মিরোস্লাফ হোলুপ-এর কবিতা ( ১৯২৩ - ১৯৮৮ )
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
প্রেম
একশো মাইল
দেয়াল থেকে দেয়াল ।
এক অনন্তকাল ও অর্ধেক নিশিপালন
তুষারের চেয়েও উদাস ।
অজস্র শব্দ
পুরোনো পথরেখা
বালিতে প্ল্যাটিপ্লাসের মতন।
একশো বই যা আমরা লিখিনি
একশো পিরামিড যা আমরা গড়িনি।
ঝেঁটিয়ে একত্র-করা জিনিসপত্র ।
ধুলো ।
তিক্ত
জগতের আরম্ভের মতন ।
বিশ্বাস করো যখন আমি বলি
ব্যাপারটা সুন্দর ছিল ।
হসটেলের বিলডিঙে
মাটির ঢিবির ওপরে,
ইঁটের সাজানো প্রতিক্রিয়ায়,
কংক্রিটের ক্ষয়াটে দুধদাঁতের মাঝে
এখনই জন্মেছে
এক ধূসর, দুই-থাক
কফিন ।
( পা পুঁছে নিন )
প্রবেশ
এক মহিমাময় জাদুঘর
পিত্ত পাথুরির
শূন্যতার ।
( শান্তি বজায় রাখুন )
নলের আঙুলগুলো গর্তগুলো অনুসন্ধান করে
আর সোমবার সকালের চেঁচামেচি
সব জায়গায়
( থুতু ফেলবেন না )
মালপত্র রাখার জায়গার ওপরে
একটাই টুনিআলো ক্ষোভ দেখায়
ঝোলানো
কংক্রিটের আকাশ থেকে ।
আর এক পেরেকের ওপরে
মাংসে ঢোকানো
জাহাজডুবির মোজা আর বক্ষবন্ধনি
শুকোয় ।
( করিডরে ঘোরাঘুরি করবেন না )
আমাদের দেখা হল
মেয়েদের চোখে তাকিয়ে,
দেয়ালগায়ে ছারপোকার মতন বেড়িয়ে
আর আমরা জানতে চাইলুম,
ভালোবাসা কাকা বলে
আর
আমরা কি তাড়াতাড়ি কমবয়সী হবো ?
শূন্যে লাফিয়ে পড়ার দৈহিক গঠনতন্ত্র
ক. লিফ্ট ব্যবহার করুন
ওপরে যাওয়ার
অনুমতি আছে, শর্ত হল
খ. লিফ্ট ব্যবহার করুন
নিচে যাবার
অনুমতি নেই, শর্ত হল
গ. লিফ্টের ব্যবহার
ওপরে যাওয়ার
ঘ. লিফ্টের ব্যবহার
নিচে যাবার জন্য নয়
ঙ. লিফ্টের ব্যবহার
ওপরে যাওয়ার
চ. লিফ্টের ব্যবহার
যাচ্ছে
ছ. লিফ্টের ব্যবহার
জ. হল নয়
ঝ. ব্যবহার
ঞ. ব্য
ত. আমি
দরোজা
যাও আর দরোজাটা খোলো।
হয়তো বাইরে রয়েছে
একটা গাছ, কিংবা একটা বন,
একটা বাগান,
কিঢবা এক ইন্দ্রজাল শহর ।
যাও আর দরোজাটা খোলো ।
হয়তো একটা কুকুর জঞ্জাল ঘাঁটছে ।
হয়তো তুমি একটা মুখ দেখতে পাবে,
কিংবা একটা চোখ,
কিংবা ছবি
একটা ছবির।
যাও আর দরোজাটা খোলো ।
যদি কুয়াশা থাকে
তা কেটে যাবে ।
যাও আর দরোজাটা খোলো ।
যদি সেখানে কেবল
অন্ধকার স্পন্দিত হয়
যদি সেখানে কেবল
ফাঁকা বাতাস থাকে,
এমনকি যদি
কিছুই না
থাকে সেখানে,
যাও আর দরোজাটা খোলো ।
অন্তত
সেখানে থাকবে
এক আকর্ষণ ।
ডানা
আমাদের রয়েছে
এক আণুবীক্ষনিক দৈহিক গঠনতন্ত্র
তিমিমাছের
এটা
দ্যায়
মানুষকে
নিশ্চয়তা
উইলিয়াম কারলস উইলিয়ামস
আমাদের রয়েছে
ব্রহ্মাণ্ডের মানচিত্র
জীবানুদের জন্য,
