Monday, May 24, 2021

জাঁ-লুক গোদার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আর্মেনীয় পরিচালক আরতাভাজ পিলিশান-এর ---- অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

 

জাঁ-লুক গোদার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আর্মেনীয় পরিচালক আরতাভাজ পিলিশান-এর 

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

আরতাভাজ পিলিশান ( ১৯৩৮ ) একজন আর্মেনীয় চিত্রনির্মাতা, যাঁর কাজ সম্পর্কে ইউরোপে জাঁ লুক গোদারই প্রথম আগ্রহ দেখান । পিলিশান একাধারে তথ্যচিত্র ও কাহিনিচিত্র নির্মাতা , চিত্রনাট্য রচয়িতা, চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাস রচয়িতা এবং ফিল্ম তাত্ত্বিক । সিনেমাটিক দৃষ্টিকোণের  ‘ডিসট্যান্স মন্তাজ’ শৈলী প্রয়োগের জন্য তিনি খ্যাত, যেমন কৃষ্ণসার হরিণদলের সঙ্গে বিশাল পলায়নকারী মানুষদের তুলনামূলক দৃশ্য । চিত্রনির্মাতা সের্গেই পারাজানোভ বলেছেন যে, পিলিশান একজন বিরল প্রতিভাধর চিত্রনির্মাতা । পিলিশানের ফিল্মগুলো তথ্যচিত্র এবং ফিচার ফিল্মের মিশ্রণ, অনেকটা আভাঁ গার্দ চিত্রনির্মাতা ব্রুস কনারের মতন, প্রথানুগত তথ্যচিত্রের মতন নয়। কিন্তু তা মায়া ডেরেনের মতো আভাঁ গার্দ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, অর্থাৎ ওনার ফিল্মকে ‘অ্যাবসার্ড সিনেমা’ বলা যায় না । পিলিশানের ফিল্মগুলোকে বলা হয়েছে ‘কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গীকে ফিল্মে নামিয়ে আনার প্রয়াস’ । ফিল্মনির্মাণে উনি পুরোনো ফিল্মের সংগ্রহশালা থেকে কথাবস্তু নিয়ে মিশিয়েছেন, দুটি টেলিফোটো লেন্সের মাঝে তোলা দৃশ্যের মিশেল ঘটিয়েছেন । কিন্তু ওনার সংলাপহীন ফিল্মগুলো বেশ সংক্ষিপ্ত, ছয় মিনিট থেকে ষাট মিনিটের মধ্যেই আবদ্ধ । অবশ্য সঙ্গীত আর ধ্বনি-প্রয়োগকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন । ওনার বেশিরভাগ ফিল্ম কালো-শাদায় তোলা । গোদার-এর সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা প্রকাশিত হয়েছিল ‘লে মন্দে’ পত্রিকার ২ এপ্রিল ১৯৯২ সংখ্যায় ।


জাঁ-লুক গোদার :  কেমন পরিস্হিতিতে আপনি কাজ করেছেন ?

আরতাভাজ পিলিশান : আমি আমার সব ফিল্মই আরমেনিয়ায় তুলেছি, তবে মসকো থেকে সাহায্য নিয়েছি । আমি পুরোনো ব্যবস্হার গুণগান করতে চাই না, কিন্তু তার বিরুদ্ধে নালিশও করতে চাই না । অন্তত ওদের একটা সিনেমাটিক ইন্সটিটিউট ছিল, যেখানে খুব ভালো প্রশিক্ষণ পাওয়া যেতো । চিত্রনির্মাণ আমরা কেবল সোভিয়েট ইউনিয়নেই শিখিনি বরং সারা পৃথিবীতে শিখেছি, আর সেসময়ে প্রত্যেকেরই  নিজের কন্ঠস্বর খুঁজে পাবার সুযোগ ছিল । আমি এতো কম ফিল্ম তৈরি করেছি বলে তখনকার এসট্যাবলিশমেন্টকে দায়ি করতে চাই না ; বলা যায় যে, আমার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল । আমি জানি না নতুন ব্যবস্হায় কী ঘটতে চলেছে । আশা করি আমি ফিল্মের কাজ চালিয়ে যেতে পারব ; সমস্যা তো সব সময়েই থাকে, যেমন ফ্রান্সে রয়েছে, প্রযোজনা সম্পর্কিত সমস্যা আর জনগণের মাঝে সম্পর্কের সমস্যা । এখন পর্যন্ত আমার সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল ফিল্ম তৈরি করার পর তার বিতরণ ।

জাঁ-লুক গোদার : আমি জানতে পারলুম কেননা নিয়নে তথ্যচিত্রের উৎসবে ওগুলো দেখানো হচ্ছিল, আমি যেখানে থাকি তার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে । লুসানের সিনেমাথেকের পরিচালক ফ্রেডি বশ, সেগুলোর কপি করার জন্য “সোভিয়েট নিয়ম” অনুসরণ করেছিলেন : উনি রাতের বেলায় কপি করতেন আর আমাদের দেখাতেন -- অ্যানে-মারি মিয়েভিল আর আমাকে । আমার ওপর সেগুলো গভীর প্রভাব ফেলেছিল, কিন্তু পারাদজানভের ফিল্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ; উনি মনে হয় পারস্যের জাজিম বোনা আর সাহিত্যের ঐতিহ্যের কাছাকাছি । আপনার ফিল্মগুলো, আমার মনে হয়েছে, কেবল সিনেমাটিক ঐতিহ্য থেকেই জন্মাতে পারে । যেমন আইজেনস্টাইন, দোভঝেঙ্কো আর ভেরতভ একটা ফিল্ম তৈরি করে এমন প্রভাব ফেললেন যাকে বলা চলে ফ্ল্যাহার্টি বা কিউবার তথ্যচিত্র নির্মাতা সানটিয়াগো আলভারেজের মতন । বলা যায় এক ধরণের ফিল্ম, যা  একই সঙ্গে মৌলিক এবং ঐতিহ্যময়, একেবারে আমেরিকার বাইরে, যেগুলো পৃথিবীর চলচিত্রজগতে বেশ ক্ষমতাধর । এমনকি রোম শহরও, খোলামেলা একটা মহানগর, আমেরিকার কাছে ঋণী । যখন দখলকারীর কবজায় দেশটা থাকে, তখন প্রতিরোধের সমস্যা হল কেমন করে তাকে প্রতিরোধ করা হবে । আমি যখন আপনার ফিল্মগুলো দেখলুম তখন মনে হয়েছিল, তথাকথিত সমাজবাদী ব্যবস্হার যতোই গলদ থাকুক, একটা সময়ে কয়েকজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্ব ভিন্নভাবে চিন্তা করতে সফল হয়েছিলেন । হয়তো তা বদলে যেতে চলেছে । আমার কথা যদি বলি, বাস্তবের , আর তাকে ব্যবহারের প্রতিনিধিত্বকারী উপায়গুলোর সমালোচক হিসাবে, আমি রুশ চিত্রনির্মাতদের টেকনিককে পুনরাবিষ্কার করলুম, যাকে ওনারা বলতেন মন্তাজ । গভীর চিন্তার ফসল হিসাবে মন্তাজ, যে অর্থে আইজেনস্টাইন এল গ্রেকোকে বলেছিলেন টোলেডোর সবচেয়ে বড়ো মন্তাজশিল্পী ।

আরতাভাজ পিলিশান : মন্তাজ সম্পর্কে আলোচনা করা কঠিন । শব্দটা নিঃসন্দেহে ভুল । হয়তো বলা উচিত “শৃঙ্খলার প্রণালী”। টেকনিকাল প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে, গভীরতার প্রতিফলন হিসাবে আলো ফেলা ।

জাঁ-লুক গোদার : মন্তাজের রুশ প্রতিশব্দ কী ? কোনো প্রতিশব্দ নেই ?

