Friday, August 21, 2020

বুল্লে শাহ : বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন

বুল্লা আমি জানি না আমি কে
বুল্লা আমি জানি না আমি কে
আমি মসজিদে বিশ্বাস করি না
আমি কাফেরদের রীতিতে বিশ্বাস করি না
আমি শুদ্ধ নই অশুদ্ধও নই
আমি বেদ বা বইতে নেই
আমি ভাঙ আর মদে নেই
আমি হারিয়ে যাইনি অসৎ হইনি
আমি বন্ধনে নেই দুঃখে নেই
আমি বিশুদ্ধে পালিত নই
আমি জলের নই মাটির নই
আমি আগুন নই  বাতাসও নই
বুল্লা আমি জানি না আমি কে
আমি আরবের নই লাহোরের নই
আমি হিন্দিভাষী নাগোর শহরের নই 
আমি হিন্দু নই পেশোয়ারি তুর্কি নই
আমি ধর্মের বিভেদ গড়ে তুলিনি
আমি আদম-ইভ গড়ে তুলিনি
আমি নিজের কোনো নাম দিইনি
আদি বা অন্ত আমি কেবল নিজেকে জানি
আমি আরেকজন কাউকে চিনি না
আমার চেয়ে জ্ঞানী কেউ নেই
এই বুল্লে শাহ লোকটা কে 
বুল্লা আমি জানি না আমি কে
বুল্লা আমি জানি না আমি কে
আমি মোজেস নই ফ্যারাওও নই
আমি আগুন নই বাতাসও নই
আমি অশিক্ষিতদের মাঝে থাকি না
কে এই বুল্লে শাহ, দাঁড়িয়ে রয়েছে ?
বুল্লা আমি জানি না আমি কে
বুল্লা আমি জানি না আমি কে

Tuesday, March 24, 2020

জাঁ-লুক গোদার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আর্মেনীয় পরিচালক আরতাভাজ পিলিশান-এর ; অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

Image result for godard

জাঁ-লুক গোদার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আর্মেনীয় পরিচালক আরতাভাজ পিলিশান-এর 

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

আরতাভাজ পিলিশান ( ১৯৩৮ ) একজন আর্মেনীয় চিত্রনির্মাতা, যাঁর কাজ সম্পর্কে ইউরোপে জাঁ লুক গোদারই প্রথম আগ্রহ দেখান । পিলিশান একাধারে তথ্যচিত্র ও কাহিনিচিত্র নির্মাতা , চিত্রনাট্য রচয়িতা, চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাস রচয়িতা এবং ফিল্ম তাত্ত্বিক । সিনেমাটিক দৃষ্টিকোণের  ‘ডিসট্যান্স মন্তাজ’ শৈলী প্রয়োগের জন্য তিনি খ্যাত, যেমন কৃষ্ণসার হরিণদলের সঙ্গে বিশাল পলায়নকারী মানুষদের তুলনামূলক দৃশ্য । চিত্রনির্মাতা সের্গেই পারাজানোভ বলেছেন যে, পিলিশান একজন বিরল প্রতিভাধর চিত্রনির্মাতা । পিলিশানের ফিল্মগুলো তথ্যচিত্র এবং ফিচার ফিল্মের মিশ্রণ, অনেকটা আভাঁ গার্দ চিত্রনির্মাতা ব্রুস কনারের মতন, প্রথানুগত তথ্যচিত্রের মতন নয়। কিন্তু তা মায়া ডেরেনের মতো আভাঁ গার্দ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, অর্থাৎ ওনার ফিল্মকে ‘অ্যাবসার্ড সিনেমা’ বলা যায় না । পিলিশানের ফিল্মগুলোকে বলা হয়েছে ‘কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গীকে ফিল্মে নামিয়ে আনার প্রয়াস’ । ফিল্মনির্মাণে উনি পুরোনো ফিল্মের সংগ্রহশালা থেকে কথাবস্তু নিয়ে মিশিয়েছেন, দুটি টেলিফোটো লেন্সের মাঝে তোলা দৃশ্যের মিশেল ঘটিয়েছেন । কিন্তু ওনার সংলাপহীন ফিল্মগুলো বেশ সংক্ষিপ্ত, ছয় মিনিট থেকে ষাট মিনিটের মধ্যেই আবদ্ধ । অবশ্য সঙ্গীত আর ধ্বনি-প্রয়োগকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন । ওনার বেশিরভাগ ফিল্ম কালো-শাদায় তোলা । গোদার-এর সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা প্রকাশিত হয়েছিল ‘লে মন্দে’ পত্রিকার ২ এপ্রিল ১৯৯২ সংখ্যায় ।



