Saturday, June 22, 2019

ভ্লাদিমির মায়াকভস্কি-র কবিতা 'মেরুদণ্ড বেণু' ( Backbone Flute ) । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

ভ্লাদিমির মায়াকভস্কির কবিতা ( ১৮৯৩ - ১৯৩০ ) ‘মেরুদণ্ড বেণু’
Backbone Flute কবিতার অনুবাদ  : মলয় রায়চৌধুরী
প্রস্তাবনা
তোমাদের সকলের জন্যে,
যারা কখনও আনন্দ দিয়েছিল বা এখনও দিচ্ছে,
আত্মার সমাধিতে প্রতিমাদের দ্বারা সুরক্ষিত,
আমি তুলে ধরব, মদের এক পানপাত্রের মতো
উৎসবের অনুষ্ঠানে, খুলির কানায়-কানায় ভরা কবিতা ।
.
আমি প্রায়ই বেশি-বেশি ভাবি :
আমার জন্যে অনেক ভালো হতে পারতো
একটা বুলেট দিয়ে আমার সমাপ্তিকে  বিদ্ধ করে দেয়া ।
আজকের দিনেই,
হয়তো বা,
আমি আমার অন্তিম প্রদর্শন মঞ্চস্হ করছি।
.
স্মৃতি !
আমার মগজ থেকে সভাঘরে একত্রিত হয়
আমার প্রেমের অফুরান সংখ্যা
চোখ থেকে চোখে হাসি ছড়িয়ে দ্যায় ।
বিগত বিয়ের ফেস্টুনে রাতকে সাজাও।
দেহ থেকে দেহে ঢেলে দাও আনন্দ ।
এই রাত যেন কেউ ভুলতে না পারে ।
এই অনুষ্ঠানে আমি বেণু বাজাব ।
বাজাবো আমার নিজের মেরুদণ্ডে ।
.