আরতাভাজ পিলিশান : হ্যাঁ, মন্তাজ ।

জাঁ-লুক গোদার : যেমন, উদাহরণ দিই, “ইমেজ” শব্দের দুটি প্রতিশব্দ আছে রুশ ভাষায়। সেগুলো কাজে লাগে । প্রতিটি দেশের সিনেমাটিক শব্দের একটা করে অভিধান হলে আগ্রহের ব্যাপার হবে । আমেরিকানদের দুটো শব্দ আছে : “কাটিঙ” আর “এডিটিঙ” ( শব্দটা “এডিটরদের” কাজের সঙ্গে যুক্ত, সেই লোকগুলো কিন্তু ফরাসি ভাষায় যাদের বলা হয় “editeur’, তা নয়, এই ফরাসি শব্দটা অনেকটা “প্রযোজক” বলতে যা বোঝায়, তাই। শব্দগুলো দিয়ে একই জিনিসকে বোঝায় না, আর ওরা “মন্তাজ” বলতে যা বোঝায় তার ধারেকাছে আসে না ।

আরতাভাজ পিলিশান : অভিধাগুলোর দরুণ কথা বলতে আমাদের অসুবিধা হয় । একই সমস্যা হয় “documentaire” ( documentary ) শব্দ নিয়ে । ফরাসি ভাষায় আপনারা যাকে বলেন “কাহিনিচিত্র”, রুশভাষায় আমরা তাকে বলি “শিল্পচিত্র” । অথচ ফরাসিতে সব ফিল্মই শৈল্পিক হতে পারে । রুশ ভাষায় আরও দুটি অভিব্যক্তি আছে, “played film” এবং “non-played film” ( গোদার শব্দদুটির প্রতিশব্দ করেছিলেন “le cinema joue” এবং “cinema non joue” -- এই সাক্ষাৎকারের পর গোদার একটা ছোটো ভিডিও তুলেছিলেন Les enfants jouent a la Russie অর্থাৎ ‘রাশিয়ায় শিশুদের খেলা’ নামে । )

জাঁ-লুক গোদার : ও ব্যাপারটা আমেরিকানদের মতন, যারা গল্পের চিত্রায়নকে বলে “ফিচার ফিল্ম” । ফিচার মানে মুখের বৈশিষ্ট্য, বাহ্যিক গঠন, যে ব্যাপারটা ‘তারকা’দের চেহারা থেকে এসেছে । এই সমস্ত ব্যাপার বুঝতে পারার জন্য অনেক কিছু করা দরকার, যেমন ধরা যাক ফরাসি “copie standard” ( যাতে শব্দ আর ছবি একত্রিত করা হয় ), ইংরেজরা তাকে বলে “married print”, আমেরিকানরা বলে “answer print”, ইতালীয়রা বলে “copia campoione” ( first-rate copy ) -- আর তা মুসোলিনির সময় থেকে চলে আসছে। কিন্তু সবচেয়ে সিরিয়াস ব্যাপার হল  documentaire/documentary-র ভুল ব্যাখ্যা । আজকাল তথ্যচিত্র ও কাহিনিচিত্রের মধ্যে পার্থক্য, তথ্যচিত্র এবং কমার্শিয়াল ফিল্মের মধ্যে পার্থক্য, এমনকি তাকে শৈল্পিক ফিল্ম বললেও, তথ্যচিত্রের একটা নৈতিক ভঙ্গী থাকে যা ফিচার ফিল্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । “নিউ ওয়েভ” সব সময় দুটিকে মিশিয়ে ফেলেছে ; আমরা বলতুম যে রাউচ অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক তার কারণ উনি কাহিনি তৈরি করতেন তথ্যচিত্রের গুণাগুণ দিয়ে, আর রেনোয়াও তাই করতেন, কেননা উনি তথ্যচিত্র তৈরি করতেন কাহিনির গুণাগুণ দিয়ে ।

আরতাভাজ পিলিশান : ব্যাপারটা আর পরিচালনার সমস্যা নয় । ফ্ল্যাহার্টিকে অনেক সময়ে তথ্যচিত্র নির্মাতা বলে মনে করা হয় ।

জাঁ-লুক গোদার : ওহ, নিশ্চয়ই । উনি একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা, যিনি সবাইকে এবং সমস্তকিছুকে পরিচালনা করেছেন । নানুক, ম্যান অফ আরান, লুইজিয়ানা স্টোরি -- প্রতিটি শট পরিচালনা করা হয়েছে অত্যন্ত সাবধানে । ওয়াইজম্যান যখন বড়ো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোকে নিয়ে ফিল্ম তৈরি করলেন, ‘দি স্টোর’, উনি ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোর নিজেদের পরিচালনা আর কাহিনিকেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন ।

আরতাভাজ পিলিশান : একই কারণে আমি কখনও ফিল্মস্টুডিও বা টেলিভিশন স্টুডিওর কাঠামোর ভেতরে কাজ করার প্রস্তাব দিইনি । আমি এমন জায়গা খোঁজার চেষ্টা করেছি যেখানে শান্তিতে ফিল্ম তোলা যায় । অনেক সময়ে তা টিভির জন্যেও করতে হয়েছে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে পারা, নিজের ফিল্মের ভাষায় । অনেক সময়ে লোকে বলে যে ফিল্ম হল অন্যান্য শিল্প আঙ্গিকের সমন্বয় । আমি তাকে সত্যি বলে বিশ্বাস করি না । আমার ধারণা, ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল ‘টাওয়ার অফ ব্যাবেল’-এ, যেখানে আরম্ভ হয়েছিল ভাষার বিভাজন । টেকনিকাল কারণে অন্যান্য শিল্প আঙ্গিকের পর তা দেখা দিয়েছে, কিন্তু বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তা আগে এসেছে । আমি বিশুদ্ধ সিনেমা তৈরির চেষ্টা করি, যার জন্য অন্যান্য শিল্প থেকে কিছুই নিই না ।  আমি একটা এমন সেটিঙ খোঁজার চেষ্টা করি যার চারিধারে আবেগের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র গড়ে তোলা যায় ।