জাঁ-লুক গোদার :  কেমন পরিস্হিতিতে আপনি কাজ করেছেন ?
আরতাভাজ পিলিশান : আমি আমার সব ফিল্মই আরমেনিয়ায় তুলেছি, তবে মসকো থেকে সাহায্য নিয়েছি । আমি পুরোনো ব্যবস্হার গুণগান করতে চাই না, কিন্তু তার বিরুদ্ধে নালিশও করতে চাই না । অন্তত ওদের একটা সিনেমাটিক ইন্সটিটিউট ছিল, যেখানে খুব ভালো প্রশিক্ষণ পাওয়া যেতো । চিত্রনির্মাণ আমরা কেবল সোভিয়েট ইউনিয়নেই শিখিনি বরং সারা পৃথিবীতে শিখেছি, আর সেসময়ে প্রত্যেকেরই  নিজের কন্ঠস্বর খুঁজে পাবার সুযোগ ছিল । আমি এতো কম ফিল্ম তৈরি করেছি বলে তখনকার এসট্যাবলিশমেন্টকে দায়ি করতে চাই না ; বলা যায় যে, আমার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল । আমি জানি না নতুন ব্যবস্হায় কী ঘটতে চলেছে । আশা করি আমি ফিল্মের কাজ চালিয়ে যেতে পারব ; সমস্যা তো সব সময়েই থাকে, যেমন ফ্রান্সে রয়েছে, প্রযোজনা সম্পর্কিত সমস্যা আর জনগণের মাঝে সম্পর্কের সমস্যা । এখন পর্যন্ত আমার সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল ফিল্ম তৈরি করার পর তার বিতরণ ।
জাঁ-লুক গোদার : আমি জানতে পারলুম কেননা নিয়নে তথ্যচিত্রের উৎসবে ওগুলো দেখানো হচ্ছিল, আমি যেখানে থাকি তার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে । লুসানের সিনেমাথেকের পরিচালক ফ্রেডি বশ, সেগুলোর কপি করার জন্য “সোভিয়েট নিয়ম” অনুসরণ করেছিলেন : উনি রাতের বেলায় কপি করতেন আর আমাদের দেখাতেন -- অ্যানে-মারি মিয়েভিল আর আমাকে । আমার ওপর সেগুলো গভীর প্রভাব ফেলেছিল, কিন্তু পারাদজানভের ফিল্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ; উনি মনে হয় পারস্যের জাজিম বোনা আর সাহিত্যের ঐতিহ্যের কাছাকাছি । আপনার ফিল্মগুলো, আমার মনে হয়েছে, কেবল সিনেমাটিক ঐতিহ্য থেকেই জন্মাতে পারে । যেমন আইজেনস্টাইন, দোভঝেঙ্কো আর ভেরতভ একটা ফিল্ম তৈরি করে এমন প্রভাব ফেললেন যাকে বলা চলে ফ্ল্যাহার্টি বা কিউবার তথ্যচিত্র নির্মাতা সানটিয়াগো আলভারেজের মতন । বলা যায় এক ধরণের ফিল্ম, যা  একই সঙ্গে মৌলিক এবং ঐতিহ্যময়, একেবারে আমেরিকার বাইরে, যেগুলো পৃথিবীর চলচিত্রজগতে বেশ ক্ষমতাধর । এমনকি রোম শহরও, খোলামেলা একটা মহানগর, আমেরিকার কাছে ঋণী । যখন দখলকারীর কবজায় দেশটা থাকে, তখন প্রতিরোধের সমস্যা হল কেমন করে তাকে প্রতিরোধ করা হবে । আমি যখন আপনার ফিল্মগুলো দেখলুম তখন মনে হয়েছিল, তথাকথিত সমাজবাদী ব্যবস্হার যতোই গলদ থাকুক, একটা সময়ে কয়েকজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্ব ভিন্নভাবে চিন্তা করতে সফল হয়েছিলেন । হয়তো তা বদলে যেতে চলেছে । আমার কথা যদি বলি, বাস্তবের , আর তাকে ব্যবহারের প্রতিনিধিত্বকারী উপায়গুলোর সমালোচক হিসাবে, আমি রুশ চিত্রনির্মাতদের টেকনিককে পুনরাবিষ্কার করলুম, যাকে ওনারা বলতেন মন্তাজ । গভীর চিন্তার ফসল হিসাবে মন্তাজ, যে অর্থে আইজেনস্টাইন এল গ্রেকোকে বলেছিলেন টোলেডোর সবচেয়ে বড়ো মন্তাজশিল্পী ।
আরতাভাজ পিলিশান : মন্তাজ সম্পর্কে আলোচনা করা কঠিন । শব্দটা নিঃসন্দেহে ভুল । হয়তো বলা উচিত “শৃঙ্খলার প্রণালী”। টেকনিকাল প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে, গভীরতার প্রতিফলন হিসাবে আলো ফেলা ।
জাঁ-লুক গোদার : মন্তাজের রুশ প্রতিশব্দ কী ? কোনো প্রতিশব্দ নেই ?
আরতাভাজ পিলিশান : হ্যাঁ, মন্তাজ ।
জাঁ-লুক গোদার : যেমন, উদাহরণ দিই, “ইমেজ” শব্দের দুটি প্রতিশব্দ আছে রুশ ভাষায়। সেগুলো কাজে লাগে । প্রতিটি দেশের সিনেমাটিক শব্দের একটা করে অভিধান হলে আগ্রহের ব্যাপার হবে । আমেরিকানদের দুটো শব্দ আছে : “কাটিঙ” আর “এডিটিঙ” ( শব্দটা “এডিটরদের” কাজের সঙ্গে যুক্ত, সেই লোকগুলো কিন্তু ফরাসি ভাষায় যাদের বলা হয় “editeur’, তা নয়, এই ফরাসি শব্দটা অনেকটা “প্রযোজক” বলতে যা বোঝায়, তাই। শব্দগুলো দিয়ে একই জিনিসকে বোঝায় না, আর ওরা “মন্তাজ” বলতে যা বোঝায় তার ধারেকাছে আসে না ।
আরতাভাজ পিলিশান : অভিধাগুলোর দরুণ কথা বলতে আমাদের অসুবিধা হয় । একই সমস্যা হয় “documentaire” ( documentary ) শব্দ নিয়ে । ফরাসি ভাষায় আপনারা যাকে বলেন “কাহিনিচিত্র”, রুশভাষায় আমরা তাকে বলি “শিল্পচিত্র” । অথচ ফরাসিতে সব ফিল্মই শৈল্পিক হতে পারে । রুশ ভাষায় আরও দুটি অভিব্যক্তি আছে, “played film” এবং “non-played film” ( গোদার শব্দদুটির প্রতিশব্দ করেছিলেন “le cinema joue” এবং “cinema non joue” -- এই সাক্ষাৎকারের পর গোদার একটা ছোটো ভিডিও তুলেছিলেন Les enfants jouent a la Russie অর্থাৎ ‘রাশিয়ায় শিশুদের খেলা’ নামে । )
জাঁ-লুক গোদার : ও ব্যাপারটা আমেরিকানদের মতন, যারা গল্পের চিত্রায়নকে বলে “ফিচার ফিল্ম” । ফিচার মানে মুখের বৈশিষ্ট্য, বাহ্যিক গঠন, যে ব্যাপারটা ‘তারকা’দের চেহারা থেকে এসেছে । এই সমস্ত ব্যাপার বুঝতে পারার জন্য অনেক কিছু করা দরকার, যেমন ধরা যাক ফরাসি “copie standard” ( যাতে শব্দ আর ছবি একত্রিত করা হয় ), ইংরেজরা তাকে বলে “married print”, আমেরিকানরা বলে “answer print”, ইতালীয়রা বলে “copia campoione” ( first-rate copy ) -- আর তা মুসোলিনির সময় থেকে চলে আসছে। কিন্তু সবচেয়ে সিরিয়াস ব্যাপার হল  documentaire/documentary-র ভুল ব্যাখ্যা । আজকাল তথ্যচিত্র ও কাহিনিচিত্রের মধ্যে পার্থক্য, তথ্যচিত্র এবং কমার্শিয়াল ফিল্মের মধ্যে পার্থক্য, এমনকি তাকে শৈল্পিক ফিল্ম বললেও, তথ্যচিত্রের একটা নৈতিক ভঙ্গী থাকে যা ফিচার ফিল্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । “নিউ ওয়েভ” সব সময় দুটিকে মিশিয়ে ফেলেছে ; আমরা বলতুম যে রাউচ অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক তার কারণ উনি কাহিনি তৈরি করতেন তথ্যচিত্রের গুণাগুণ দিয়ে, আর রেনোয়াও তাই করতেন, কেননা উনি তথ্যচিত্র তৈরি করতেন কাহিনির গুণাগুণ দিয়ে ।
আরতাভাজ পিলিশান : ব্যাপারটা আর পরিচালনার সমস্যা নয় । ফ্ল্যাহার্টিকে অনেক সময়ে তথ্যচিত্র নির্মাতা বলে মনে করা হয় ।
জাঁ-লুক গোদার : ওহ, নিশ্চয়ই । উনি একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা, যিনি সবাইকে এবং সমস্তকিছুকে পরিচালনা করেছেন । নানুক, ম্যান অফ আরান, লুইজিয়ানা স্টোরি -- প্রতিটি শট পরিচালনা করা হয়েছে অত্যন্ত সাবধানে । ওয়াইজম্যান যখন বড়ো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোকে নিয়ে ফিল্ম তৈরি করলেন, ‘দি স্টোর’, উনি ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোর নিজেদের পরিচালনা আর কাহিনিকেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন ।
আরতাভাজ পিলিশান : একই কারণে আমি কখনও ফিল্মস্টুডিও বা টেলিভিশন স্টুডিওর কাঠামোর ভেতরে কাজ করার প্রস্তাব দিইনি । আমি এমন জায়গা খোঁজার চেষ্টা করেছি যেখানে শান্তিতে ফিল্ম তোলা যায় । অনেক সময়ে তা টিভির জন্যেও করতে হয়েছে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে পারা, নিজের ফিল্মের ভাষায় । অনেক সময়ে লোকে বলে যে ফিল্ম হল অন্যান্য শিল্প আঙ্গিকের সমন্বয় । আমি তাকে সত্যি বলে বিশ্বাস করি না । আমার ধারণা, ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল ‘টাওয়ার অফ ব্যাবেল’-এ, যেখানে আরম্ভ হয়েছিল ভাষার বিভাজন । টেকনিকাল কারণে অন্যান্য শিল্প আঙ্গিকের পর তা দেখা দিয়েছে, কিন্তু বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তা আগে এসেছে । আমি বিশুদ্ধ সিনেমা তৈরির চেষ্টা করি, যার জন্য অন্যান্য শিল্প থেকে কিছুই নিই না ।  আমি একটা এমন সেটিঙ খোঁজার চেষ্টা করি যার চারিধারে আবেগের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র গড়ে তোলা যায় ।