বড়োবড়ো পা ফেলে আমি মাড়িয়ে যাচ্ছি দীর্ঘ পথ ।
কোথায় যাবো আমি, নিজের ভেতরের নরকে লুকোবো ?
অভিশপ্ত নারী, কোন স্বর্গীয় কার্যাধ্যক্ষ
তার কল্পনায় তোমাকে গড়েছে ?!
আনন্দে মাতার জন্য পথগুলো অনেক বেশি সঙ্কীর্ণ ।
ছুটির দিনের গর্ব আর শোভাযাত্রায় জনগণ বেরিয়ে পড়েছে রবিবারের সাজে।
আমি ভাবলুম,
ভাবনাচিন্তা, অসুস্হ আর চাপচাপ
জমাটবাঁধা রক্ত, আমার খুলি থেকে হামাগুড়ি দিয়েছে ।
.
আমি,
যাকিছু উৎসবময় তার ইন্দ্রজালকর্মী,
এই উৎসব বাঁটোয়ারা করার কোনো সঙ্গী নেই।
এবার আমি যাবো আর ঝাঁপাবো,
নেভস্কির পাথরগুলোতে ঠুকবো আমার মগজ !
আমি ঈশ্বরনিন্দা করেছি ।
চিৎকার করে বলেছি ঈশ্বর বলে কিছু নেই,
কিন্তু নরকের অতল থেকে
ঈশ্বর এক নারীকে অবচিত করলেন যার সামনে পর্বতমালা
কাঁপবে আর শিহরিত হবে :
তিনি তাকে সামনে নিয়ে এলেন আর হুকুম দিলেন :
একে ভালোবাসো !
.
ঈশ্বর পরিতৃপ্ত ।
আকাশের তলায় এক দুরারোহ পাআড়ে
এক যন্ত্রণাকাতর মানুষ পশুতে পরিণত হয়ে বিদ্ধস্ত হয়েছে ।
ঈশ্বর হাত কচলান ।
ঈশ্বর চিন্তা করেন :
তুমি অপেক্ষা করো, ভ্লাদিমির !
যাতে তুমি জানতে না পারো নারীটি কে,
তিনি ছিলেন, নিঃসন্দেহে তিনি,
যিনি নারীটিকে একজন বাস্তব স্বামী দেবার কথা ভাবলেন   
আর পিয়ানোর ওপরে মানুষের স্বরলিপি রাখলেন ।   
কেউ যদি হঠাৎ পা-টিপে-টিপে শোবার ঘরের দরোজায় যেতো
আর তোমার ওপরের ওয়াড়-পরানো লেপকে    আশীর্বাদ করতো,
আমি জানি
পোড়া পশমের গন্ধ বেরোতো,
আর শয়তানের মাংস উদ্গীরণ করতো গন্ধকের ধোঁয়া।
তার বদলে, সকাল হওয়া পর্যন্ত,
আতঙ্কে যে ভালোবাসবার জন্য তোমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে
আমি ছোটাছুটি করলুম
আমার কান্নাকে কবিতার মুখাবয়ব দিলুম,
উন্মাদনার কিনারায় এক হীরক-কর্তনকারী।
ওহ, কেবল এক থাক তাসের জন্য !
ওহ, মদের জন্য
শ্বাসে বেরোনো হৃদয়কে কুলকুচি করার জন্য ।
.
তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই !
তোমাকে আমি চাই না !
যাই হোক না কেন,
আমি জানি
আমি তাড়াতাড়ি কর্কশ চিৎকারে ভেঙে পড়ব !
.
যদি সত্যি হয় যে তোমার অস্তিত্ব আছে,
ঈশ্বর,
আমার ঈশ্বর,
যদি নক্ষত্রদের জাজিম তোমারই বোনা হয়,
যদি, প্রতিদিনকার এই
অতিরক্ত যন্ত্রণা,
তুমি চাপিয়ে দিয়েছ নিগ্রহ, হে প্রভু ;
তাহলে বিচারকের শেকল পরে নাও ।
আমার আগমনের জন্য অপেক্ষা করো।
আমি সময়কে মান্যতা দিই
এবং এক দিনও দেরি করব না ।
শোনো,
সর্বশক্তিমান ধর্মবিচারক !
আমি মুখে কুলুপ দিয়ে রাখব ।
কোনো কান্না
আমার কামড়ে-ধরা ঠোঁট থেকে বেরোবে না।
ঘোড়ার ল্যাজের মতো ধুমকেতুর সঙ্গে আমাকে বেঁধে রাখো,
আর ঘষটে নিয়ে চলো আমাকে,
নক্ষত্রদের গ্রাসে ছিন্ন হয়ে ।
কিংবা হয়তো এরকম :
আমার আত্মা যখন দেহের আশ্রয় ছেড়ে
তোমার বিচারব্যবস্হার সামনে নিজেকে উপস্হিত করবে,
তখন কটমট ভ্রু কুঁচকে,
তুমি,
ছায়াপথের দুই পাশে পা ঝুলিয়ে ছুঁড়ে দিও ফাঁসির দড়ি,
একজন অপরাধীর মতন আমাকে গ্রেপ্তার করে ঝুলিয়ে দিও ।
তোমার ইচ্ছানুযায়ী যা হয় কোরো।
যদি চাও আমাকে কেটে চার টুকরো করো।
আমি নিজে তোমার হাত ধুয়ে পরিষ্কার করে দেবো ।
কিন্তু এইটুকু করো--
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো !---
ওই অভিশপ্ত নারীকে সরিয়ে দাও
যাকে তুমি আমার প্রিয়তমা করেছো !
.
বড়ো বড়ো পা ফেলে আমি মাড়িয়ে যাচ্ছি দীর্ঘ পথ ।
কোথায় যাবো আমি, নিজের ভেতরের নরকে লুকোবো ?
অভিশপ্ত নারী, কোন স্বর্গীয় কার্যাধ্যক্ষ
তার কল্পনায় তোমাকে গড়েছে ?!
.

