Wednesday, June 5, 2019

ফিলিপ সুপো-র পরাবাস্তববাদী কবিতা ( ১৮৯৭ - ১৯৯০ ) । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

ফিলিপ সুপো-র পরাবাস্তববাদী কবিতা ( ১৮৯৭ - ১৯৯০ )  । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী       
                           
সেইন্ট পেলাজিয়া কারাগার থেকে লেখা কবিতা
বুধবার রণতরীর ওপরে
আর শনিবার তুমি এক পতাকার মতো
দিনগুলোর মাথায় মুকুট
রাজা আর মৃত পুরুষদের মতন
চটপট এক চুমুর মতন আমার হাত
শেকলপরা কপালে আরাম করে
একটা বাচ্চা কাঁদে তার পুতুলের জন্য
আর আমাদের আবার শুরু থেকে আরম্ভ করতে হবে
সোমবার আর মঙ্গলবার শীতল রক্ত
চারটে বৃহস্পতিবার কাজ থেকে রেহাই

একটা সুতো পাক খোলে
একটা ছায়া পড়ে যায়
একটা প্রজাপতির বিস্ফোরণ হলো
গুটিপোকা কিংবা জোনাকি

কে চাপে
ঝড়ের ওপরে
একটা বেলুন
মধু বা রূপোর চাঁদ
চারের ওপরে চার
চলো বাচ্চাদের খোঁজা যাক
বাচ্চাদের বাবা-মাকে
বাচ্চাদর বাচ্চাদের
বসন্তকালের কাঁসরঘণ্টাকে
গ্রীষ্মের আরম্ভকে
হেমন্তের আফশোষকে
শীতের নৈঃশব্দকে
একটা হাতি তার স্নানের টবে
আর তিনটে ঘুমন্ত বাচ্চা
একক একক কাহিনি
সূর্যাস্তের কাহিনি
                                       
জর্জিয়া       
আমি ঘুমোতে পারছি না জর্জিয়া
আমি রাতে তীর চালাই জর্জিয়া
আমি জর্জিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি
আমি জর্জিয়া ভাবছি
আগুন তুষারের মতন জর্জিয়া
রাত আমার প্রতিবেশি জর্জিয়া
আমি প্রতিটি শব্দ ব্যতিক্রমহীন শুনতে পাই জর্জিয়া
আমি ধোঁয়া উঠতে আর বয়ে যেতে দেখি জর্জিয়া
আমি ছায়ায় হামাগুড়ি দিই জর্জিয়া
আমি এখানে রাস্তায় দৌড়োই যা শহরতলি জর্জিয়া
এখানে একটা শহর যা একই
আর তা আমার কাছে নতুন জর্জিয়া
আমি ছুটে যাই এই এসে পড়ল বাতাস জর্জিয়া
আর শীতল নৈঃশব্দ আর ভয় জর্জিয়া
আমি চলে যাচ্ছি জর্জিয়া
আমি পালিয়ে যাচ্ছি জর্জিয়া
মেঘগুলো নেমে এসেছে হুমড়ি খেয়ে পড়বে জর্জিয়া
আমি বাহু মেলে ধরছি জর্জিয়া
আমি চোখ বন্ধ করতে পারছি না জর্জিয়া
আমি ডাকি জর্জিয়া
আমি চেঁচাই জর্জিয়া
আমি ডাকি জর্জিয়া
আমি তোমাকে ডেকে পাঠাই জর্জিয়া
তুমি কি আসবে জর্জিয়া
তাড়াতাড়ি জর্জিয়া
জর্জিয়া জর্জিয়া জর্জিয়া
জর্জিয়া
আমি ঘুমোতে পারছি না জর্জিয়া
আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি
জর্জিয়া
ফ্রাঁসি পিক্যাবিয়ার জন্য এপিটাফ
কেন
তুমি চাইলে তোমার চারটে কুকুরের সঙ্গে তোমাকে গোর দিই
একটা সংবাদপত্র
আর তোমার হ্যাট
তুমি আমাদের বলেছিলে তোমার কবরের ওপরে লিখতে
ভালোভাবে যাত্রা করো
ওপরেও ওরা তোমাকে বোকা বলেই মনে করবে

