিতা ( ১৯১৩ - ২০০৮ ) ।

 অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

এমেট টিল
তোমার চোখ ছিল সামুদ্রিক শাঁখ যার ভেতরে তোমার পনেরো বছরের
বিপুল সংঘর্ষের রক্ত ঝকমক করছিল ।
তরুণদেও কোনও বয়স ছিল না,
কিংবা আকাশচুম্বী বাড়িগুলোর চেয়ে
পাঁচ শতকের অত্যাচার
ডাইনিদের আগুন তাদের ওপরে চাপ হয়ে গিয়েছিল,
পাঁচ শতকের সস্তা জিন বড়ো চুরুটের
মোটা ভূড়ির টোকো বাইবেলের টুকরোয় ভরা
পাঁচ শতকের তেতো মুখ সম্ভ্রান্ত বয়স্ক মহিলাপাপ
তারা ছিল পাঁচ শতক পুরোনো এমেট টিল,
কেইনের বলিকাঠে পাঁচ শতকের বয়সহীন বয়স ।
          এমেট টিল আমি বলি :
           শূন্য হৃদয়ে,
           রক্তের একটা ফোঁটা নেই,
আর তোমার কথা বলতে হলে তা আমার সূর্যকে লুকোক, 
আমার রুটির সঙ্গে মেশাক:
---”ওহে শিকাগোর খোকা
এটা কি এখনও সত্যি যে তোমার দাম
একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষের সমান ?”
বসন্তকাল, সে তোমাকে বিশ্বাস করতো। এমনকি রাতের কিনারায়,
মিসিসিপি নদীর কিনারায় গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার বাঁধ,
তার সমাধির মতন ঝড় উঁচু বাঁধ আর জাতি-ঘৃণার মাঝে ।
তার ঝর্ণা নিজের ফিসফিসানিকে বয়ে নিয়ে গেছে চোখের বন্দরগর্তে।
বসন্তকালে শিকারি কুকুরের ডাকে গবাদি পশুর আতঙ্ক রক্তের সাভানায় ।
বসন্তকালে সুন্দর হাত থেকে খোলা দস্তানায় 
গোলাবারুদের বিস্ফোরণে আর কপির বীজ,
আতঙ্কে জমারক্ত, ঘৃণার জমারক্তকে গলিবে ফেলার
বয়সের সঙ্গে ফুলে ওঠা রক্তস্রোতে যা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে
তাড়া-খাওয়া পশুদের বিপজ্জনক শিরোনাম ।                        
                                   কিন্তু ওরা
ওরা ছিল দুর্ভেদ্ধ, ঢিলেঢালা যেমন ওরা ছিল,
আর অজানা রামছাগলের ওপরে চেপেছে গায়ের জোরে
            ---”শিকাগোর খোকা”---
সবকিছু চলে গেছে জাতের বাতাসের ভেড়ারডাকে
ও শিরায় নীল ঝোপের আওয়াজ শোনে
রক্তপাখির অবিরাম গানের সঙ্গে,
ও ঘুমের তীরের ওপরে অনুমান করে নেয়
সূর্যকে, তোমার অলক্ষিত পদক্ষেপের উথ্থান,
এক উদ্দীপ্ত মাছ, আশ্চর্য নীল ক্ষেতের ।
তারপর রাত তার বাহুকে মনে রেখেছে
এক রক্তচোষার পেটমোটা উড়াল হঠাৎ মাথার ওপরে
আসর বিগ মিলামের কোল্ট ৪৫
রাষ্ট্রের দণ্ডাদেশ লিখে দিল জঙধরা অক্ষরে জীবন্ত কালো দেয়ালের ওপরে :
২০ বছর দস্তা
১৫ বছর তামা
১৫ বছর তেল
           আর ১৮০তম বছরে এই রাজ্যগুলো
            কিন্তু হৃদয়ে সময়ের ঘড়ির কোনো বোধ ছাড়াই
            কি, কিচ্ছু নয়, শূন্য
            রক্তের একটা ফোঁটাও নয়
            শাদা হৃদয়ের কঠিন অ্যান্টিসেপ্টিক মাংসে ?
                  