জাঁ-লুক গোদার : কিছুটা নিরাশাবাদী হবার কারণে, আমি সমস্ত ব্যাপারের আরম্ভের আগেই শেষটা দেখতে পাই । আমার কাছে, সিনেমা হল শিল্পের শেষ প্রতিভাস, যে ধারণাটা পাশ্চাত্য জগতের । অসাধারণ পেইনটিঙের যুগ শেষ হয়ে গেছে, অসাধারণ উপন্যাস উধাও হয়ে গেছে। সিনেমা ছিল, আপনি যদি মানেন, ব্যাবেলের আগেকার ভাষা, যা সবাই বিষয়টায় শিক্ষা ছাড়াই বুঝতে পারতো । মোৎসার্ট রাজকুমারদের সামনে বাজাতেন, চাষারা তা শুনতো না, যখন কিনা চ্যাপলিন সকলের জন্য অভিনয় করতেন । ফিল্মনির্মাতারা এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলেন যে ফিল্মের ভিত্তির জন্য কী মৌলিক, আর এই ধরণের অনুসন্ধান, আমি আরেকবার মনে করিয়ে দিই, অনেকটা পাশ্চাত্য জগতের ব্যাপার । এটা একটা মন্তাজ । এই বিষয়ে লোকে অনেক আলোচনা করেছে, বিশেষ করে পরিবর্তনের সময়ে । বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন ছিল রুশ সাম্রাজ্যের সোভিয়েত রাষ্ট্রে রূপান্তরণ ; স্বাভাবিকভাবে, রুশরাই সেই অনুসন্ধানে সবচেয়ে বেশি প্রগতি করেছিল, তার কারণ বিপ্লবের ফলে সমাজ নিজেই আগের আর পরের মন্তাজ তৈরি করে ফেলছিল ।

আরতাভাজ পিলিশান : ফিল্ম নির্ভর করে তিনটি ব্যাপারে : পরিসর, সময় এবং বাস্তব বিচলনে । এই তিনটি উপাদান প্রকৃতিতে বর্তমান, কিন্তু শিল্পের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সিনেমা তাদের পুনরাবিষ্কার করতে পারে । তাদের ধন্যবাদ যে বস্তুর গোপন ক্রিয়াকে আবিষ্কার করা সম্ভব। আমি নিশ্চিত যে ফিল্ম দর্শনের, বিজ্ঞানের, শিল্পের ভাষায় যুগপৎ কথা বলতে পারে । প্রাচীন যুগ হয়তো এই অভেদের সন্ধান করতো ।

জাঁ-পল গোদার : এই একই ব্যাপার পাওয়া যাবে যদি আমরা অভিক্ষেপের ধারণা সম্পর্কে ভাবি, যেমন তা উদ্ভূত আর বিকশিত হয়েছিল যতক্ষণ না আমরা তা টেকনিকালি অভিক্ষেপের যন্ত্রাদির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছি । গ্রিকরা প্ল্যাটোর বিখ্যাত গুহার তত্বের কথা কল্পনা করতে পেরেছিলেন । এই পাশ্চাত্য ধারণা, যা বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাসীরা অনুমান করেননি, অ্যাজটেকরাও করেননি, খ্রিষ্টধর্মে অবয়ব পেলো, যা গড়ে উঠেছে কোনও বৃহৎ আশার  বনেদের ওপরে । পরে তা গণিত বিশেষজ্ঞদের মাঝে ব্যবহারিক আঙ্গিকের বিষয় হয়ে উঠলো, যাঁরা আবিষ্কার করলেন -- আবার সেই পশ্চিমের ব্যাপার -- বর্ণনামূলক জ্যামিতি । পাসকাল এই ব্যাপারে অনেক খেটেছিলেন, সেই একই ধার্মিক, আধ্যাত্মিক অনুচিন্তন, মোচক সম্পর্কে তাঁর ধারণার ব্যাখ্যা দিয়ে । পরে আমরা পেলুম জাঁ-ভিক্টর পোন্সলেট, নেপোলিয়ানের সৈন্যবাহিনীর এক বিদ্বৎজন। তাঁকে রাশিয়ার কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, আর সেখানেই তিনি আকারের বৈশিষ্ট সম্পর্কে  তাঁর তত্ত্বের ছক কষতে পারলেন, যা কিনা বস্তু সম্পর্কে আধুনিক তত্বের বনেদ। কারাগারে ওনার আবিষ্কার কাকতালীয় ছিল না । ওনার সামনে ছিল একটা দেয়াল, আর সব কারাবন্দীরা যা করে তিনিও তাই করছিলেন: উনি দেয়ালে অভিক্ষেপ ঘটালেন । পালাবার উগ্র ইচ্ছে । গণিতবিদ হবার দরুণ তিনি নিজেকে সমীকরণে প্রকাশ করলেন । উনিশ শতকের শেষে এলো প্রযুক্তিগত উপলব্ধির সঙ্গতি । সেই সময়ে একটা আগ্রহব্যঞ্জক ব্যাপার ছিল ফিল্মে শব্দের অনুপ্রবেশ । এডিশন প্যারিসে এসেছিলেন ডিস্কের সঙ্গে চোখে দেখা যায় এমন দর্শনীয় টেপ নিয়ে। তা এখনকার মতনই কমপ্যাক্ট ডিস্কের ব্যাপার ছিল, যা আজও কিছু স্টুডিও ব্যবহার করে, তার সঙ্গে ফিল্মের ডিজিটাল শব্দাবলীকে মেশাবার খাতিরে । আর তা একটা প্রচলিত ধারা হয়ে উঠল ! অসম্পূর্ণতা নিয়েই, অন্যান্য ছবির মতন, তা চলতে লাগল, আর টেকনিকে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল । কিন্তু লোকেরা তা চাইতো না । লোকেরা সাইলেন্ট সিনেমা পছন্দ করত ; তারা কেবল দেখতে চাইতো ।

আরতাভাজ পিলিশান : শেষ পর্যন্ত যখন শব্দ এলো, বিশ শতকের শেষে, মহান চিত্রনির্মাতারা, যেমন গ্রিফিথ, চ্যাপলিন আর আইজেনস্টাইন, ব্যাপারটা সম্পর্কে তাঁদের ভীতি ছিল । তাঁদের মনে হয়েছিল শব্দের অনুপ্রবেশ তাঁদের এক পা পেছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । তাঁরা ভুল ছিলেন না, কিন্তু তাঁরা যে বিষয়ে ভাবছিলেন, তা সেই কারণে নয় ; শব্দ মন্তাজের মাঝে মাথা গলায়নি, তা ইমেজকে সরিয়ে তার জায়গায় আসতে চেয়েছিল ।