জাঁ-লুক গোদার : কিছুটা নিরাশাবাদী হবার কারণে, আমি সমস্ত ব্যাপারের আরম্ভের আগেই শেষটা দেখতে পাই । আমার কাছে, সিনেমা হল শিল্পের শেষ প্রতিভাস, যে ধারণাটা পাশ্চাত্য জগতের । অসাধারণ পেইনটিঙের যুগ শেষ হয়ে গেছে, অসাধারণ উপন্যাস উধাও হয়ে গেছে। সিনেমা ছিল, আপনি যদি মানেন, ব্যাবেলের আগেকার ভাষা, যা সবাই বিষয়টায় শিক্ষা ছাড়াই বুঝতে পারতো । মোৎসার্ট রাজকুমারদের সামনে বাজাতেন, চাষারা তা শুনতো না, যখন কিনা চ্যাপলিন সকলের জন্য অভিনয় করতেন । ফিল্মনির্মাতারা এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলেন যে ফিল্মের ভিত্তির জন্য কী মৌলিক, আর এই ধরণের অনুসন্ধান, আমি আরেকবার মনে করিয়ে দিই, অনেকটা পাশ্চাত্য জগতের ব্যাপার । এটা একটা মন্তাজ । এই বিষয়ে লোকে অনেক আলোচনা করেছে, বিশেষ করে পরিবর্তনের সময়ে । বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন ছিল রুশ সাম্রাজ্যের সোভিয়েত রাষ্ট্রে রূপান্তরণ ; স্বাভাবিকভাবে, রুশরাই সেই অনুসন্ধানে সবচেয়ে বেশি প্রগতি করেছিল, তার কারণ বিপ্লবের ফলে সমাজ নিজেই আগের আর পরের মন্তাজ তৈরি করে ফেলছিল ।
আরতাভাজ পিলিশান : ফিল্ম নির্ভর করে তিনটি ব্যাপারে : পরিসর, সময় এবং বাস্তব বিচলনে । এই তিনটি উপাদান প্রকৃতিতে বর্তমান, কিন্তু শিল্পের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সিনেমা তাদের পুনরাবিষ্কার করতে পারে । তাদের ধন্যবাদ যে বস্তুর গোপন ক্রিয়াকে আবিষ্কার করা সম্ভব। আমি নিশ্চিত যে ফিল্ম দর্শনের, বিজ্ঞানের, শিল্পের ভাষায় যুগপৎ কথা বলতে পারে । প্রাচীন যুগ হয়তো এই অভেদের সন্ধান করতো ।
জাঁ-পল গোদার : এই একই ব্যাপার পাওয়া যাবে যদি আমরা অভিক্ষেপের ধারণা সম্পর্কে ভাবি, যেমন তা উদ্ভূত আর বিকশিত হয়েছিল যতক্ষণ না আমরা তা টেকনিকালি অভিক্ষেপের যন্ত্রাদির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছি । গ্রিকরা প্ল্যাটোর বিখ্যাত গুহার তত্বের কথা কল্পনা করতে পেরেছিলেন । এই পাশ্চাত্য ধারণা, যা বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাসীরা অনুমান করেননি, অ্যাজটেকরাও করেননি, খ্রিষ্টধর্মে অবয়ব পেলো, যা গড়ে উঠেছে কোনও বৃহৎ আশার  বনেদের ওপরে । পরে তা গণিত বিশেষজ্ঞদের মাঝে ব্যবহারিক আঙ্গিকের বিষয় হয়ে উঠলো, যাঁরা আবিষ্কার করলেন -- আবার সেই পশ্চিমের ব্যাপার -- বর্ণনামূলক জ্যামিতি । পাসকাল এই ব্যাপারে অনেক খেটেছিলেন, সেই একই ধার্মিক, আধ্যাত্মিক অনুচিন্তন, মোচক সম্পর্কে তাঁর ধারণার ব্যাখ্যা দিয়ে । পরে আমরা পেলুম জাঁ-ভিক্টর পোন্সলেট, নেপোলিয়ানের সৈন্যবাহিনীর এক বিদ্বৎজন। তাঁকে রাশিয়ার কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, আর সেখানেই তিনি আকারের বৈশিষ্ট সম্পর্কে  তাঁর তত্ত্বের ছক কষতে পারলেন, যা কিনা বস্তু সম্পর্কে আধুনিক তত্বের বনেদ। কারাগারে ওনার আবিষ্কার কাকতালীয় ছিল না । ওনার সামনে ছিল একটা দেয়াল, আর সব কারাবন্দীরা যা করে তিনিও তাই করছিলেন: উনি দেয়ালে অভিক্ষেপ ঘটালেন । পালাবার উগ্র ইচ্ছে । গণিতবিদ হবার দরুণ তিনি নিজেকে সমীকরণে প্রকাশ করলেন । উনিশ শতকের শেষে এলো প্রযুক্তিগত উপলব্ধির সঙ্গতি । সেই সময়ে একটা আগ্রহব্যঞ্জক ব্যাপার ছিল ফিল্মে শব্দের অনুপ্রবেশ । এডিশন প্যারিসে এসেছিলেন ডিস্কের সঙ্গে চোখে দেখা যায় এমন দর্শনীয় টেপ নিয়ে। তা এখনকার মতনই কমপ্যাক্ট ডিস্কের ব্যাপার ছিল, যা আজও কিছু স্টুডিও ব্যবহার করে, তার সঙ্গে ফিল্মের ডিজিটাল শব্দাবলীকে মেশাবার খাতিরে । আর তা একটা প্রচলিত ধারা হয়ে উঠল ! অসম্পূর্ণতা নিয়েই, অন্যান্য ছবির মতন, তা চলতে লাগল, আর টেকনিকে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল । কিন্তু লোকেরা তা চাইতো না । লোকেরা সাইলেন্ট সিনেমা পছন্দ করত ; তারা কেবল দেখতে চাইতো ।
আরতাভাজ পিলিশান : শেষ পর্যন্ত যখন শব্দ এলো, বিশ শতকের শেষে, মহান চিত্রনির্মাতারা, যেমন গ্রিফিথ, চ্যাপলিন আর আইজেনস্টাইন, ব্যাপারটা সম্পর্কে তাঁদের ভীতি ছিল । তাঁদের মনে হয়েছিল শব্দের অনুপ্রবেশ তাঁদের এক পা পেছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । তাঁরা ভুল ছিলেন না, কিন্তু তাঁরা যে বিষয়ে ভাবছিলেন, তা সেই কারণে নয় ; শব্দ মন্তাজের মাঝে মাথা গলায়নি, তা ইমেজকে সরিয়ে তার জায়গায় আসতে চেয়েছিল ।
জাঁ-লুক গোদার : ইউরোপে ফ্যাসিজমের উথ্থানের সঙ্গে টকিজের প্রযুক্তি এসেছিল, আর সেই সময়েই আবির্ভাব হয়েছিল বক্তাদের । হিটলার ছিল একজন বড়ো বক্তা, মুসোলিনিও তাই, চার্চিল, দ্য গল আর স্ট্যালিন । টকি ছিল ভাষার ওপরে থিয়েটারের দৃশ্যের বিজয়, আপনি একটু আগে যে কথা বলছিলেন, ব্যাবেলের অভিশাপের আগে ভাষা যে অবস্হায় ছিল ।
আরতাভাজ পিলিশান : ভাষাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আমি যা ব্যবহার করি তাকে বলব “চিত্রকল্পের অনুপস্হিতি” । আমার মনে হয় লোকে ছবিগুলো শুনতে পায় আর আওয়াজকে দেখতে পায় । আমার ফিল্মগুলোতে ছবিগুলো আওয়াজের পাশেই সংশ্লিষ্ট হয়ে অবস্হান করে আর আওয়াজগুলো ছবির পাশে । এই পারস্পরিক বিনিময়গুলো থেকে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা নির্বাকযুগের ফিল্মের মন্তাজ থেকে আলাদা, কিংবা বলা ভালো, যে “ফিল্মগুলো কথা বলত না” তাদের থেকে ।
জাঁ-পল গোদার : আজকালকার দিনে ছবি আর আওয়াজ পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ; লোকে টেলিভিশন সম্পর্কে বেশি ওয়াকিবহাল । একদিকে ছবি আর আরেক দিকে আওয়াজ, এবং এখন আর এই দুটির পরস্পরের সঙ্গে স্বাস্হ্যকর ও বাস্তব সম্পর্ক নেই । তারা নিছক রাজনৈতিক প্রতিবেদন হয়ে গেছে । সেই কারণেই পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বিশ্ব-টেলিভিশন এখন রাজনীতির কবজায় । আর এখন রাজনীতি নতুন ধরণের ছবি গড়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ( তথাকথিত “হাই ডেফিনিশন” ), এমনই একটা আঙ্গিক যা বর্তমানে কেউই চায় না । এই প্রথমবার রাজনৈতিক ক্ষমতাধারীরা বলতে বাধ্য হয়েছেন : তোমরা এই জানালা দিয়ে এই ফিল্মের ছবিগুলো দেখতে পাবে । এমন ছবি, যার আঙ্গিক একতলার ছোটো জানালার মাপের, ফুটপাথের স্তরে একটা ছোটোখাটো ব্যাপার, যার আঙ্গিক চেকবইয়ের মতন ।
আরতাভাজ পিলিশান : আমি ভেবে অবাক হই যে টেলিভিশন আমাদের কী দিয়েছে। তা দূরত্বকে নিশ্চিহ্ণ করে দিতে পারে বটে, কিন্তু কেবল সিনেমাই সময়কে পরাজিত করতে পারে, মন্তাজ টেকনিকের দরুন । সময়ের এই জীবাণু -- সিনেমা তার ভেতর দিয়ে যেতে পারে । কিন্তু টকি আসার আগে ওই পথে তা বেশ দূরে সরে গেছে । সন্দেহ নেই যে তার কারণ হল মানুষ ভাষার চেয়ে বড়ো, শব্দের চেয়ে বড়ো । আমি মানুষের ভাষার চেয়ে মানুষকে বেশি বিশ্বাস করি।
[ ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী ]