উভয় আলাশকে,
ধোঁয়ায় ভুলে গিয়েছে তার রঙ ছিল নীল,
আর মেঘগুলো দেখতে ছেঁড়াখোড়া উদ্বাস্তুদের মতো,
আমি নিয়ে আসবো আমার শেষতম ভালোবাসার ভোর,
কোনো ক্ষয়রোগীর রক্তবমির মতন উজ্বল।
উল্লাসময়তায় আমি ঢেকে ফেলবো গর্জন
সমাগমকারীদের,
বাড়ি আর আরাম সম্পর্কে বিস্মৃত।
পুরুষের দল,
আমার কথা শোনো !
পরিখা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরোও :
তোমরা এই যুদ্ধ আরেকদিন লোড়ো।
.
এমনকি যদি,
মদ্যপানের গ্রিক দেবতার মতন রক্তে লুটোপুটি খাও,
এক মত্ত লড়াই তার শীর্ষে পৌঁছে গেছে--
তবুও ভালোবাসার শব্দেরা পুরোনো হয় না ।
প্রিয় জার্মানরা !
আমি জানি
গ্যেটের গ্রেশেন নামের নারী
তোমার ঠোঁটে উৎসারিত হয় ।
ফরাসিরা
বেয়োনেটের আঘাতে হাসিমুখে মারা যায় ;
মৃদু হাসি নিয়ে বিমানচালক ভেঙে পড়ে ;
যখন তাদের মনে পড়ে
তোমার চুমুখাওয়া মুখ,
ত্রাভিয়াতা ।
.
কিন্তু গোলাপি হাঁ-মুখের জন্য আমার আগ্রহ নেই
যা বহু শতক এতাবৎ কামড়েছে ।
আজকে আমাকে জড়িয়ে ধরতে দাও নতুন পা!
তুমি আমি গাইবো,
লালমাথায়
রুজমাখা ঠোঁটে ।

হয়তো, এই সময়কে কাটিয়ে উঠে
যা বেয়োনেটের ইস্পাতের মতন যন্ত্রণাদায়ক,
পেকে-যাওয়া দাড়িতে বহু শতক
কেবল আমরাই থাকবো :
তুমি
আর আমি,
শহর থেকে শহরে তোমার পেছন পেছন ।
সমুদ্রের ওই পারে তোমার বিয়ে হবে,
আর রাতের আশ্রয়ে প্রতীক্ষা করবে---
লণ্ডনের কুয়াশায় আমি দেগে দেবো
তোমায় পথলন্ঠনের তপ্ত ঠোঁট ।
এক গুমোটভরা মরুভূমিতে, যেখানে সিংহেরা সতর্ক,
তুমি তোমার কাফেলাদের মেলে ধরবে--
তোমার ওপরে,
হাওয়ায় ছেঁড়া বালিয়াড়ির তলায়,
আমি পেতে দেবে সাহারার মতন আমার জ্বলন্ত গাল।
.
তোমার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি খেলিয়ে
তুমি চাউনি মেলবে
আর দেখবে এক সৌম্যকান্তি বুলফাইটার !
আর হঠাৎ আমি,
এক মরণাপন্ন ষাঁড়ের চোখের জন্য,
ধনী দর্শকদের দিকে আমার ঈর্ষা ছুঁড়ে দেবো ।
.
যদি কোনো সেতু পর্যন্ত তুমি তোমার সংশয়াপন্ন পা নিয়ে যাও,
এই ভেবে
নিচে নামা কতো ভালো--
তাহলে সে আমিই,
সেতুর তলা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সিন নদী,
যে তোমাকে ডাকবে
আমার ক্ষয়াটে দাঁত দেখিয়ে ।
.
যদি তুমি, অন্য পুরুষের সাথে মোটর গাড়িতে দ্রুত চলে যাচ্ছো, পুড়িয়ে দাও
স্ত্রেলকা-পাড়া বা সোকোলনিকি অঞ্চল--
তাহলে সে  আমিই, উঁচুতে উঠছি,
চাঁদের মতন প্রত্যাশী আর আবরণমুক্ত,
যে তোমাকে আকাঙ্খায় আকুল করে তুলবে ।
.
তাদের প্রয়োজন হবে
আমার মতো এক শক্তিমান পুরুষ--
তারা হুকুম করবে :
যুদ্ধে গিয়ে মরো !
শেষ যে শব্দ আমি বলব
তা তোমার নাম,
বোমার টুকরোয় জখম আমার রক্তজমাট ঠোঁটে ।
.
আমার শেষ কি সিংহাসনে বসে হবে ?
নাকি সেইন্ট হেলেনা দ্বীপে ?
জীবনের ঝড়ের দাপটগুলোকে জিন পরিয়ে,
আমি প্রতিযোগীতায় নেমেছি
জগতের রাজত্বের জন্য
আর
দণ্ডাদেশ-পাওয়া কয়েদির পায়ের বেড়ি ।
.
আমি জার হবার জন্য নিয়তি-নির্দিষ্ট--
আমার মুদ্রার সূর্যালোকপ্রাপ্ত সোনায়
আমি আমার প্রজাদের হুকুম দেবো
টাঁকশালে ছাপ দিতে
তোমার চমৎকার মুখাবয়ব !
কিন্তু যেখানে
পৃথিবী হিমপ্রান্তরে বিলীন হয়,
নদী যেখানে উত্তর-বাতাসের সঙ্গে দরাদরি করে,
সেখানে আমি পায়ের বেড়িতে লিলির নাম আঁচড়ে লিখে যাবো,
আর  কঠোর দণ্ডাদেশের অন্ধকারে,
বারবার তাতে চুমু খাবো ।
.