জাঁ-লুক গোদার : ইউরোপে ফ্যাসিজমের উথ্থানের সঙ্গে টকিজের প্রযুক্তি এসেছিল, আর সেই সময়েই আবির্ভাব হয়েছিল বক্তাদের । হিটলার ছিল একজন বড়ো বক্তা, মুসোলিনিও তাই, চার্চিল, দ্য গল আর স্ট্যালিন । টকি ছিল ভাষার ওপরে থিয়েটারের দৃশ্যের বিজয়, আপনি একটু আগে যে কথা বলছিলেন, ব্যাবেলের অভিশাপের আগে ভাষা যে অবস্হায় ছিল ।

আরতাভাজ পিলিশান : ভাষাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আমি যা ব্যবহার করি তাকে বলব “চিত্রকল্পের অনুপস্হিতি” । আমার মনে হয় লোকে ছবিগুলো শুনতে পায় আর আওয়াজকে দেখতে পায় । আমার ফিল্মগুলোতে ছবিগুলো আওয়াজের পাশেই সংশ্লিষ্ট হয়ে অবস্হান করে আর আওয়াজগুলো ছবির পাশে । এই পারস্পরিক বিনিময়গুলো থেকে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা নির্বাকযুগের ফিল্মের মন্তাজ থেকে আলাদা, কিংবা বলা ভালো, যে “ফিল্মগুলো কথা বলত না” তাদের থেকে ।

জাঁ-পল গোদার : আজকালকার দিনে ছবি আর আওয়াজ পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ; লোকে টেলিভিশন সম্পর্কে বেশি ওয়াকিবহাল । একদিকে ছবি আর আরেক দিকে আওয়াজ, এবং এখন আর এই দুটির পরস্পরের সঙ্গে স্বাস্হ্যকর ও বাস্তব সম্পর্ক নেই । তারা নিছক রাজনৈতিক প্রতিবেদন হয়ে গেছে । সেই কারণেই পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বিশ্ব-টেলিভিশন এখন রাজনীতির কবজায় । আর এখন রাজনীতি নতুন ধরণের ছবি গড়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ( তথাকথিত “হাই ডেফিনিশন” ), এমনই একটা আঙ্গিক যা বর্তমানে কেউই চায় না । এই প্রথমবার রাজনৈতিক ক্ষমতাধারীরা বলতে বাধ্য হয়েছেন : তোমরা এই জানালা দিয়ে এই ফিল্মের ছবিগুলো দেখতে পাবে । এমন ছবি, যার আঙ্গিক একতলার ছোটো জানালার মাপের, ফুটপাথের স্তরে একটা ছোটোখাটো ব্যাপার, যার আঙ্গিক চেকবইয়ের মতন ।

আরতাভাজ পিলিশান : আমি ভেবে অবাক হই যে টেলিভিশন আমাদের কী দিয়েছে। তা দূরত্বকে নিশ্চিহ্ণ করে দিতে পারে বটে, কিন্তু কেবল সিনেমাই সময়কে পরাজিত করতে পারে, মন্তাজ টেকনিকের দরুন । সময়ের এই জীবাণু -- সিনেমা তার ভেতর দিয়ে যেতে পারে । কিন্তু টকি আসার আগে ওই পথে তা বেশ দূরে সরে গেছে । সন্দেহ নেই যে তার কারণ হল মানুষ ভাষার চেয়ে বড়ো, শব্দের চেয়ে বড়ো । আমি মানুষের ভাষার চেয়ে মানুষকে বেশি বিশ্বাস করি।

[ ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী ]


জাঁ জেনের কবিতা "মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদি" : অনুবাদ -- মলয় রায়চৌধুরী

 জাঁ জেনের কবিতা : মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদি 

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী


কবিতাটি সম্পর্কে জাঁ জেনের বক্তব্য : “আমি এই কবিতাটি আমার বন্ধু মরিস পিলোর্গেকে উৎসর্গ করেছি, যার উজ্বল মুখ আর দেহ আমার ঘুমহীন রাতগুলোয় ঘাপটি মেরে ঢোকে। আত্মার আত্মীয় হিসাবে তার জীবনের শেষ চল্লিশ দিন তার সঙ্গেই আমি বেঁচেছি । সে ছিল পায়ে চেন বাঁধা অবস্হায় এবং অনেকসময়ে দুই হাতেও, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অন্ধকার কুঠুরিতে, সাঁ-ব্রিয়েক কারাগারে । সংবাদপত্রগুলো আসল ব্যাপারটাই ধরতে পারেনি । তারা নির্বোধ প্রবন্ধগুলোর সঙ্গে সায় দিয়েছে যেগুলো পিলোর্গের মৃত্যু নিয়ে আহ্লাদ করেছিল । ইউভ্রে সংবাদপত্র লিখেছিল, ‘এই বালক ছিল আরেক নিয়তির উপযুক্ত’ । সংক্ষেপে, তারা পিলোর্গেকে হেয় করেছিল । আমি তাকে চিনতুম, সে ছিল দেহ ও আত্মায় সৌম্যদর্শন ও মহৎ । প্রতিদিন সকালে যখন আমি আমার কুঠুরি থেকে তার কুঠুরিতে যেতুম, ওর জন্য কয়েকটা সিগারেট নিয়ে -- জেলার সাহেবকে ধন্যবাদ, কেননা তিনি পিলোর্গের সৌন্দর্য, যৌবন ও অ্যাপোলোর মতন মাধুর্যে বিমোহিত ছিলেন -- পিলোর্গে গুনগুন করে গান গাইতো আর হেসে আমাকে বলতো, সেলাম সকালবেলার জনি । পিলোর্গের বাড়ি ছিল পুই দ্য দোমে, সেখানকার টান ছিল ওর কথাবার্তায় । পিলোর্গের ঐশ্বর্ষময় করুণার সৌষ্ঠবে ঈর্ষান্বিত জুরিরা, অদৃষ্টের ভূমিকা নিয়ে, ওকে কুড়ি বছরের জন্যে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল, কেননা ও সমুদ্রের ধারে কয়েকটা বাড়িতে ডাকাতি করেছিল আর পরের দিন নিজের প্রেমিক এসকুদেরোকে খুন করেছিল ; এসকুদেরো পিলোর্গের এক হাজার ফ্রাঁ চুরি করে নিয়েছিল । এই একই আদালত পরে আদেশ দিয়েছিল যে পিলোর্গের মাথা গিলোটিনে রেখে ধড় থেকে আলাদা করে দেয়া হোক । ১৭ মার্চ ১৯৩৯ সালে পিলোর্গেকে রাষ্ট্র ওইভাবে হত্যা করে । মাত্র ২৫ বছর বয়সে মারা যায় মরিস পিলোর্গে ।” 