জুলিয়েট রেনোল্ডস : ছবি আঁকা, হাংরিয়ালিজম ও বিট আন্দোলন

জুলিয়েট রেনোল্ডস : ছবি আঁকা, হাংরিয়ালিজম ও বিট আন্দোলন 
          দুটি আন্দোলনেই, কবি ও লেখকদের সংখ্যাধিক্যের কারণে, বেশ কম লোককেই পাওয়া যাবে যিনি তর্ক জুড়বেন যে বিট আন্দোলন এবং হাংরি আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে ছিল সাহিত্যের আন্দোলন । দুটি আন্দোলনই ডাডাবাদীদের সঙ্গে তাঁদের তুলনাকে আকৃষ্ট করলেও, কেউই এই দুটিকে শিল্পের আন্দোলন বলতে চাইবেন না, যা কিনা ডাডা আন্দোলনকে বলা হয়, তাঁদের গোষ্ঠীতে সাহিত্যিকরা থাকলেও ।
          কিন্তু বিট এবং হাংরিয়ালিস্টদের ইতিহাস ও উত্তরাধিকারকে যদি খুটিয়ে দেখা হয় তাহলে সন্দেহ থাকে না যে যেমনটা আলোচকরা মনে করেন তার চেয়ে অনেকাংশে বেশি ছিল শিল্পীদের অবদান এই দুটি আন্দোলনে। বিট আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিশ্লেষণেই তা সত্য বলে প্রমাণিত হয় । তাঁদের আন্দোলনে শিল্পের যে স্হির-নিবদ্ধ সন্দর্ভ প্রধম থেকে ছিল তা কখনও থামেনি । অবশ্য মনে রাখতে হবে যে বিটদের সম্পর্কে তথ্যাদি ভালোভাবে নথি করা হয়েছে, যা হাংরি আন্দোলনকারীদের ক্ষেত্রে হয়নি, ব্যাপারটা প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের ফাটলের অবদান । বিট আন্দোলন কাউন্টার কালচার হিসাবে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে উদয় হয়েছিল, যখন কিনা হাংরি আন্দোলন তার কায়া পেয়েছিল দরিদ্র, অবিকশিত একটি দেশে, তাও তারা সীমিত ছিল একটি রাজ্যে বা এলাকায় । তাছাড়াও, হাংরি আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিকভাবে এমন করে দাবিয়ে দেয়া হয়েছিল যা বিটনিকদের ক্ষেত্রে একেবারেই ঘটেনি । গিন্সবার্গ, ফেরলিংঘেট্টি, কোরসো, বারোজ এবং বাকি সবাই তাঁদের কুখ্যাতিকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে পেরেছিলেন, তাঁরা তা না চাইলেও পেরেছিলেন । এর ফলে তাঁদের আন্দোলন বহুকাল টিকে থাকতে পেরেছিল এবং লতায় পাতায় বেড়ে উঠতে পেরেছিল, জনমানসে কাল্ট হিসাবে স্হান করে নিতে পেরেছিল ।
          অপরপক্ষে, ১৯৬১ সালে মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সমীর রায়চৌধুরী ও দেবী রায় যে আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন তা কয়েক বছরের মধ্যেই সরকারি লাঠিচালনা ও নিজেদের মধ্যে অবনিবনার কারণে স্তিমিত হয়ে যায়, অবনিবনার কারণ ছিল সরকারের লোকেদের দ্বারা আন্দোলনকারীদের হয়রানি ও নাকাল করার চাপ । অশ্লীলতার আরোপে মলয় রায়চৌধুরী ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা ও পরে মলয়ের জেলজরিমানা ছিল হাংরি আন্দোলন ভেঙে ফেলার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিকল্পনা । তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে প্রত্যেক সদস্যের বাড়িতে নির্মম পুলিশি হানা দিয়ে বৌদ্ধিক ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, বই, পাণ্ডুলিপি এবং চিঠিপত্র । 
          হাংরি আন্দোলনের শিল্পীদের ক্ষেত্রে, বেনারসে, অনিল করঞ্জাই ও করুণানিধান মুখোপাধ্যায় এবং সহযোগী শিল্পীদের ‘ডেভিলস ওয়র্কশপ’ নামে স্টুডিও তছনছ করে দিয়েছিল পুলিশ, নষ্ট করে দিয়েছিল তাঁদের আঁকা পেইইনটিঙ, আন্দোলনের নথিপত্র, যা পরে আর ফেরত পাওয়া যায়নি । সৌভাগ্যবশত অনিল করঞ্জাইয়ের কিছু কাজ, হাংরি আন্দোলনের লাগোয়া সময়ের, সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছিল এবং তাঁর সংগ্রহের দুর্মূল্য সম্পদ হিসাবে সংরক্ষণ করা গেছে, যেগুলোয় পাওয়া যাবে হাংরি আন্দোলনের আইডিয়া এবং উদ্বেগ । এগুলো থেকে হাংরি আন্দোলনকে আরও গভীর ভাবে বোঝা যায় । এটা বলা ক্লিশে হবে না যে শব্দাবলীর তুলনায় উদ্দেশ্যকে ছবি আরও স্পষ্ট করে মেলে ধরতে পারে। অনিল করঞ্জাই ( ১৯৪০ - ২০০১ ) ছিলেন হাংরি আন্দোলনের প্রতি সমর্পিত একমাত্র শিল্পী । একই ধরণের বিট চিত্রশিল্পী ছিলেন রবার্ট লাভাইন ( ১৯২৮ - ২০১৪ )। অ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছেন যে বিট আন্দোলনের জন্ম দেয়ায় রবার্টের বেশ বড়ো অবদান আছে । রবার্টের সান ফ্রানসিসকোর বিশাল বাড়িতে বোহামিয়ান, পোশাকহীন, বুনো তরুণ-তরুণী বিট আন্দোলনকারীরা সবাই মিলে বিট আন্দোলনকে চরিত্র দিয়েছিলেন । বিট আন্দোলনের গ্রাফিক্স আর পোস্টার এঁকে দিতেন রবার্ট। অনিল এবং করুণাও হাংরি আন্দোলনে একই কাজ করতেন ।
           গিন্সবার্গ এবং রবার্ট নিজেদের মধ্যে নান্দনিক ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতেন । তাঁরা দুজনেই আণবিক কাখণ্ডে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত যুবসমাজের চেতনায় প্রতিফলিত অবক্ষয় ও মৃত্যুবোধকে নিজেদের কাজে প্রতিফলিত করতে চাইতেন, রবার্ট লাভাইনের কথায়, “স্হায়ীত্বের মিথ্যা” সম্পর্কে তিনি গিন্সবার্গের থেকে জেনেছিলেন । যে জগতের ভবিষ্যৎ নেই সেখানে স্হায়ী শিল্পকর্মের ধারণা তাঁকে অবশ করে দিয়েছিল, যা থেকে তাঁর মুক্তি পাওয়া অসম্ভব ছিল যদি না তিনি বিটনিকদের সংস্পর্শে আসতেন । ‘পাগল, ল্যাংটো কবি’ হিসাবে লোকে গিন্সবার্গকে জানতো, এবং রবার্টকে গিন্সবার্গ বলেছিলেন ‘মহান উলঙ্গ শিল্পী’, দুজনেই সহকর্মী ও বন্ধুদের চরিত্র তুলে ধরেছিলেন নিজের নিজের কাজে, প্রথমজন জ্বলন্ত ‘হাউল’ কবিতায় এবং দ্বিতীয়জন তাঁর রেখা ও রঙে । তাঁর আঁকা যুবক গিন্সবার্গের অয়েলপেইন্ট ব্যাপারটাকে বিশদ করে তুলেছে ।
            বিটদের তুলনায় অনিল করঞ্জাই পোরট্রেট আঁকা বেশ দেরিতে আরম্ভ করেন । স্টাইলের দিক থেকেই আর্টিস্ট দুজন ভিন্ন, কিন্তু তাঁদের আঁকা বেশ কিছু পোরট্রেটে পাওয়া যাবে ব্যক্তিবিষয়ের কোমলতা । এটা অনিলের ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে করুণার বাচ্চা মেয়ের চারকোল স্কেচে, যে বাচ্চাটাকে অনিল জন্মের সময় থেকেই জানতো, আর হাংরি আন্দোলনকারীদের ম্যাসকট হয়ে উঠেছিল ।
              রবার্ট লাভাইন, প্রেমে গিন্সবার্গের প্রতিদ্বন্দ্বী, পিটার অরলভস্কির যে বিরাট পেইনটিঙ এঁকেছিলেন, সেইটিই ছিল গিন্সবার্গের সবচেয়ে প্রিয় ছবি । উলঙ্গ, সুন্নৎ না-করা লিঙ্গ যৌনচুলে ঢাকা, ছবিটা যৌনতা উত্তেজক হলেও দুঃখি আর বিষণ্ণ । গিন্সবার্গ লিখেছেন যে তিনি পিটার অরলভস্কির সঙ্গে পরিচয়ের আগে ছবিটা যখন দেখেছিলেন তখন ‘চোখের দিকে তাকিয়ে প্রেমে বিদ্যুৎপৃষ্ট বোধ করেছিলেন।’ সেই সময়কার মানদণ্ড অনুযায়ী গিন্সবার্গ এবং লাভাইন দুজনেই ছিলেন পর্নোগ্রাফার । কিন্তু কবির তুলনায় শিল্পী বেঁচে গিয়েছিলেন আদালতের হয়রানি থেকে, বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার কেননা সত্তর দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সামনাসামনি নগ্নতা এবং সমকামকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করা হতো । রবার্ট লাভাইনের মতো অনিল করঞ্জাইও নগ্নিকা এঁকেছিলেন এবং আদালতের চোখরাঙানি পোহাতে হয়নি । কিন্তু অনিলের ‘ক্লাউডস ইন দি মুনলাইট ( ১৯৭০ ) রোমা্টিক ক্যানভাসে বিট পেইনটারের তুলনায় অনিলকে ভিশানারি বলে মনে হয় ।
          প্রখ্যাত কবি এবং ‘সিটি লাইটস’-এর প্রতিষ্ঠাতা লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি, যাঁকে ‘হাউল’ প্রকাশ করার জন্য অশ্লীলতার আরোপের মুখে পড়তে হয়েছিল এবং যিনি হাংরি আন্দোলনকারীদের মামলার সময়ে হাংরিয়ালিস্টদের রচনা প্রকাশ করেছিলেন, নিজেও শিল্পী ছিলেন । ফেরলিংঘেট্টির এক্সপ্রেশানিস্ট দৃশ্যাবলী, প্রথম দিকে বিমূর্ত, পরে ফিগারেটিভ এবং প্রায়ই সরাসরি রাজনৈতিক -- দর্শকদের নাড়া দেয় এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী হিসাবে তাঁর গুরুত্ব বৃদ্ধি করে ।
          ‘নেকেড লাঞ্চ’ গ্রন্হের লেখক উইলিয়াম বারোজ, যাঁকে আইনের ফাঁদে পড়তে হয়েছিল, বিট জেনারেশনের একজন নামকরা সদস্য, তিনিও ছিলেন ভিশুয়াল আর্টিস্ট । কিন্তু বারোজের পেইনটিঙ এবং ভাস্কর্য প্রকৃতপক্ষে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী । তিনি অনেক সময়ে নিজের মনের গভীরতাকে তুলে ধরার জন্য চোখ বন্ধ করে আঁকতেন, যাগুলো হতো উন্মাদগ্রস্ত, কেবল কড়া মাদক সেবনের এবং অযাচারী যৌনতার ফলেই নয়। বেশ কিছু ক্যানভাসে বুলেটের ছ্যাঁদা আছে, তাঁর দর্শকদের জানাবার জন্য যে উইলিয়াম টেলের মতন গুলি চালাতে গেলে তিনি নিজের স্ত্রীকে খুন করেছিলেন, স্ত্রীর মাথাকে খেলার বল মনে করে । বারোজকে বলা হতো ‘পাঙ্ক’-এর পিতা, পরে ‘পপ শিল্পের পিতা’ অ্যাণ্ডি ওয়ারহল-এর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন এবং দুজনে একত্র হলে আমোদ করতেন । অ্যাণ্ডি ওয়ারহল বন্দুকের ব্যাপার ভালোই জানতেন, যদিও তিনি ছিলেন আক্রান্ত, আক্রমণকারী নন । ‘দি ফ্যাক্টরি’ নামে খ্যাত ওয়ারহলের নিউ ইয়র্কের স্টুডিওতে বারোজ প্রায়ই যেতেন ।
          প্রথম দিকে বিটদের বিমূর্ত এক্সপ্রেসানিস্ট পেইনটারদের সঙ্গে একাসনে বসানো হয়েছিল, যদিও বিমূর্ত এক্সপ্রেশানিস্ট পেইনটাররা তাঁদের জীবনযাত্রায় বিটদের অচিরাচরিত ব্যক্তিগত জীবনের মতন ভবঘুরে ছিলেন না । তাঁরাও মিডিয়াকে ও দর্শকদের তাঁদের কাজের মাধ্যমে চমকে দেবার প্রয়াস করতেন । তাঁরাও, একইভাবে, প্রথানুগত আঁকার রীতিনীতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করতেন । তার জন্য তাঁরা বিশাল বিশাল ক্যানভাসে দ্রুত তরল স্ট্রোক দিতেন ; একে তাঁরা বলতেন ‘অরগ্যাজমিক ফ্লো’, আর এই ‘অরগ্যাজমিক ফ্লো’ ছিল হাংরিয়ালিজমের মননবিন্দু । বিমূর্ত এক্সপ্রেশানিস্ট পেইনটিঙকে এখন নৈরাজ্যবাদী মনে হতে পারে, যা বিট এবং হাংরি আন্দোলনের রচনাপদ্ধতিতে একই ধরনের ছিল বলা যেতে পারে, কিন্তু হাংরি পেইনটারদের শিল্পকলা ছিল সুচিন্তিত, তাঁদের কেঅস ছিল পরিকল্পিত ।