সঙ্গীতের সঙ্গে একথা বলো
সোনালি ব্রেসলেট আর ঝালর
রেলের ইঞ্জিন আর নৌকো
আর স্বাস্হ্যকর বাতাস আর মেঘ
আমি সহজেই তাদের বাদ দিই
আমার হৃদয় খুবই ছোটো
কিংবা অনেক বড়ো
আর আমার জীবন ছোটো
আমি ঠিক জানি না কখন আমার মৃত্যু আসবে
কিন্তু আমি বুড়ো হচ্ছি
দিনের সিঁড়ি বেয়ে নামছি
ঠোঁটে এক প্রার্থনা নিয়ে
প্রতিটি তলায় আমার বন্ধু অপেক্ষা করছে
কিংবা একটা চোর
কিংবা আমি
আমি আর জানি না কেমন করে কিছু দেখতে হয়
আকাশে একটামাত্র তারা কিংবা মেঘ ছাড়া
আমার দুঃখ কিংবা আনন্দ অনুযায়ী
আমি আর জানি না কেমন করে মাথা নোয়াতে হয়
এটা কি খুব ভারি
না আমি কি জানি যদি তা আমার হাতে
সাবানের ফেনা কিংবা কামানের গোলা
আমি হাঁটি
আমি বুড়ো হই
কিন্তু আমার লাল রক্ত আমার প্রিয় লাল রক্ত
আমার শিরায় ঘুরে বেড়ায়
বর্তমানের স্মৃতিদের তাড়ায়
কিন্তু আমার তৃষ্ণা এতো বেশি
আমি থামি আর অপেক্ষা করি
আলো
স্বর্গোদ্যান স্বর্গোদ্যান স্বর্গোদ্যান

খেলার সরঞ্জাম
ডাকটিকিটের মতন সাহসী
ও নিজের পথে চলে গেল
নিজের হাতে আলতো টোকা দিয়ে
পদক্ষেপ গোনার জন্যে
ওর হৃদয় বরাহের মতন লাল
টোকা টোকা
গোলাপি প্রজাপতির মতন
এখন আর তখন
ও একটা ছোটো সাটিন পতাকা পুঁতলো
যখন ও অনেকটা হেঁটে নিয়েছিল
বিশ্রাম নেবার জন্যে বসে পড়ল
আর ঘুমিয়ে পড়ল
কিন্তু যেহেতু সেদিন আকাশে প্রচুর মেঘ ছিল
গাছে অনেক পাখি
আর সমুদ্রে অনেক নুন
ওখানে আরও বহু জিনিসপত্র ছিল

সোনার পদক
রাত তার নক্ষত্রদের কনুইয়ের গুঁতো মারে
বালি আর তুলোর বৃষ্টি পড়ে
এখানে বড়োই গরম
কিন্তু নৈঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস বুনতে থাকে
আর গ্রীষ্মের গৌরব
সব জায়গায় ছিটেফোঁটা ইশারা করে
গরম-গরম অপরাধের
সেই সব লোকের যারা সিংহাসন পালটে দেবে
আর এক মহিমান্বিত আলো
পশ্চিমে
পূর্বে
রামধনুর মতন কোমল
এখন দুপুর
সব কয়টা কাঁসরঘণ্টা উত্তর দেয়
দুপুর
অপেক্ষায় কালা

বিশাল জানোয়ারের মতন
চারিদিক থেকে তার অঙ্গ বের করে আনে
থাবা এগিয়ে আনে
ছায়াদের আর রশ্মিদের
আকাশ আমাদের মাথায় ভেঙে পড়বে
বাতাস এলো বলে
যে আজকে নীল হতে হবে
একটা পতাকার মতন

No comments:

Post a Comment