এই কবিতাটিতে কয়েদি ও সমকামীদের জগতে প্রচলিত বহু ইশারা প্রয়োগ করেছেন জাঁ জেনে । জেনে তাঁর কবিতায় পাঠকদের নৈতিক ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধে অন্তর্ঘাত ঘটাবার কাজ করেছেন । তিনি পাপ, পতন, ক্লেদ ইত্যাদিতে পেয়েছেন সৌন্দর্য এবং তার গুণকীর্তন করেছেন, গুরুত্ব আরোপ করেছেন নিজের অসাধারণত্বে, নিষ্ঠুর ও বেপরোয়া অপরাধীদের করে তুলেছেন নিরুপম আইকন,  সমকামের বিশেষ আচার-আচরণ ও শব্দভাঁড়ারকে নির্দিধায় ব্যবহার করেছেন এবং হিংস্রতা ও বিশ্বাসঘাতকতার বর্ণনাকে উপভোগ করেছেন । 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

জেলের উঠোনে বাতাস একটি হৃদয়কে গড়িয়ে নিয়ে চলেছে

গাছ থেকে ঝুলছে  ফোঁপাতে থাকা এক দেবদূত

শ্বেতপাথরকে পাকিয়ে  নভোনীল থাম

গড়ে তুলছে জরুরি দরোজা

তা আমার রাতের জন্য খোলা ।

এক বেচারা পতনরত পাখি আর ছাইয়ের স্বাদ

দেয়ালে ঘুমন্ত চোখের স্মৃতি

আর এই দুঃখে ঠাশা মুঠো যা নভোনীলকে হুমকি দিয়ে

তোমার মুখ নামিয়ে আনে

আমার হাতের 

গহ্বরে ।


এই কঠিন মুখ, মুখোশের চেয়েও হালকা

দামি মণিরত্নের চেয়েও আমার হাতে ভারি ঠেকছে

প্রতিরোধের আঙুলে ; ভিজে গেছে কান্নায়

অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভয়ঙ্কর

এক সবুজ চাদর তাকে

ঢেকে রেখেছে ।

তোমার মুখ কঠোর । একজন গ্রিক মেষপালকের মতন

আমার বন্ধ দুই হাতের মধ্যে কাঁপছে

তোমার মুখ এক মৃত নারীর মতন

তোমার চোখ দুটো গোলাপ

আর তোমার নাক হতে পারে

এক শ্রেষ্ঠ দেবদূতের ঠোঁট ।

যদি তোমার মুখ গান গায়, তাহলে কোন নারকীয় পাপ

তোমার দূষিত বিনয়ের ঝিলমিলে তুষারকে গলিয়ে দিয়েছে

ইস্পাতের উজ্বল নক্ষত্র দিয়ে তোমার চুলের ধুলো ঝেড়েছে

আর কাঁটার মুকুট পরিয়েছে তোমার মাথায় ?

আমাকে বলো কোন উন্মাদ দুর্ভাগ্য আচমকা তোমার চোখকে  মেলে ধরে

এক বিষাদ যা এতো তীব্র যে বুনো দুঃখ

তোমার শীতল চোখের জল সত্বেও

তোমার গোল মুখকে আদর করতে আতঙ্কিত হয়

শোকের মিষ্টি হাসি হেসে ?

আজ রাতে, সোনালী বালক, “চাঁদের ফেনা” গানটা গেও না

তার বদলে মিনারবাসিনী এক রাজকন্যা হও যে স্বপ্ন দেখছে

আমাদের দুর্ভাগা প্রেমের -- কিংবা ফরসা কেবিন বালক

যে উঁচু মাস্তুল থেকে নজর রাখছে ।

আর সন্ধ্যায় জাহাজ-পাটাতনে গান গাইবার জন্যে নেমে আসবে

নাবিকদের মাঝে গইবে ‘সমুদ্রের নক্ষত্রদের জয়’

ন্যাড়ামাথা আর হাঁটুগেড়ে, ধরে রেখেছে

তাদের বজ্জাত হাতে

লাফখোর লিঙ্গকে ।

তোমাকে ধর্ষণ করার জন্য, সুন্দর হঠকারী কেবিন বালক

পালোয়ান নাবিকরা এতোক্ষণে তাদের ট্রাউজারের মধ্যে টনটন করে উঠছে

আমার প্রেম, আমার প্রেম, তুমি কি আমার চাবি চুরি করবে 

 আমার জন্য মেলে ধরবে

শিহরিত মাস্তুলের আকাশ ?

যেখানে তুমি রাজকীয় কায়দায় পোঁতো শাদা পাগলকরা তুষার 

আমার পৃষ্ঠতলে, আমার নিঃশব্দ কারাগারে :

আতঙ্কিত, মৃতের মাঝে ফুটে ওঠা ল্যাভেণ্ডার

মৃত্যু তার গৃহিণীদের নিয়ে আসবে

আর আনবে মায়াপুরুষ প্রেমিকদের…

নিজের মখমল পদক্ষেপে, একজন শিকারি পাহারাদার পাশ কাটায়

আমার চোখের খোদলে তোমার স্মৃতি রয়ে গেছে

আমরা ছাদের ওপর চড়ে হয়তো পালিয়ে যেতে পারি

ওরা বলে গিয়ানা

ভীষণ গরম জায়গা ।

ওহ দ্বীপান্তরের কলোনির মিষ্টতা

অসম্ভব আর বহুদূর

ওহ পালাবার আকাশ, সমুদ্র আর নারিকেলসারি

স্বচ্ছ ভোরবেলা, মোহময় সন্ধ্যা

শান্ত রাত, কামানো মাথা

আর চিকনত্বক গাণ্ডু !

ওহ প্রেম, চলো দুজনে মিলে এক বলিষ্ঠ প্রেমিকের স্বপ্ন দেখি

ব্র্‌হ্মাণ্ডের মতন বিশাল

যদিও তার দেহ ছায়ার ময়লামাখা

সে আমাদের এই স্বর্গীয় কারা-আশ্রয়ে ল্যাংটো করে শেকলে বাঁধবে

ওর সোনার দুই উরুর মাঝে

ওর পেটের ওপরে

সিগারেট ফুঁকতে-ফুঁকতে

দেবদূতের দেহ থেকে কেটে গড়ে নেয়া এক ঝলমলে কোটনা

ফুলের তোড়ার ওপরে শক্ত হয়ে ওঠে

কারনেশন আর জুঁইফুলের তোড়া

যেগুলো তোমার উজ্বল হাত কাঁপতে কাঁপতে নিয়ে যাবে

ওর অভিজাত মর্যাদায়, বিকৃতমস্তিষ্ক

তোমার চুমুর ছোঁয়ায় ।

আমার মুখগহ্বরে দুঃখ ! উথলে উঠছে তিক্ততা

আমার অসুখি হৃদয়কে ফুলিয়ে তুলছে ! আমার সুগন্ধী ভালোবাসাগুলো

দ্রুতই বিদায় নেবে, বিদায় ! বিদায়

প্রিয়তম অণ্ডকোষ ! আমার অবরুদ্ধ কন্ঠস্বরকে

থামিয়ে, বিদায়

হে বেহায়া লিঙ্গ !