          একজন শিল্পী উন্মাদের মতন অনিয়ন্ত্রিত আবেগে এঁকে চলেছেন ব্যাপারটা নিছক ক্লিশে, এবং কম সংখ্যক শিল্পীই অনিল করঞ্জাইয়ের মতন এই ব্যাপারটায় জোর দিয়েছেন । নিওফাইট হিসাবেও, অস্হির তেজোময়তা ও পরিপূর্ণ জোশে অনিল করঞ্জাই এঁকেছেন প্ররিশ্রমান্তিক সুচিন্তিত ক্যানভাস । হাংরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে থাকার কারণে, যাঁদের মধ্যে তাঁর বয়স ছিল সবচেয়ে কম, এই বৈশিষ্ট্যগুলো গুরুত্ব পেয়েছে । যে একমাত্র শিল্পী তাঁকে প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন, তিনি হলেন ডাচ শিল্পী হিয়েরোনিমাস বশ ( ১৪৫০ - ১৫১৬ ) । বশের গ্রটেস্ক বিদ্রুপাত্মক চিত্রকল্প অনিল করঞ্জাইকে অনুপ্রাণিত করত, যে সময়ে অনিল শ্রেণিবিভাজিত এবং শোষিত সমাজের একক ভিশন নিজের পেইনটিঙে গড়ে নেবার প্রয়াস করছিলেন । বিমূর্ত এক্সপ্রেশানিজম সম্পর্কে অনিল বহু পরে জেনেছেন ।
           সবচেয়ে কুখ্যাত বিমূর্ত এক্সপ্রেশানিস্ট জ্যাকসন পোলক -- ‘ফোঁটাগড়ানো জ্যাক’ --- একজন ‘অ্যাকশান পেইনটার’, ক্যালিফর্নিয়ার ‘দি আমেরিকান মিউজিয়াম অভ বিট আর্ট’’-এ বহু শিল্পীর সঙ্গে স্হান পেয়েছেন । চরম ডাডাবাদী মার্সেল দুশঁও পেয়েছ, যিনি, বিটনিকরা জন্মাবার আগেই ‘অ্যান্টি-আর্ট’ শব্দবন্ধটির উদ্ভাবন করেছিলেন, এবং সেকারণে বিটদের আদর্শ । কিন্তু শোনা যায় যে পঞ্চাশের দশকে যখন অ্যালেন গিন্সবার্গ ও গ্রেগরি কোরসো প্যারিসে দুশঁর সঙ্গে দেখা করেন, দুজনে নেশায় এমন আচ্ছন্ন ছিলেন যে গিন্সবার্গ দুশঁর হাঁটুতে চুমুখান, আর কোরসো নিজের টাই কেটে ফ্যালেন । বয়স্ক দুশঁর তা পছন্দ হয়নি । বিটদের সেসময়ের আচরণ এমনই স্বার্থপরভাবে অসংযত ছিল যে তাঁরা অনেককে চটিয়ে দিতে সফল হয়েছিলেন, এমনকি জাঁ জেনেকেও, যাঁর আদবকায়দা মোটেই ভালো ছিল না ।
          বেনারসে বসবাসের সময়ে অনিল করঞ্জাই ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মাঝে ছবি আঁকার বিষয় নিয়ে কোনো অর্থবহ আলোচনা হয়েছিল বলে মনে হয় না । মার্কিন লোকটির আগ্রহ ছিল উচ্চতর ব্যাপারে প্রতি, অর্থাৎ সাধু, শ্মশানঘাট, মন্ত্র, গাঁজা ইত্যাদি । হিন্দি ভাষার বৌদ্ধ কবি নাগার্জুনের সঙ্গে অনিল ও করুণা অ্যালেন গিন্সবার্গকে হারমোনিয়ামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার পাশাপাশি গিন্সবার্গ ও অরলভস্কিকে ছিলিম টানার কায়দা শিখিয়ে ছিলেন, যা প্রায় ধর্মাচরণের ব্যাপার এবং মোটেই সহজ নয় । এ ছাড়া হাংরি আন্দোলনকারীদের ছবি আঁকায় গিন্সবার্গ বিশেষ আগ্রহ দেখাননি । অনিলের খারাপ লাগেনি কেননা তাঁর বয়স তখন কম ছিল, আনন্দ পেয়েছিলেন ইংরেজিতে কথা বলার সুযোগ পেয়ে, যা ভাষায় অনিল তখন অত সড়গড় ছিলেন না । অনিল আর করুণা দুজনেই খ্যাতিপ্রাপ্ত মার্কিন সাহেবকে বিশেষ পাত্তা দিতেন না, কিন্তু পরবর্তীকালে গিন্সবার্গের আমেরিকা কবিতার পঙক্তি চেঁচিয়ে অনিল বলতেন, “আমেরিকা তোমার ডিমগুলো কবে ভারতে পাঠাবে?” 
             সন্দেহ নেই যে গিন্সবার্গ রেসিস্ট ছিলেন না, অন্তত সচেতনতার স্তরে । কিন্তু তাঁর মধ্যে সাদা চামড়ার মানুষের ঔদ্ধত্য ছিল, যা অন্যান্য বিটদের মধ্যেও ছিল । প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন হওয়া সতবেও একটা স্তরে তা ছিল অত্যন্ত এলিটিস্ট । যেমন বারোজ, স্ত্রীকে খুন করার পরেও ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন, কেননা তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন এবং তাঁর পরিবার ছিল বৈভবশালী । গিন্সবার্গ ততোটা ধনী পরিবারের না হলেও বেশ কমবয়সেই সুপারস্টার হয়েগিয়েছিলেন । তিনি ভারতে এসে যতোই গরিব সেজে থাকুন, তা তাঁকে তাঁর মঞ্চ থেকে নামাতে পারেনি, তা ছাড়া ভারতে তিনি চামচাগিরির সুখও পেয়ে থাকবেন ।
সম্ভবত হাংরি আন্দোলনকারীরাই একমাত্র তাঁর সঙ্গে সমানে-সমানে আইডিয়া আদান-প্রদান করেছিলেন এবং তাঁর কবিতায়  ও ভাবনাচিন্তায় হাংরি আন্দোলনকারীদের প্রভাব স্বীকার না করাটা তাঁর সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি করে না ।
          গিন্সবার্গ, যিনি ভারতের ধর্মে পরোক্ষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন বলে মনে হয়, হাংরি আন্দোলনকারীদের ধর্ম সম্পর্কিত ভাবনাচিন্তাকে গ্রহণ করতে পারেননি । হাংরি আন্দোলনকারীরা ঈশ্বরকে বিসর্জন দিয়েছিলেন আর যে কোনো ধরণের উপাসনা-অর্চনা সম্পর্কিত বিশ্বাসকে সমসাময়িক ভাষায় নিন্দা করেছেন । অনিলের শৈশব বেনারসে কাটার দরুন তিনি ছোটোবেলা থেকেই ধর্মে বিশ্বাস করতেন না ; তিনি মন্দিরের বয়স্কদের বারো বছর বয়স থেকেই চ্যালেঞ্জ করতেন, আর তাদের তর্কে হারিয়ে দিতেন হিন্দুধর্মের জ্ঞানের সাহায্যে । বিজ্ঞাননির্ভর মানসিকতা নিয়ে অনিল সারাজীবন আস্তিক ছিলেন । প্রথম দিকের বৌদ্ধধর্ম তাঁকে আকৃষ্ট করলেও অনিল তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের সমালোচনা করতেন, আর শেষ জীবনে অ্যালেন গিন্সবার্গ এই ধর্মে ধর্মান্তরিত হন । অবশ্য বিশ্ববীক্ষার সঙ্গে বিট কবিদের যুদ্ধবিরোধী রাজনীতির মিল ছিল, যেমনটা ছিল হাংরি আন্দোলনের অন্যান্য সদস্যদের ।
          হাংরি আন্দোলনকারীদের রাজনীতির কথা যদি বলতে হয়, শেকড়পোঁতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সবাই যেমন তীব্র আক্রমণ চালাতো তাকে অনিল করঞ্জাই সমর্থন করতেন, কিন্তু তাদের অ্যানার্কিজমকে মেনে নিতে পারেননি অনিল । হাংরি আন্দোলনকারীদের বক্তব্য যে মানবাস্তিত্ব হল রাজনীতিরও আগের এবং রাজনৈতিক মতাদর্শগুলোকে বর্জন করা দরকার, তাও মানতে পারেননি অনিল । অনিল কিছু দিনের জন্য কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু হাংরি আন্দোলনে যোগ দেবার আগেই  বেরিয়ে আসেন । তা সত্বেও অতিবামের দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল । হাংরি আন্দোলন শেষ হয়ে যাবার পরে তিনি নকশাল দলে যোগ দিয়েছিলেন, এই কথাটা সত্য নয় ।
          এ কথা সত্য যে বেনারস ও কাঠমাণ্ডুতে হাংরি আন্দোলনকারীরা যৌথ যৌনতার অর্গিতে নিজেদের সমর্পণ করেছিলেন, কিন্তু তা বিটদের যৌনজীবনের হইচইয়ের সামনে অত্যন্ত হালকা । অনিল এবং করুণা হিপি আর বিদেশি সাধক-সাধিকাদের সঙ্গে বেনারসে আন্তর্জাতিক কমিউনে  বসবাস করেছিলেন, এমনকি করুণা ছিলেন সেই কমিউনের ম্যানেজার ও মুখ্যরাঁধুনি । চেতনার বিস্তারের জন্য তাঁরা এলএসডি, ম্যাজিক মাশরুম ইত্যাদি মাদক নিয়ে পাঁচিল ঘেরা জায়গায় নীরক্ষা করতেন । অনিলের চেতনায় এর প্রগাঢ় প্রভাব পড়েছিল কেননা অনিল দায়িত্বহীনভাবে মাদক সেবন করতেন না, পজিটিভ থাকার প্রয়াস করতেন, পেইনটার হিসাবে ভিশানের বিস্তার ছিল তাঁর কাম্য । ‘ড্রাগ অ্যাবিউজ’ বলতে যা বোঝায় তার খপ্পরে তিনি পড়েননি ।
            হাংরি আন্দোলনকারীরা তাঁদের পেইনটিঙ ইচ্ছে করে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন, এটাও বাড়িয়ে-চাড়িয়ে তৈরি করা গালগল্প, ১৯৬৭ সালে কাঠমাণ্ডুর বিখ্যাত একটি গ্যালারিতে প্রদর্শনীর শেষে এই সমস্ত ব্যাপার ঘটেছিল বলে প্রচার করা হয় । লেখকদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে মলয় রায়চৌধুরী ও অন্যান্য হাংরি আন্দোলনকারীদের  কবিতা পাঠের জন্য আমন্ত্রণ করা হয়েছিল । করুণা তার যাবতীয় পেইনটিঙ পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলেছিলেন । অনিল করঞ্জাই একপাশে দাঁড়িয়ে মজা উপভোগ করেছিলেন । অমন শিল্পবিরোধী কাজ তাঁর মানসিকতার সঙ্গে খাপ খায়নি । অনিলের আইকনোক্লাজম ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের ।
          হাংরি আন্দোলনকারীদের মতাদর্শের সঙ্গে তাঁর কিছুটা অমিল থাকলেও, হাংরির নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে দিয়েছিলেন অনিল । ষাটের দশকে বেনারসের কমিউনে টানা বাহান্ন ঘণ্টায় আঁকা তাঁর ‘দি কমপিটিশন’ পেইনটিঙে তা প্রতিফলিত হয়েছে, কাজটা একটা বটগাছকে নিয়ে, যাকে তিনি উপস্হাপন করেছিলেন কেঅস এবং সময়ের সঙ্গে লড়াইয়ের মেটাফর হিসাবে । এই পেইনটিঙে হাংরি আন্দোলনকারিদের উদ্দেশ্য যেমন ফুটে উঠেছে তেমনই বিটদের উদ্দেশ্য ; প্রকৃতিপৃথিবীর  সঙ্গে মানুষের একাত্মতা, যে পৃথিবীতে অশ্লীলতা বলে কিছু হয় না এবং মানুষের ইনোসেন্স পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় ।
          হাংরি আন্দোলনের পরের দশকগুলোয় অনিল করঞ্জাইয়ের অঙ্কনজগতে পরিবর্তন ও পূর্নতাপ্রাপ্তি ঘটলেও, হাংরি আন্দোলনের সময়কার অভিজ্ঞতা তাঁর চেতনায় থেকে গিয়েছিল । তাঁর আইডিয়াগুলো হয়তো বিভিন্ন সূত্র থেকে আহরিত, কিন্তু হাংরি আন্দোলনের লক্ষ্য তাঁর দৃষ্টির বাইরে ককনও যায়নি । তাঁর আঁকা পরবর্তীকালের ছবিগুলো অনেকাংশে ক্লাসিকাল, বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ । তাঁর ল্যাণ্ডস্কেপগুলো দেখলে প্রথমদিকের পরাবাস্তব চিত্রকল্পের  বিরোধাভাসমূলক মনে হবে, যা তাঁর দর্শকদের বিভ্রান্ত করে । কিন্তু একথা নিশ্চয় বলা যেতে পারে যে প্ররোচনাদায়ক অলঙ্কারপূর্ণ চিত্রকল্প থেকে তিনি দূরে সরে গেলেও, ছবির ভিত্তিতে পরিবর্তন ঘটেনি । প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অনিল করঞ্জাইয়ের ছবিতে পাওয়া যাবে মানবাস্তিত্বের নাট্য যা প্রকৃতি নিজের মুড ও আঙ্গিকের মাধ্যমে প্রকাশ করে চলেছে । আর হাংরি আন্দোলনকারীদের কবিতার সঙ্গে তা খাপ খায় ।  
          বিনয় মজুমদার তাঁর ‘একটি উজ্বল মাছ’ কবিতায় চিত্রকল্পর আত্মাকে ধরে রেখেছেন, যখন তিনি বলেন:   
পৃথিবীর পল্লবিত ব্যাপ্ত বনস্হলী
দীর্ঘ দীর্ঘ ক্লান্ত শ্বাসে আলোড়িত করে
তবু সব বৃক্ষ আর পুষ্পকুঞ্জ যে যার ভূমিতে দূরে দূরে
চিরকাল থেকে ভাবে মিলাইবে শ্বাসরোধী কথা ।
          অনিল করঞ্জাইয়ের জীবনেও মিলনের এই স্বপ্ন বার বার ফিরে এসেছে তাঁর আঁকা ছবিগুলোয় । ১৯৬৯ সালে আঁকা ‘দি ড্রিমার’ নামের পেইনটিঙে অনিল স্পষ্ট করে তুলেছেন সৃষ্টিকর্মীর একাকীত্ব : সেই ‘ড্রিমার’  হাংরি আন্দোলনের সংঘর্ষময় এলএসডি মাদকে মুখিয়ে রয়েছে ; অনিলের আরেকটি ওয়াটার কালারে মলয় রায়চৌধুরীর ঘোষণা এসেছে ছবির থিম হয়ে । মলয় বলেছিলেন, “আমি মনে করি প্রথম কবি ছিলেন সেই জিনজাসথ্রপাস প্রাণী  যিনি লক্ষ লক্ষ বছর আগে মাটি থেকে একটা পাথর তুলে নিয়ে তাকে অস্ত্র করে তুলেছিলেন।” পরের দিকে অনিলের একা কবি ও দার্শনিকরা, পাথরে খোদাই করা, প্রকৃতির শৌর্যমণ্ডিত, তাদের অস্ত্র কেবল তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা । এই ছবিগুলো মহান আর্টিস্টের মতন করে আঁকা । হাংরি আন্দোলন-এ অনিলের মতন এমন একজন ছবি আঁকিয়ে ছিলেন যিনি মৌলিক ।