আমাদের রয়েছে
জীবানুদের মানচিত্র
ব্রহ্মাণ্ডের জন্য।
আমাদের রয়েছে
দাবা খেলার একজন গ্র্যাণ্ডমাস্টার
ইলেকট্রনিক সারকিটে তৈরি ।
কিন্তু সবার ওপরে
আমাদের রয়েছে
সামর্থ্য
মটরশুঁটি বাছার,
হাতে পেয়ালা নিয়ে,
খোঁজা
সঠিক স্ক্রুড্রাইভার
সোফার তলায়
কয়েক ঘণ্টা যাবত
তা
আমাদের দ্যায়
ডানা
মাছি
উইলো গাছের গুঁড়িতে বসেছিল মেয়েমাছি
লক্ষ করছিল
ক্রেসির যুদ্ধের একাংশ,
চেঁচামেচি,
শ্বাস নেবার চেষ্টা
গোঙানি,
মাড়ানো আর হুমড়ি খেয়ে পড়া
চোদ্দতম আক্রমণেরর
ফরাসি অশ্ববাহিনীর
মেয়েমাছিটি সঙ্গম করলো
এক কটাচোখ পুরুষ মাছির সঙ্গে
সে ভাদিনকোর্টের।
মেয়েমাছি নিজের দুই পা রগড়ালো
গিয়ে বসল এক পেটকাটা ঘোড়ার ওপর
গভীর চিন্তা করল
মাছিদের অমরত্ব সম্পর্কে ।
ময়লা ফেলে ডানায় ভর দিলো
নীল জিভের ওপরে
ক্লেরভাউয়ের ডিউকের ।
যখন স্তব্ধতা নেমে এলো
আর কেবল পচনের ফিসফাস
দেহগুলোর চারিপাশে আলতো পাক খাচ্ছিল
আর কেবল
কয়েকটা হাত আর পা
গাছের তলায় তখনও নড়ছিল,
মেয়েমাছি ডিম পাড়া আরম্ভ করল
একটিমাত্র চোখে
য়োহান উহরের,
রাজকীয় অস্ত্রাগারের রক্ষক।
আর এমনি করেই
মেয়েমাছিটিকে দ্রুত খেয়ে ফেলল
পলাতকরা
এসত্রিজের আগুন থেকে ।
নেপোলিয়ান
খোকারা, কখন
নেরপোলিয়ান বোনাপার্ট জন্মেছিলেন,
জিগ্যেস করেন শিক্ষক ।
হাজার বছর আগে, ছাত্ররা বলে।
শত বছর আগে, ছাত্ররা বলে।
গত বছর, ছাত্ররা বলে ।
কেউই জানে না ।
খোকারা, কি করেছিলেন
নেপোলিয়ান বোনাপার্ট,
শিক্ষক জিগ্যেস করেন ।
একটা যুদ্ধ জয় করেছিলেন, ছাত্ররা বলে ।
একটা যুদ্ধ হেরেছিলেন, ছাত্ররা বলে।
কেউই জানে না ।
আমাদের মাংসঅলার একটা কুকুর ছিল
নেপোলিয়ান নামে,
বলল ফ্রান্তিসেক।
মাংসঅলাটা তাকে পেটাতো আর কুকুরটা মারা গেল
না খেতে পেয়ে
এক বছর আগে ।
সব ছাত্ররা এখন দুঃখিত
নেপোলিয়ানের জন্য ।
সতর্কতা
একটা গাছ প্রবেশ করে আর ঝুঁকে বলে :
‘আমি একটা গাছ।’
আকাশ থেকে একটা কালো অশ্রুফোঁটা পড়ে আর বলে:
‘আমি একটা পাখি।’
একটা মাকড়সার জালের তলার দিকে
ভালোবাসার মতন কিছু
কাছে আসে
আর বলে :
‘আমি স্তব্ধতা।’
কিন্তু ব্ল্যাকবোর্ডে বিস্তারিত
রাষ্ট্রিয় গণতন্ত্রের এক
শায়া-পরা ঘোড়া
আর বারবার বলে,
চতুর্দিকে কান নাড়িয়ে
বারবার বারবার বলে,
‘আমি ইতিহাসের ইনজিন
আর
আমরা সবাই
ভালোবাসি
প্রগতি
আর
সাহস
আর যোদ্ধার রোষ।’
ক্লাসঘরের দরোজার তলায়
গযায়
রক্তের এক সরু ধারা।
কেননা এখানেই আরম্ভ হয়
গণহত্যা
নিষ্পাপদের ।
No comments:
Post a Comment