গান গেও না, তুমি ফন্দিবাজ, বর্বরতা দেখাও !

পবিত্র উজ্বল গলার  কচি মেয়ে হয়ে ওঠো

আর যদি তুমি ভয় না পাও, সঙ্গীতময় বালিকা

আমার অন্তরজগতে বহুকাল আগে মৃত

কুঠার দিয়ে কেটে বিচ্ছিন্ন 

আমার মাথা ।

আদরের বালক, কতো সুন্দর, লিলাকফুলের মুকুট তোমার মাথায় !

আমার বিছানায় নত হও, আমার জাগ্রত লিঙ্গকে

তোমার সোনালি গালের পরশ নিতে দাও । শোনো

সেই খুনি, যে তোমার প্রেমিক

হাজার স্ফূলিঙ্গ জরিয়ে

নিজের গল্প শোনায় ।

ও গান গেয়ে বলে যে তোমার দেহকে পেয়েছিল, তোমার মুখ

আর তোমার হৃদয় -- যা এক দ্রুতগতি

শক্তিশালী অশ্বারোহীও

কখনও ফাঁক করতে পারবে না । ওহ বালক

তোমার গোলাকার হাঁটু পাবার জন্য

তোমার শীতল গলা, নরম হাত

তোমার বয়সী হতে হবে !

উড়তে হলে, তোমার রক্তাক্ত আকাশে উড়তে হলে

আর মৃতদের নিয়ে অনন্যসাধারণ মূর্তি গড়তে হলে, 

এখানে আর সেখানে জড়ো করা , চারণভূমিতে, ঝোপে, 

ওর মৃত্যুর জন্যে তৈরি করা ঔজ্বল্যে

আছে ওর বয়ঃসন্ধির আকাশ…।

বিষণ্ণ সকালগুলো, মদ, সিগারেট…

তামাকের ছায়া, নাবিকদের কলোনি

আমার জেলকুঠুরিতে খুনির প্রেত আসে

এক বিশাল লিঙ্গ দিয়ে আমাকে ঠেলে দ্যায়

আমাকে আঁকড়ে ধরে ।

«

এক কালো জগতকে যে গান অতিক্রম করে যায়

তা হলো এক কোটনার কান্না যে তোমার সঙ্গীতে আনমনা

তা ফাঁসিতে লটকানো একজন মানুষের 

যে কাঠের মতন শক্ত

তা এক কামার্ত চোরের

মায়াময় আহ্বান ।

ষোলো বছরের এক কয়েদি সাহায্য চায়

কোনো নাবিক ওই আতঙ্কিত কয়েদিকে সাহায্য করতে এগোয় না

আরেকজন কয়েদির পা মুচড়ে

শেকলে বাঁধা ।

আমি নীল চোখের জন্য খুন করেছি

এক উদাসীন সৌন্দর্যকে

ও আমার শ্বাসরুদ্ধ ভালোবাসা কখনও বোঝেনি

তার কালো শকটে, এক অচেনা প্রেমিক

আমাকে পুজো করে মৃত

 জাহাজের মতন সুন্দর ।

যখন তুমি অপরাধ করার জন্য তৈরি

নির্দয়তার মুখোশ পরে, সোনালি চুলে ঢাকা

বেহালার মিহি পাগলকরা সুরে

তোমার কেলেঙ্কারির সমর্থনে

কচুকাটা করো এক মহিলাকে ।

এরকম সময় সত্বেও, লোহাব গড়া এক রাজকুমার

হৃদয়হীন আর নিষ্ঠুর, পৃথিবীতে দেখা দেবে

যেন কোনো বুড়ি কাঁদছে ।

সর্বিপরি, ভয় পেও না

চোখ ধাঁধানো ঔজ্বল্যের সামনে ।

এই প্রেত ভিতু আকাশ থেকে নেমে আসে

অপরাধের কামোন্মাদনায় । এক বিস্ময়কর বালক

অনন্যসাধারণ সৌন্দর্য নিয়ে ওর দেহ থেকে জন্মাবে

ওর বিস্ময়কর লিঙ্গের

সুগন্ধিত ধাতুরস থেকে ।

পশমের জাজিমের ওপরে কালো গ্র্যানিট পাথর

এক হাত পাছায়, শোনো ও কেমন করে কথা বলে

সূর্যের দিকে ওর পাপহীন শরীর

আর ফোয়ারার কিনার পর্যন্ত

শান্তিময়তায় প্রসারিত ।

রক্তের প্রতিটি উৎসব এক টগবগে ছোকরাকে উৎসর্গ করে

যাতে প্রথম পরীক্ষায় বালকটি সমর্থন যোগাড় করতে পারে

তোমার মানসিক যন্ত্রণা আর ভয়কে তুষ্ট করো

ওর শক্ত প্রত্যঙ্গকে শোষণ করো

কাঠিবরফের মতন ।

তোমার গালে স্পন্দিত হতে-থাকা লিঙ্গকে আলতো চিবোও

তার ফোলা মুখকে চুমু খাও, ঝাঁপ নিতে দাও

আমার প্রত্যঙ্গকে 

তোমার গলার ভেতরে, এক শোষণেই গিলে নাও

ভালোবাসার রুদ্ধকন্ঠ, ফেলে দাও থুতুর সঙ্গে

মুখ খুলে !

হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করো টোটেম-গাছের মতন

আমার উল্কিদাগা ধড়, কান্না না পাওয়া পর্যন্ত তাকে পুজো করো

আমার যৌনতা তোমাকে চুরমার করে দেবে

প্রহার করবে অস্ত্রের চেয়ে বেশি

যা তোমার ভেতরে প্রবেশ করবে ।

জিনিসটা তোমার চোখের সামনে লাফিয়ে ওঠে

সামান্য মাথা নামিয়ে দ্যাখো কেমন লাফিয়ে ওঠে

এতো সুন্দর দেখতে যে চুমু খেতে ইচ্ছে করে

তুমি ঝুঁকে ফিসফিস করে তাকে বলো :

“মাদাম” !

মাদাম, আমার কথা শোনো ! মাদাম, আমরা এখানে মারা যাবো ।

খামারবাড়িটা ভুতুড়ে ! জেলখানা ভয়ে কাঁপছে !

সাহায্য করো, আমরা যাচ্ছি ! আমাদের তুলে নিয়ে চলো

আকাশে তোমার ঘরে

হে দয়ার ম্যাডোনা !

সূর্যকে হাঁক পেড়ে ডাকো যাতে সে এখানে এসে আমাকে সান্ত্বনা দেয়

গলাটিপে মারে এই গেরস্ত মোরগগুলোকে !

জল্লাদকে ঘুম পাড়াও !