জাঁ-লুক গোদার-এর প্রেমিকা ও প্রথম স্ত্রী আনা কারিনার সাক্ষাৎকার

Image result for godard

জাঁ-লুক গোদার-এর প্রেমিকা ও প্রথম স্ত্রী আনা কারিনার সাক্ষাৎকার

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
কাভে জাহেদি একজন মার্কিন চিত্র পরিচালক । তাঁর বাবা-মা ইরান থেকে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন, সেখানে কাভে জাহেদির জন্ম হয় ; জাহেদির জন্মের বছরই জাঁ-লুক গোদারের ‘ব্রেথলেস’ ফিল্মটি মুক্তি পেয়েছিল । তিনি ছিলেন গোদারের ভক্ত । আনা কারিনা ( ১৯৪০ - ২০১৯ ) যখন বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন তখন এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন কাভে জাহেদি ।
জাহেদি : আপনি কি এখনও অভিনয় করছেন ?
কারিনা : জানো, আমি এখন বুড়ি হয়ে গেছি তো, তাই আর অভিনয়ের প্রস্তাব বেশি পাই না, কিন্তু তা থেকেও আমি যে চরিত্র পছন্দ করি তাতেই কেবল অভিনয় করি । আমি চিরকাল এই রকমই ছিলুম । আমি টাকার পেছনে বা ওই ধরনের ব্যাপারের পেছনে ছুটিনি । যদি ভালো হয়, তাহলে অভিনয় করি, এমনকি ছোটো ভূমিকাতেও । কিন্তু আমার পছন্দ না হলে, আমি বলে দিই, “হ্যালো, গুডবাই”, ব্যাস ।
জাহেদি : আপনি কি আরও কিছু করতে চান, যতোদিন বেঁচে আছেন, মারা যাবার আগে ?
কারিনা : মারা যাবার আগে ? দেখবো…( হাসতে থাকেন ) । তুমি বেশ মজার লোক ! না, আমি জানি না । অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা করে আমি খুশি আর, তোমাকে বলি, লোকে হাসে। আমি লোকেদের হাসাই । বেশ ভালো ব্যাপার । বেশ ভালো সময় কাটে । আর যেখানে আমি থাকি, প্রতিবেশীদের সবাইকে আমি চিনি । আমি তিন পা হেঁটেছি কি, কেউ বলে ওঠে, “আনা, কেমন আছেন ?” বুঝলে, অনেকটা গ্রামের মতন ।
জাহেদি : তার মানে আপনি জীবন উপভোগ করছেন ?
কারিনা : বুঝলে, আমি চিরকালই উপভোগ করেছি । অনেকসময়ে উথ্থান-পতন তো থাকেই। কিন্তু আমি দিব্বি টিকে গেছি ।
জাহেদি : তাহলে এখন কোন ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনি আগ্রহী ?
কারিনা : আমি তিনটে বই লিখেছি -- দুটো বাচ্চাদের জন্য । আমি “আগলি ডাকলিঙ” আবার নতুন করে লিখেছি । তুমি জানো তো, হ্যান্স খ্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন । আমি নতুন করে লিখেছি, আধুনিক ভার্শান । তারপর আমি লিখেছি ‘দি লিটল মারমেইড’ যেটা পরের বছর প্যারিসে সঙ্গীতনাট্য হবে ।
জাহেদি : আপনার ভারশানের ?
কারিনা : হ্যাঁ, আমার ভারশানের ।
জাহেদি : দারুণ । তার মানে আজকাল আপনি লেখালিখি করছেন ?
কারিনা : আমি লিখছি, আমি গান গাইছি, আমি যা করছি, জানো তো…
জাহেদি : আপনি যে ফিল্মগুলো পরিচালনা করেছিলেন, আমি সেগুলো খুঁজছিলুম । আমি সেগুলো কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ।
কারিনা : কে জানে, জানি না । জীবন এই রকমই । হয়তো তুমি জানতে পারার আগে মারা যেতে পারো ।
জাহেদি : ( হেসে ) : হ্যাঁ, হয়তো, আপনার তেমনই ঘটার সম্ভাবনা ।
কারিনা : প্রথমটার নাম ছিল “একসঙ্গে থাকা”। Vivre Ensemble. আমি নিজে প্রযোজনা করেছিলুম ।
জাহেদি : আশা করি একদিন সেটা খুঁজে পাবো ।
কারিনা : আমিও তাই ভাবি ।
জাহেদি : গোদার আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিলেন । আর আপনারা দুজনে যে ফিল্মগুলো করেছিলেন সেগুলো ওনার সবচেয়ে ভালো ফিল্ম । আর অনেক গৌ্ররবজনক । আমি চিরকাল ভেবেছি আপনার আর গোদারের সম্পর্ক নিয়ে একটা ফিল্ম করব । আমি জানি, একজন পরিচালক এখন গোদার আর অ্যানে উইয়াজেমস্কির সম্পর্ক নিয়ে একটা ফিল্ম করছেন, ঠিক কি না ?
কারিনা : ওহ, আমি সে ব্যাপারে জানি না তো ।
জাহেদি : হ্যাঁ, যে ভদ্রলোক ‘দি আর্টিস্ট’ তৈরি করেছিলেন ।
কারিনা : আচ্ছা ?
জাহেদি : হ্যাঁ, উনি একটা ফিল্ম করছেন, আর আমার মনে হয় লুই গারেল তাতে গোদারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন ।
কারিনা : লুই গারেল গোদারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন ? উনি তো আমার বন্ধু ! আমি জানতুম না !
জাহেদি : দু দিন আগে অ্যানাউন্স করা হয়েছে ।
কারিনা : দুদিন আগে ? আমি তো এখানে দশ দিনের বেশি রয়েছি । দারুণ খবর ।
জাহেদি : অ্যানে উইয়াজেমস্কি একটা বই লিখেছিলেন ।
কারিনা : হ্যাঁ, আমি সেটা পড়েছি ।
জাহেদি : ফিল্মটা সেই বই থেকেই তৈরি হবে । কিন্তু, আমি বলতে চাই, গোদারের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ফিল্মের ইতিহাসে তো আরও গুরুত্বপূর্ণ ।
কারিনা : সেটা...আমি অবাক । আমি সত্যই বিস্মিত । ওরা ওই বইটা থেকে ফিল্ম তৈরি করছে?
জাহেদি : হ্যাঁ ।
কারিনা : হ্যাঁ, বইটার নাম…
জাহেদি : উন অন আপরেস ( এক বছর পরে )।
কারিনা : হ্যাঁ ।
জাহেদি : গোদারের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়ে কেউ ফিল্ম তৈরি করতে চাইলে আপনি কি রাজি হবেন ?
কারিনা : ওহ, না । আমি তা চাইব না ।
জাহেদি : কেন ?
কারিনা : কেননা, তুমি জানো, ব্যাপারটা ব্যক্তিগত ।
জাহেদি : আপনাদের সম্পর্ক নিয়ে স্মৃতিকথা বা তেমন কিছু লিখতে চান না ?
কারিনা : মানে, সেটা আলাদা ব্যাপার । তুমি তো ফিল্মের কথা বলছ, নয়কি ?
জাহেদি : হ্যাঁ । আপনি যদি স্মৃতিকথা লেখেন তাহলে শেষ পর্যন্ত কেউ না কেউ একটা ফিল্ম করবেই ।
কারিনা : মানে, আমি মারা গেলে হয়তো ঠিকই হবে । আমি ভাবছি ব্যাপারটা বেশ মজার, কেননা বইটা, আমি জানি না, ওটা বিচ্ছিরি, নয়কি ?
জাহেদি : ওহহো । আপনি ওই মহিলাকে চিনতেন ?
কারিনা : হ্যাঁ, ও তো এখন লেখিকা । ও আর অভিনেত্রী নয় । অ্যানে উইয়াজেমস্কির সঙ্গে জাঁ-লুক গোদারের বিয়ে হয়েছিল, আমার পরে ।
জাহেদি : আপনাদের দুজনকে ছাড়া আর কারোর সাথে ওনার বিয়ে হয়েছিল কি ?
কারিনা : না । ও আমাকে বিয়ে করেছিল তারপর সোজা গিয়ে বিয়ে করল অ্যানেকে।
জাহেদি : আপনাদের বিচ্ছেদের পর ?
কারিনা : সবায়ের নামই অ্যানে । বেশ মজার ব্যাপার ।
জাহেদি : আর অ্যানে-মারি মেলভিল, ঠিক বলছি তো ?
কারিনা : হ্যাঁ, সেই মেয়েটার নামও অ্যানে । আর প্রথমজন যাকে ও জানতো তার নাম ছিল অ্যানে কোলেত ।
জাহেদি : তাই নাকি ? আপনাকে দেখার আগে যে মেয়েটির সঙ্গে ওনার সম্পর্ক ছিল তার নামও অ্যানে ?
কারিনা : হ্যাঁ ।
জাহেদি : ওহ, মজার ব্যাপার । আপনাদের এখনও নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা হয় ?
কারিনা : ও কারোর সঙ্গেই কথা বলে না ।
জাহেদি : হয়তো উনি বিরক্ত কিংবা হয়তো উনি…
কারিনা : না, ও চায় না, আমার ধারণা । কে জানে, ঠিক জানি না । আমি কীই বা জানি ? আমি তো আর ওর মাথার ভেতরে থাকি না ।
জাহেদি : শেষ কবে ওনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ?
কারিনা : অনেক, অনেক কাল আগে । কিন্তু এক সময়ে ও একজনকে বলেছিল, “আনা কারিনার সঙ্গে যোগাযোগ করো, কারণ আমার সম্পর্কে ওই সবচেয়ে ভালো জানে ।”
জাহেদি : সে কথা সত্যি, তাই না ?
কারিনা : মানে, ওর সম্পর্কে কোনো খারাপ কিছু বলার নেই আমার ।
জাহেদি : ওনার মধ্যে কী এমন দেখে আপনি প্রেমে পড়েছিলেন ?
কারিনা : জানো তো, আমি তখন আঠারো বছর বয়সী, বা তার কাছাকাছি ।
জাহেদি : ১৯৫৯ ?
কারিনা : হ্যাঁ, ঠিক বলেছ ।
জাহেদি : “ব্রেথলেস”-এর সময়ে ?”
কারিনা : হ্যাঁ । ও আমাকে একটা ছোটো ভূমিকায় অভিনয় করতে বলেছিল কিন্তু আমি তা করিনি কেননা আমার পোশাক খুলে ফেলতে হতো ।
জাহেদি : উনি আপনার চেয়ে দশ বছরের বড়ো ছিলেন ?
কারিনা : দশ বছর পুরো ।
জাহেদি : উনি ছিলেন ২৮ বছরের আর আপনি ১৮, ঠিক তো ?
কারিনা : হ্যাঁ, সেই সময়ে বয়সের ক্ষেত্রে সেটাকে অনেক বেশি তফাত মনে করা হতো।
জাহেদি : এখনও অনেক তফাত মনে করা হয় ।
কারিনা : ততোটা নয় আজকাল । সবকিছু পালটে গেছে । কিন্তু সেই সময়ে, তুমি যদি একজন নারী হতে, তোমার কোনও কন্ঠস্বর থাকতো না । তুমি যদি নারী হতে, তাহলে ব্যাপারটা স্রেফ : “সুন্দরী হও আর মুখ বুজে থাকো।”
জাহেদি : কিন্তু আপনারা প্রেমে পড়লেন Le Petit Soldat ( ছোটো সৈনিক ) করার সময়ে, তাই তো ? গোদারের কোন ব্যাপার আপনাকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছিল ?
কারিনা : ও অত্যন্ত চিত্তহারী ছিল, আর আমি ওর প্রতি আকর্ষিত হই । আমি কখনও টের পাইনি । ব্যাপারটা এমন যে তুমি সামলাতে পারছ না । আমি অনেকটা, কী বলব, তুমি কী বলো ব্যাপারটাকে ?