লাফাসাদিও হার্ন-এর মূর্তি
নিঃসন্দেহে এটা অসম্ভব মাঝ সমুদ্রে ডাক দেওয়া
তখনও উল্লম্ব দাঁড়িয়ে বাতাসের আঁচড়ের মধ্যে
যার হৃদয় প্রতিটি স্পন্দনের সঙ্গে ধাক্কা খায়
সত্যিকার এক পুষ্পলতার প্রলাপ ।
সংবেদনময় হৃদয়ের বড়ো দণ্ডাদেশ
মূর্খদের সম্পর্কে তোতলামি !
“আর কে, কে চায়,” আমি শুনতে পেলুম
টিটকিরির খিঁচুনি ছাড়াই এক কন্ঠস্বর, “অংশ নেবার জন্য
মানুষের আত্মায় ? লড়ে যাবার
তেজ ? সারসত্তার নৈতিকতায় যার অধঃপতন সে পড়ে যায়
আবার উঠে দাঁড়াবার ? হৃদয়ের নেতার ? নরকের লাঙল ?”
তারপর তারপর আমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এগিয়ে চলল
আর চাউনি অবিরাম ডিম পাড়তে লাগল :
তুমি খেজুরগাছে চড়ে গেলে
ন্যানি রোসেট পাথরের ওপরে বসে খাচ্ছিলেন
শয়তান চারিদিকে উড়ে বেড়াচ্ছিল
সাপের চর্বি মাখানো দেহে
বিগত আত্মাদের তেল মেখে
শহরে একজন দেবতা ষাঁড়ের মাথা পরে নাচছিলেন
গলা থেকে গলায় বইছিল পিঙ্গল মদ
কেঠো-বাসায় মৌরির সঙ্গে মেশানো হচ্ছিল কমলালেবুর রস
তামাকরঙা মানুষদের ভিড়ে
দাবা খেলায় মত্ত
আঙুল দিয়ে পাঠিয়ে দিল স্বপ্নদের
ছায়ায় পকেটের ভেতরে বড়ো মাপের ক্ষুরগুলো ঘুমোচ্ছিল
গলা থেকে গলায় বইছিল পিঙ্গল মদ
কিন্তু কেউই নয় কেউই নয় জবরদস্ত সাড়া দিতে উদ্যত
আর ভিমরুলদের কামড়ে নিজের শ্লেষ্মা উৎসর্গ করল
হে অদ্ভুত প্রশ্নকারী
তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি আমার অতিরিক্ত জগ
কালো স্বরবর্ণকে স্মৃতিতে ধরে রাখার প্রতি
আমি আমি আমি
আর তোমার কথা বলতে গেলে তোমার ধৈর্য সৃষ্টি করা হয়েছিল
অর্কিডে চাটা ঝড়ে বিপর্যস্ত ভাঙা মাস্তুল জলদস্যুর হুকুমে

...রাষ্ট্রের অবস্হা সম্পর্কে
আমি কল্পনা করি রাষ্ট্রের অবস্হা সম্পর্কে এই বার্তা কংগ্রেসকে দেয়া:
অবস্হা বেগতিক,
কেবল ৭৫ বছরের লোহা মাটির তলায় টিকে আছে
৫০ বছরের কোবাল্ট
কিন্তু ৫৫ বছরের সমান গন্ধক আর ২০ বক্সাইটের
হৃদয়ে নাকি ?
    কিচ্ছু নয়, ফাঁকা,
    আমার কোনো আকরিক নেই,
    গিরিখাদে যেখানে কোনো প্রাণীই শিকারের জন্যে ঘুরঘুর করছে না,
    রক্তের একটা ফোঁটাও আর বাঁচেনি ।

আমার ঘোড়া বিয়োবার আস্তাবল থেকে
         মেঘের দল, মশাল নিয়ে লাইন লাফ দিয়ে পেরোও ! 
বৃষ্টি হিংস্র তরুণী তোমার আশ্রয় ফাঁস করে দিচ্ছেঁ ! 
সমুদ্র সাপের হিসহিসানি দিয়ে থেমে যাবে ! 
সমস্ত গর্ত আর আগ্নেয়গিরি ভাসছে! 
ভিড়ের হুড়োহুড়ি আর পাগল দেবতারা ! 
তোমার মগজকে উড়িয়ে দাও ! 
ক্ষেতগুলোকে ত্রিশুল আর মুক্তো দিয়ে ফালাফালা করো !
 জেলেদের ছুঁড়ে আকাশে পাঠাও ! 
একটা চিন্তা । কী ? 
আগুন যা আর নষ্ট করা হয় না । 
যা ছিঁড়ে ফেলা সম্ভব তার তৃপ্ত বুকে সবকিছুই শ্লথ হয়ে আসছে।
        রাত । কী ?
 সমস্ত বস্তু যার ওজন হয় আর ফুরিবে যায় তার পরিসরে রূপান্তরিত হয় । 
পাসওয়র্ড । কী ? 
জগতকে একটা চালুনির ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া
 আর প্রতিটি  এড়ানোর কৌশলে সঙ্ঘবদ্ধতার অভাব ।
        বিদ্যুতের সময়, বিদ্যুতের সময়, নড়বড়ে জানোয়ার, 
টালমাটাল জানোয়ার, সন্ধানী জানোয়ার, 
আর নাকের ফুটোর ডাকে আর ফেনায়
 তুমি আকাশের আস্তাবল থেকে পালিয়ে যেতে।
       আর সেখানে ছিল চমৎকার বহুরঙা
       দীর্ঘ-ঘাসের মাঠ প্রতিটি টগবগের জন্য এবং প্রতিটি
গবাক্ষের ছায়া যেগুলো বেড়ে উঠছিল 
এইসব রাগি জানোয়ারদের আকাঙ্খার জন্য কমবয়সী 
আর কোকোফল দিয়ে পালিশ-করা
     জলের কোমল ত্বকের তলায় চিরকালের জন্য উজ্বল
 

No comments:

Post a Comment