আমার জানালায়  নষ্টামির হাসি হাসে দিন

জেলখানা হলো মারা যাবার বিস্বাদ পাঠশালা ।

«

তোমার হাসিমাখা নেকড়েদাঁতকে আমার ঘাড়ে বিশ্রাম নিতে দাও

আমার ঘাড়ে আস্তরণ নেই আর ঘৃণাহীন

বিধবার হাতের চেয়েও হালকা আর ঐকান্তিক আমার হাত

আমার কলারের ভেতরে হাত বুলোও

এমনকি তা তোমার হৃদয়কে স্পন্দিতও করে না

ওহ এসো আমার সুন্দর সূর্য

ওহ এসো আমার স্পেনের রাত

আমার দৃষ্টির সামনে এসো যা কাল মারা যাবে

আমাকে এখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে চলো

যাতে বিকারের উন্মত্ততায় ঘুরে বেড়াতে পারি ।

আকাশ জেগে উঠতে পারে, নক্ষত্রেরা ঝংকার তুলতে পারে

ফুলেরা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারে, আর চারণভূমিগুলোতে

কালো ঘাসগুলো আহ্বান করতে পারে শিশিরকে

যেখানে সকাল তৃষ্ণা মেটাতে আসে

হয়তো ঘণ্টাধ্বনি হবে : আমি একা

মারা যাবো ।

ওহ এসো গো আমার গোলাপি আকাশ, ওহ এসো আমার সোনালি ঝুড়ি !

রাতে শাস্তিপ্রাপ্ত তোমার জেলবন্দীকে দেখে যাও

মাংস খুবলে নাও, মেরে ফ্যালো, ওপরে ওঠো, কামড়াও

কিন্তু এসো । তোমার গাল রাখো

আমার গোল মাথার ওপরে ।

আমরা এখনও ভালোবাসার কথা বলা শেষ করিনি

আমরা এখনও শেষ করিনি আমাদের চুরুট ফোঁকা

আমরা অবাক হই কেন আদালত দণ্ড দ্যায়

একজন সৌম্যদর্শন খুনিকে

যার তুলনায় দিনকেও ফ্যাকাশে মনে হয় ।

হে প্রেম, আমার মুখগহ্বরে এসো । হে প্রেম, দরোজা খুলে দাও !

নেমে পড়ো, আলতো হাঁটো, দালানগুলো পেরিয়ে যাও

মেষপালকের চেয়েও আলতো পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে উড়ে যাও

মৃত পাতাদের ঝটিতি চলে যাবার বদলে 

বাতাস তুলে নিয়ে যাবে ।

ওহ দেয়ালের ভেতর দিয়ে যাও, আর যদি চলে যেতে  হয়

আলসের ওপর হাঁটো -- ছাদের ওপরে, সাগরের ওপরে

আলোয় ঢেকে নাও নিজেকে, হুমকি প্রয়োগ করো, প্রার্থনা ব্যবহার করো

কিন্তু এসো, আমার কুক্কুরি

আমার মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে এসো।

«

আমার দোলখাবার কুঠুরিতে, ঝাউগাছের গানের সামনে উন্মুক্ত

( নাবিকদের গিঁটপাকানো দড়িতে ঝুলছে

যাদের সকালের স্বচ্ছতা সোনালী করে তোলে ) দেয়ালের ওপরের খুনিরা

নিজেদের ভোরবেলা দিয়ে মুড়ে রাখে ।

কে পলেস্তারার ওপরে বাতসের গোলাপ খোদাই করেছে ?

কে আমার বাড়ির স্বপ্ন দ্যাখে 

হাঙ্গেরির তলদেশ থেকে ?

কোন বালক আমার পচা খড়ের ওপরে শুয়েছে

ঘুমভাঙার মুহূর্তে

বন্ধুদের কথা মনে করে ?

আমার উন্মাদনাকে অস্হিরতা দাও, জন্ম দাও আমার আনন্দ থেকে

সৌম্যকান্তি সেনায় ঠাশা এক সান্তনাদায়ক নরক

কোমর পর্যন্ত নগ্ন -- আর স্বকামী পুরুষের ট্রাউজার থেকে 

টেনে নামাও গন্ধের অদ্ভুত ফুল

যা আমাকে বিদ্যুতের মতন আঘাত করবে ।

কে জানে কোথা থেকে উপড়ে তোলো উন্মাদ অঙ্গভঙ্গীগুলো--

বালকদের পোশাক খোলো, অত্যাচার আবিষ্কার করো, 

তাদের মুখের সৌন্দর্যকে বিকৃত করো

আর গিয়ানার জেলখানা দিয়ে দাও বালকদের

যাতে তারা দেখাসাক্ষাৎ করতে পারে ।

হে আমার বুড়ি মারোনি নদী, হে মিষ্টি কেয়েনের জল !

পনেরো থেকে কুড়িজন কয়েদির

আমি অবনত দেহগুলো দেখতে পাই

ফরসা বালকটিকে ঘিরে ধরেছে

পাহারাদারদের ফেলে-দেয়া সিগারেট ফুঁকছে

ফুলের মাঝে আর শ্যাওলায় ।

একটা ভিজে আধা-সিগারেট সবাইকে দুঃখিত করার জন্য যথেষ্ট

ঋজু, একা, শক্ত ফার্নের ওপরে

তাছাড়া মার্জিত এবং খাঁটি একটি ভ্রাম্যমান কামড় ।

সবচেয়ে যে কমবয়সী সে স্হির হয়ে বসে

নিজের সুন্দর পোঁদ রেখে

অপেক্ষা করে 

গৃহিনী হবার জন্য ।

আর পুরোনো খুনিরা রাতের বেলায় উবু হয়ে

আচার অনুষ্ঠানের জন্য জড়ো হয়

একটা শুকনো কাঠি থেকে টেনে বের করবে

কোনো চটপটে কয়েদি

চুরি করা এক টুকরো আগুন

উথ্থিত লিঙ্গের চেয়েও যা

পবিত্র ও মার্জিত ।

চকচকে পেশির পালোয়ান ডাকাতও

এই কচি তরুণের সামনে নত হয়ে শ্রদ্ধা জানায়

চাঁদকে তুলে নিয়ে যায় আকাশে

হাতাহাতি প্রশমিত হয়

যখন কালো পতাকার 

রহস্যময় ভাঁজগুলো

ঢেউ খেলতে থাকে ।

তোমার অঙ্গভঙ্গী তোমাকে কতো ভালো করে মুড়ে নেয় !