জাহেদি : চৌম্বকত্ব ?
কারিনা : মানে, আর কোনো কিছু না ভেবেই । ও আমাকে একট ছোটো প্রেমপত্রে লিখেছিল, “আমি তোমাকে ভালোবাসি, মাঝরাতে কাফে দ্য লা পাইতে দেখা করো”-- এমন ছিল যে আমি তাছাড়া আর কিছু করতে পারতুম না । আমি তার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব না ।
জাহেদি : আর আপনার সেসময়ে একজন বয়ফ্রেণ্ড ছিল, তাই না ?
কারিনা : হ্যাঁ, ওর খুব খারাপ লেগেছিল ।
জাহেদি : তার মানে গোদার আপনাকে ওই চিঠি লেখার আগেই আপনি ওনার প্রেমে পড়েছিলেন?
করিনা : হ্যাঁ, কারণ আমরা তিন মাস ধরে শুটিঙ করছিলুম । সেটা ছিল দীর্ঘ ফিল্ম কেননা আমরা সাধারণত তিন সপ্তাহে শুটিঙ শেষ করে ফেলতুম ।
জাহেদি : ঠিক, ওনার জন্য সময়টা দীর্ঘ্য ।
কারিনা : ঠিক, বেশ দীর্ঘ্য । আর আমরা শুটিঙ থামিয়ে দিলুম, আর দুজনে দুজনের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকতুম । ব্যাপারটা ছিল একটু একটু করে পরস্পরের দিকে টান । ব্যাখ্যা করা কঠিন । অনেক সময়ে ব্যাপারটা এরকমই ( দুই হাতে তালি বাজান কারিনা ) বুঝলে ? কিন্তু তা ছিল অত্যন্ত ধীর, একটু একটু করে, প্রেমে পড়া একটু একটু করে, ওর প্রতি আকর্ষিত হওয়া, কাছাকাছি হওয়া । জানি না কেমন করে সেটা বোঝাবো । বোধহয় আমার কাছে উপযুক্ত শব্দ নেই । কিন্তু, হ্যাঁ, আমি সেখানে গেলুম, কাজের পর, মাঝরাতে কাফে দ্য লা পাইতে । ও সেখানে বসে একটা কাগজ পড়ছিল, আর আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলুম। আর আমার মনে হচ্ছিল তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা । যদিও তা হয়তো তিন মিনিট বা দুই মিনিট ছিল। আর ও হঠাৎ বলে উঠল, “ওহ এসে গেছো তুমি । চলো যাওয়া যাক।”
জাহেদি : তারপর কোথায় গেলেন আপনারা ?
কারিনা : আমরা ওর হোটেলে গেলুম । পরের দিন সকালে, আমার ঘুম ভাঙেনি, আর ও আমার আগেই বেরিয়ে গেল আর ফিরল একটা সুন্দর ধবধবে ড্রেস নিয়ে । আমি সেটা Le Petit Soldat-এ পরেছিলুম । শুধু আমার জন্য । বিয়ের পোশাকের মতন, বুঝলে ?
জাহেদি : তার মানে আপনারা দুজনে এক সঙ্গে রাত কাটালেন আর সকাল বেলায় যখন আপনার ঘুম ভাঙল আপনার জন্য একটা ড্রেস কিনে এনে উনি হাজির হলেন ?
কারিনা : হ্যাঁ । তুমি যদি ফিল্মটা আবার দ্যাখো, শাদা ফুলের নকশাকাটা ড্রেসটা তোমার মনে পড়বে ।
জাহেদি : আর উনি সকালবেলায় কিনে আনলেন, আপনারা দুজনে একসঙ্গে রাত কাটাবার পর?
কারিনা : মানে, যখন আমার ঘুম ভাঙলো, তখন ও ছিল না ।
জাহেদি : হতে পারে উনি আগেই কিনে রেখেছিলেন ?
কারিনা : না, আমার মনে হয় ও কিনতে গিয়েছিল । রাতের আগে সেটা ঘরে ছিল না ।
জাহেদি : ওই ফিল্মটা অপরূপ, কেননা আপনাকে ওনার ভালোবাসা প্রতিটি শটে দেখতে পাওয়া যায়, যেমনভাবে উনি আপনাকে ফিল্মে উপস্হাপন করেছেন । ওটা যেন কেউ একজন প্রেমে পড়ছে আর দর্শক তা ঘটতে দেখছেন । ওটা একটা গুরুত্বপূর্ণ নথি ।
কারিনা : আমরা প্রেমে পড়ছিলুম । কিন্তু জানো, আমি রাশেসগুলো কখনও দেখিনি । সেই সময়ে আমি জানতুম না তুমি যে বিষয়ে কথা বলছ । কিন্তু ফিল্মে হয়তো, এখন মনে হয়, হ্যাঁ, তাই।
জাহেদি : আমি বলতে চাইছি, দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায় ।
কারিনা : নিশ্চয়ই, আমার স্মৃতিতে রয়ে গেছে ।
জাহেদি : ঠিক আছে, La Petit Soldat-এর পর আপনার যুগল হয়ে উঠলেন, তাই তো ? আপনার বয়ফ্রেণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গেল ?
কারিনা : হ্যাঁ, আর তারপর আমার কোনও বন্ধু হয়নি ।
জাহেদি : কোনও বন্ধু নয় ?
কারিনা : না, কোনও বন্ধু নয় । কেননা আমি জাঁ-লুক গোদারের কাছে গিয়েছিলুম, তাই আমার কোনও বন্ধু জোটেনি ।
জাহেদি : তার মানে আপনি একরকমভাবে একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন ?
কারিনা : হ্যাঁ । আমরা যখন ওর গাড়ি করে প্যারিসে ফিরলুম, ও বলল, “তোমাকে কোথায় ছেড়ে দেবো ?” আর আমি বললুম, “তুমি আমাকে ছেড়ে দিতে পারো না, কেননা আমার আর কেউ নেই । আমার শুধু তুমি আছ ।”
জাহেদি : তার কারণ আপনাকে আগের জীবন সম্পূর্ণ ছেড়ে আসতে হয়েছিল ?
কারিনা : হ্যাঁ, ঠিক তাই । আর তারপর ও বলল ঠিক আছে ।
জাহেদি : তখন আপনি ওনার সঙ্গে থাকা আরম্ভ করলেন ?
কারিনা : হ্যাঁ, হ্যাঁ, শঁজে লিজের কাছে রু শাতুব্রিয়াঁয় ইতালিয়া নামে একটা হোটেলে ।
জাহেদি : আর তারপর ?
কারিনা : আমরা সেখানে থাকা আরম্ভ করলুম, আর মাঝে মাঝে এসে ও বলত, “তুমি কি কাটিঙ রুমে যেতে চাও ?” বুঝলে, উনি ফিল্মটার কাটিঙ করছিলেন । আমি বলতুম যে হ্যাঁ । তারপর একদিন ও এসে বললে, “আমাদের জন্য তোমাকে একটা ফ্ল্যাট খুঁজতে হবে।” তাই আমাদের জন্য লা ম্যাদেলিয়েঁর পেছনে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলুম । আমরা কিছুদিন সেখানে ছিলুম আর তারপর Le Petit Soldat ফ্রান্সে ব্যান হয়ে গেল, তুমি তো জানো, আর মনে হল যেন আমি এতোদিন কিছুই করিনি । কিন্তু তারপর আমি মিশেল দেভিলের কা্ছ থেকে আরেকটা ফিল্মের প্রস্তাব পেলুম । ( ১৯৬৩ সালে ব্যান তুলে নেয়া হয়েছিল ) ।
জাহেদি : ওহ, হ্যাঁ, মিশেল দেভিলে, হ্যাঁ, বেশ বড়ো চিত্রনির্মাতা । কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন করার ছিল, আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই । ( হাতঘড়ি দ্যাখে )। আমাদের আর সময় নেই।
কারিনা : তুমি যতক্ষণ ইচ্ছে সময় নিতে পারো ।
জাহেদি : আমার তিনবার বিয়ে হয়েছে, আর আমি যখন ভাবি কোন কারণে বিয়ে ভেঙে গেল, আমি বলতে পারি আমাদের বিয়ে ভেঙে গেছে এই কারণে বা ওই কারণে । আপনিও তো কয়েকবার বিয়ে করেছেন, তাই না ?
কারিনা : হ্যাঁ । ( গোদারকে ডিভোর্সের পর তিনবার বিয়ে করেছিলেন )
জাহেদি : আপনি যখন গোদারের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাবার কথা ভাবেন, তার প্রধান কারণ কী বলবেন ?
কারিনা : ওহ, আমি যে-কোনো একজনকে চাইছিলুম, বুঝলে, নিছক একজন বন্ধু । আমি ভেবেছিলুম আমার জীবন চিরকালের জন্য বরবাদ হয়ে গেছে, আমার প্রেমের জীবন । তাই আমি একজন বন্ধুর মতন মানুষকে বিয়ে করলুম ।
জাহেদি : আপনি কি এখন গোদারের বিষয়ে বলছেন না অন্য কোনো লোকের সম্বন্ধে ?
কারিনা : না, জাঁ-লুকের পরে । যখন জাঁ-লুককে বিয়ে করি তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলুম, জানো তো?
জাহেদি : তার মানে A Woman is a Woman ফিল্ম করার সময়ে আপনার কুড়ি বছর বয়স ছিল ?
কারিনা : হ্যাঁ ।
জাহেদি : ওই ফিল্মটা খুব সুন্দর । কিন্তু আমার প্রশ্ন হল : আপনারা দুজনে আলাদা হলেন কেন ? সম্পর্কটা বেশ ঝামেলার আর কঠিন ছিল । প্রধান কারণ নিয়ে আপনি কী বলবেন ?
কারিনা : বড়ো, বড়ই দুর্বহ ।
জাহেদি : উনিই দুর্বহ ছিলেন নাকি…
কারিনা : ওর ওজন অনেক ছিল ( হাসেন ) । বড্ডো দুর্বহ ছিল, সমস্ত পরিস্হিতিতে । ও ছিল বড়োই...বড়োই একপেশে চিন্তার মানুষ ।
জাহেদি : ব্যাপার তো কোনো একরকমভাবে হতে হবে ? উনি কি সমস্ত ব্যাপারে অনড় থাকতেন? পজেসিভ ?
কারিনা : না, ও অনেকসময়ে চলে যেত আর ফিরত না ।
জাহেদি : আর তা আপনাকে ক্ষুব্ধ করত ? মানে, আমি বলতে চাইছি, তা আমাকেই ক্ষুব্ধ করে তুলবে ।
কারিনা : হ্যাঁ, বলতে চাই, কোনো টেলিফোন ছিল না । এখনকার মতো ছিল না ।
জাহেদি : ( হাসে ) ঠিক, যেমন, “তুমি এখন কোথায় ?”
কারিনা : ব্যাপারটা সত্যিই সমস্যাজনক ছিল, আর আমি তখন একেবারে একা, বুঝেছ, আর তা সত্যিই মাথা খারাপ করে দেবার মতন ছিল । ও উধাও হয়ে যেত আর বলত, “আমি সিগারেট কিনতে যাচ্ছি”, আর ফিরত তিন সপ্তাহ পর ।
জাহেদি : আর কোথায় যেতেন উনি ?
কারিনা : ও বেশ জটিল । ওহ, ও আমেরিকায় চলে গেল ফকনারের সঙ্গে দেখা করতে ।
জাহেদি : উইলিয়াম ফকনার ?
কারিনা : হ্যাঁ, কিংবা ও চলে যেত সুইডেনে ইঙ্গমার বার্গম্যানের সঙ্গে দেখা করতে । ও চলে যেত ইতালিতে রোবের্তো রোসেলিনির সঙ্গে দেখা করতে । বুঝলে, চলে যেত এখানে সেখানে ।
জাহেদি : তো উনি ফকনারের সঙ্গে দেখা করলেন ?
কারিনা : আর কেমন করে আমি তা জানতে পারতুম জানো ? ও উপহার নিয়ে ফিরত ( হাসলেন ) আর আমি দেখতুম মোড়কটা ইতালীয় নাকি সুইডিশ বা যাহোক ।
জাহেদি : তাহলে আপনারা  একসঙ্গে কতোকাল দুজনে সুখি ছিলেন বলে মনে হয় ?
কারিনা : আমরা যখন শুটিঙ করতুম তখন আমরা বেশ সুখি থাকতুম, সব সময়ে ।
জাহেদি : আর তারপর যখন শুটিঙ বন্ধ হল, তখন আপনার আবার খারাপ লাগতো ?

কারিনা : হ্যাঁ, জানো, তারপর ও চলে যেত । ও হয়তো বলত, “আমি তোমাকে দক্ষিণ ফ্রান্সে নিয়ে যেতে চাই।” আমি বলতুম, “দারুণ হবে”। আর আমরা গাড়ি চালিয়ে দক্ষিণ ফ্রান্সে গিয়ে কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচতুম । আর আমরা দুশো কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে যেতুম, আর ও বলতেন, “ওহ আমি  দক্ষিণ ফ্রান্সে যেতে চাই না ।”
জাহেদি : উনি মত বদলে ফেলতেন ?
কারিনা : আমি বলতুম, “কী বলতে চাইছ তুমি ? মানে, তুমি বললে আমরা সেখানে আনন্দ করতে যাবো।” আর আমি ওকে ভালোবাসতুম। আর ও বলত, “আমাকে ফিরে যেতে হবে ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর সঙ্গে কথা বলার জন্য।”
জাহেদি : আপনার সঙ্গে ত্রুফোর বন্ধুত্ব ছিল ?
কারিনা : হ্যাঁ, গভীর ।
জাহেদি : আপনি ওনাকে পছন্দ করতেন ?
কারিনা : হ্যাঁ, অনেক ।
জাহেদি : ওনাকে মনে হয় ভালো লোকদের মধ্যে একজন ।
কারিনা : হ্যাঁ । তারপর বলল, “আর জাক রিভেত । আমাকে ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে কারন ওদের কয়েকটা কথা বলব, আমাকে কাজ করতে হবে ।” তাই আমি বললুম, “ঠিক আছে, তাহলে ফেরা যাক ।” তাই আমরা প্যারিসে ফেরার জন্য রওনা দিলুম । তারপর ও বলল, “তোমাকে বেশ মন খারাপ দেখাচ্ছে…।” আমি বললুম, “না তো, আমি একটু হতাশ হয়েছি, তুমি তো জানো, তুমিই বললে, আমরা দক্ষিণ ফ্রান্সে যাবো । আমি তো তোমার কাছ থেকে কিছুই চাইনি -- তুমিই আমাকে বললে দক্ষিণ ফ্রান্সে যেতে।” ও তখন বলল, “আসলে, তুমি যদি তেমন অনুভব করো, তাহলে আমরা এক্ষুনি দক্ষিণ ফ্রান্সে যাবো।” তাই আমরা আবার পেছন ফিরলুম, আর ব্যাপারটা চলতেই থাকল, চব্বিশ ঘণ্টা ধরে, কেননা তখনকার দিনে ফ্রিওয়ে ছিল না, জানো তো, কোনো হাই ওয়ে ছিল না, কোনো ফ্রিওয়ে ছিল না । আর তারপর হঠাৎই, ও বলল, “আমরা প্যারিসে ফিরে যাচ্ছি ।” আর তারপর ও আমাকে বলল, “তোমাকে এখন বেশ ক্রুদ্ধ দেখাচ্ছে।” আমি বললুম, “হ্যাঁ।” আর তাই বললুম, “গাড়িটা থামাও,” আর আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লুম।  রাস্তায় চব্বিশ ঘণ্টা কাটিয়ে আমি ভীষণ চটে গিয়েছিলুম, বুঝলে তো ? আমরা পেছিয়ে আসছিলুম আর ফিরে এগিয়ে যাচ্ছিলুম দক্ষিণ ফ্রান্সের দিকে। আমি চললুম, “আমি দক্ষিণ ফ্রান্সে যাবার প্রস্তাবে হেগে দিই।” আর গাড়িতে আঘাত করতে আরম্ভ করলুম।
জাহেদি : আপনার ব্যাগ দিয়ে ?
কারিনা : না, পা দিয়ে ।
জাহেদি: ওহ, লাথি মেরে ?
কারিনা : হ্যাঁ, লাথি মেরে, গাড়িটাকে । ও বলল, “তুমি হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হয়ে পড়েছ।” আর জবাবে আমি বললুম, “হ্যাঁ, তুমি আমাকে মোটর চালিয়ে-চালিয়ে মাথা খারাপ করে দিয়েছ।” আর আমরা সত্যিই লা কোতের দাজুরে গেলুম না । আমরা পরের সকালে ওর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে গেলুম ।
জাহেদি : শুনে মনে হচ্ছে বিয়ে করার পক্ষে উনি একজন জটিল মানুষ ।
কারিনা : হ্যাঁ । ও তাইই...বলা যেতে পারে অন্য কারোর সঙ্গে থাকার মতো মানুষ ও নয়।
জাহেদি : ঠিক ।
কারিনা : ঠিক ।
জাহেদি : তাহলে Le Petit Soldat করার সময়ে সব কিছু ভালো কেটেছিল । আপনারা প্রেম করছিলেন । Une Femme Est Une Femme শুটিঙ করার সময়ে আপনারা দুজনে মানিয়ে চলছিলেন, তারপর একটা ঘটনা ঘটল, রাগারাগি হল । আপনি পোয়াতি হলেন, আর আপনার গর্ভপাত হয়েছিল, ঠিক তো ?
কারিনা : হ্যাঁ। ফিল্মটা করার সময়ে আমি পোয়াতি হয়ে গিয়েছিলুম ।
জাহেদি : Une Femme Est Une Femme করার সময়ে ?
কারিনা : হ্যাঁ ।
জাহেদি : তার কারণ ফিল্মটা ছিল সন্তান পাবার আশা নিয়ে ।
কারিনা : আমার মনে হয় আমার আরজেনটিনা যাওয়া একেবারে উচিত ছিল না...কেননা তার আগে আমি মিশেল দেভিলের ফিল্ম Tonight or Never করেছিলুম । তারপর আমরা গেলুম মার দ্য প্লাতা ফিল্ম ফেসটিভালে । আমার অতো দীর্ঘ্য যাত্রা করা একেবারে ঠিক হয়নি ।
জাহেদি : আর আপনি এই সারাটা সময় পোয়াতি ছিলেন ?
কারিনা : হ্যাঁ । আমি ছিপছিপে ছিলুম বলে বোঝা যেতো না । আর আমার মনে হয় আমার যাওয়া উচিত ছিল না, কেননা যখন ফিরলুম তখন আমি অসুখে পড়লুম ।
জাহেদি : আপনি সন্তান হারালেন ?
কারিনা : হ্যাঁ, বেশ কয়েক মাস পরে । আমি শয্যাশায়ী ছিলুম । তখন ওরা কিছুই টের পায়নি।
জাহেদি : কতো মাসের পোয়াতি ?
কারিনা : প্রায় সাড়ে ছয় মাসের । আমি সত্যিই ভয়ানক অসুস্হ ছিলুম । আমি তখন অসুখে, আর তারপর আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল কারণ আমাকে শল্য চিকিৎসা করাতে হল আর আমি আত্মহত্যা করতে চাইলুম আর সেইসব ব্যাপার । তারপর আমরা করলুম Bande a part.
জাহেদি : ঠিক তার পরেই ?
কারিনা : ঠিক তার পরেই নয় । তার মাঝে আরও ফিল্ম করেছিলুম ।
জাহেদি : গোদারের পরবর্তী ফিল্ম ?
কারিনা : হ্যাঁ, আমি সব সময়েই অসুস্হ থাকতুম ।
জাহেদি : পোয়াতি হওয়া কি পরিকল্পনা করে করা হয়েছিল? আপনি সন্তান চাইছিলেন ?
কারিনা : হ্যাঁ ! নিঃসন্দেহে !
জাহেদি : আপনি সন্তান পাবার চেষ্টা করছিলেন ?
কারিনা : না, আমরা সন্তান পাবার চেষ্টা করিনি, এমনিই এসে গিয়েছিল ।
জাহেদি : আর তারপর, তা ছিল একরকম শেষের শুরু ?
কারিনা : মানে, যেহেতু ও তখনও ছিল, বুঝলে, আর তারপর পরের দিকে ও হাসপাতালে আসত আর আবার চলে যেত । ব্যাপারটা বেশ জটিল ছিল । হ্যাঁ, বুঝলে, তখন আমাদের কথা বলার মতন বিশেষ কিছু ছিল না, মানে মহিলাদের ।
জাহেদি : আপনি তা ফিল্মেও দেখতে পাবেন ।
কারিনা : আমাদের কোনো অধিকার ছিল না । তাই, বুঝলে, বেঁচে থাকার জন্য টাকাকড়ির প্রয়োজন হলে, বেশ কঠিন, বুঝলে, তোমার কাজ ছিল স্রেফ বসে থাকা আর শোনা আর সুন্দরী সেজে থাকা কেননা, সেটা বাদ দিলে, আর কোনো কিছু করার ছিল না ।
জাহেদি : হ্যাঁ, ব্যাপারটা একরকম মারাত্মক ।
কারিনা : “Sois belle et tais-toi.” এইটাই হল সারকথা । “সুন্দরী সেজে থাকো আর মুখ বন্ধ রাখো।”
জাহেদি : ওটা তো ফিল্মের টাইটেল, তাই না ?
কারিনা : হ্যাঁ ! ওই নামে একটা ফিল্ম আছে !
[ ফিল্মমেকার পত্রিকায় প্রকাশিত । ২০১৬ সালের ৯ মে নেয়া সাক্ষাৎকার ]
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মলয় রায়চৌধুরী