রক্তিম হাতের তালুতে রাখা একদিকের কাঁধ

তুমি সিগারেট ফোঁকো । আর গলায় ধোঁয়া নেমে যায়

তখন কয়েদিরা গম্ভীরমুখে নাচতে থাকে

গুরুত্ব দিয়ে, নিঃশব্দে, পারাপারি করে

তোমার মুখ থেকে ওরা এক সুগন্ধী ফোঁটা নেবে

দুটো নয়, গোল হয়ে বেরিয়ে আসা ধোঁয়ার

তোমার জিভ থেকে ওদের জিভে

হে বিজয়ী ভাই ।

ভয়ানক দিব্যতা, অদৃশ্য আর বজ্জাত

তুমি তখন ঝকঝকে ধাতুতে গড়া উদাসীন ও তীক্ষ্ণ

একা নিজের কথা ভাবছ, মারাত্মক ব্যবসাদার

তোমার হ্যামক থেকে দড়ি খুলে

 গান গায় ।

তোমার অপলকা আত্মা পর্বতমালার ওপরে ভেসে যায়

সঙ্গে আবার যায় জাদুমথিত উড়াল

জেলকলোনি থেকে পলাতক এমন কেউ

উপত্যকার প্রান্তসীমায় মারা গেছে

ফুসফুসে গুলি খেয়ে

এমনকি তোমার কথা

না ভেবেই ।

হে বালক, চাঁদের বাতাসে জেগে ওঠো

আমার মুখের ভেতরে ঝরাও কয়েকফোটা ধাতুরস

তোমার গলা থেকে তোমার দাঁত পর্যন্ত গড়িয়ে-আসা, হে প্রেম

গর্ভবান করার জন্য, শেষ পর্যন্ত

আমাদের মহাসমাদরে বিয়ে হচ্ছে।

তোমার পরমানন্দিত দেহকে আমার দেহের সঙ্গে জুড়ে দাও

তা জঘন্যতার কারণে মারা যাচ্ছে

হে তুলতুলে মিষ্টি ইতর

তোমার গোল সোনালী অণ্ডকোষদের বিস্ময়ে

আমার কালো শ্বেতপাথরের লিঙ্গ

তোমার হৃদয়কে বিদ্ধ করবে ।

ওর যে সূর্যাস্ত পুড়ছে তাতে নিশানা করো

যেটা আমাকে খেতে চাইছে !

আমার শিকারের আত্মারা, আমার হাতে বেশি সময় নেই

এসো, সাহস থাকলে, তোমাদের পুকুর 

তোমাদের জলাজঙ্গল, কাদা ছেড়ে যাও 

যেখানে তুমি বুদবুদ ওড়াও ! আমাকে খুন করো ! পোড়াও !

একজন ফুরিয়ে-যাওয়া মিকেলাঞ্জেলো, আমি জীবন থেকে গড়েছি

কিন্তু প্রভু, আমি চিরকাল সৌন্দর্যের সেবা করেছি : 

আমার তলপেট, আমার হাঁটু, আমার রক্তিম হাত

সবই বিপদাশঙ্কার ।

মুর্গিখামারের মোরগেরা, ফরাসিদেশের ক্রীড়াকৌতূক

দুধঅলার বালতি, বাতাসে একটা ঘণ্টা

পাথরকুচিতে এক পদক্ষেপ

আমার শার্শি শাদা আর স্বচ্ছ

এক আনন্দময় ঔ্রজ্বল্য আছে

লিখনস্লেটের কারাগারে ।

মহাশয়গণ, আমি ভীত নই !

যদি আমার মাথা গিলোটিনের চুবড়িতে গড়িয়ে পড়ে

তোমার ফ্যাকাশে মাথা নিয়ে, আমার ভাগ্যের কারণে

তোমার কৃশতনু পাছায় ।

কিংবা আরো ভালোভাবে বলতে হলে :

তোমার গলার ওপরে

হে প্রিয়...।

চেয়ে দ্যাখো ! অর্ধেক খোলা মুখের বিয়োগান্তক রাজা

তোমার উষর বাড়িয়াড়ির বাগানে আমার ঢোকার অধিকার আছে

যেখানে তুমি শক্ত হও, ঋজু, একা

দুই আঙুল তুলে

নীল কাপড়ের পর্দা

তোমার মাথা ঢেকে রেখেছে ।

আমার তন্দ্রার ভেতর দিয়ে আমি তোমার পবিত্র সদৃশকে দেখি !

ভালোবাসা ! গান ! আমার রানি !

তোমার ফ্যাকাশে চোখের মণিতে কি পুরুষের এক প্রেত

খেলার সময়ে 

আমাকে যাচাই করছিল

দেয়ালের পলেস্তরার ওপরে ?

গোঁ ধরে থেকো না, প্রভাতসঙ্গীত গাইতে দাও

তোমার ভবঘুরে হৃদয় থেকে, আমাকে একা একটা চুমু দাও...।

হা ঈশ্বর, আমার গলা চিরে যাবে

যদি আমি তোমাকে চটকিয়ে হৃদয়ে পুরতে না পাই

আর ধর্ষণ করতে পারি !

«

ক্ষমা করুন ঈশ্বর কেননা আমি পাপ করেছি !

আমার কন্ঠস্বরের অশ্রু, আমার জ্বর, আমার দুঃখদুর্দশা

ফ্রান্সের মতন সুন্দর দেশকে ছেড়ে পালিয়ে যাবার পাপ

তা কি যথেষ্ট নয়, প্রভু, আমার বিছানায় গিয়ে

আশায় উপুড় হয়ে পড়ার ?

আপনার সুগন্ধী বাহুতে, আপনার তুষারের দুর্গে !

অন্ধকার জগতের প্রভু, আমি এখনও জানি কেমন করে প্রার্থনা করতে হয়

হে পিতা, এটা আমিই, যে এক সময়ে কেঁদে বলেছিল :

“সর্বোচ্চ স্বর্গের জয়, 

চৌর্য ও ব্যবসায়ের পৌরাণিক 

আলতো পায়ের গ্রিক দেবতা হারমেসের জয়

যিনি আমাকে রক্ষা করেন !”

মৃত্যু থেকে আমি শান্তি আর দীর্ঘ ঘুম চাইছি

ঈশ্বরের সিংহাসন রক্ষদের গান

তাদের সুগন্ধ, তাদের গলার মালা

বড়ো তপ্ত পোশাকে ক্ষুদে দেবদূতদের লোমাবরণ

আমি চাই চাঁদহীন সূর্যহীন রাত

বিস্তীর্ণ প্রান্তরের আকাশে ।

আমার মাথা গিলোটিনে কাটার সময় এটা নয়

আমি আরামে ঘুমোতে পারি ।

ওপরের ছাদে, আমার অলস প্রেম

আমার সোনালি বালক, আমার মুক্তা জেগে উঠবে

ভারি জুতো দিয়ে পিষে ফেলার জন্য

ন্যাড়া করোটির ওপর ।

«

যেন পাশের বাড়িতে কোনো মৃগিরোগি বাস করে

জেলখানাটা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে ঘুমোয়

একজন মৃত মানুষের গানের অন্ধকারে ।

জলে ভাসমান নাবিকরা যদি বন্দর দেখতে পায়

তাহলে আমার লোকলস্কর উড়াল নেবে

আরেক 

আমেরিকার দিকে ।