তোমরা শোনো, যারা ভুলে গেছ আকাশের রঙ নীল,
যারা সেই রকম রোমশ হয়েছ
যেন জানোয়ার ।
হয়তো এটাই
জগতের শেষতম ভালোবাসা
যা ক্ষয়রোগীর রক্তবমির মতন উজ্বল ।
.

আমি ভুলে যাব বছর, দিন, তারিখ ।
কাগজের এক তাড়া দিয়ে নিজেকে তালাবন্ধ করে রাখব।
আলোকপ্রাপ্ত শব্দাবলীর যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে,
সৃষ্টি করব তোমায়, হে অমানবিক ইন্দ্রজাল !
.
এই দিন, তোমার কাছে গিয়ে,
আমি অনুভব করেছি
বাড়িতে কিছু-একটা অঘটন ঘটেছে ।
তোমার রেশমে কিছু গোপন করেছ,
আর ধূপের সুগন্ধ ফলাও হয়ে ছড়িয়েছে বাতাসে ।
আমাকে দেখে আনন্দিত তো ?
সেই “অনেক”
ছিল অত্যন্ত শীতল ।
বিভ্রান্তি ভেঙে ফেলল যুক্তির পাঁচিল ।
তপ্ত ও জ্বরে আক্রান্ত, আমি হতাশার স্তুপে আশ্রয় নিলুম ।
.
শোনো,
তুমি যা-ই করো না কেন,
তুমি শবকে লুকোতে পারবে না ।
সেই ভয়ানক শব্দ মাথার ওপরে লাভা ঢেলে দ্যায় ।
তুমি যা-ই করো না কেন,
তোমার প্রতিটি পেশীতন্তু
শিঙা বাজায়
যেন লাউডস্পিকার থেকে :
মেয়েটি মৃতা, মৃতা, মৃতা !
তা হতে পারে না,
আমাকে জবাব দাও ।
মিথ্যা কথা বোলো না !
( এখন আমি যাবো কেমন করে ? )
তোমার মুখাবয়বে তোমার দুই চোখ খুঁড়ে তোলে
দুটি গভীর কবরের ব্যাদিত অতল ।
.
কবরগুলো আরও গভীর হয় ।
তাদের কোনো তলদেশ নেই ।
মনে হয়
দিনগুলোর উঁচু মাচান থেকে আমি প্রথমে মাথা নামিয়ে লাফিয়ে পড়ব।
অতল গহ্বরের ওপরে আমি আমার আত্মাকে টেনে বাজিকরের দড়ি করে নিয়েছি
আর, শব্দদের ভোজবাজি দেখিয়ে, তার ওপরে টাল সামলাচ্ছি ।
.
আমি জানি
ভালোবাসা তাকে ইতিমধ্যে পরাস্ত করেছে ।
আমি অবসাদের বহু চিহ্ণ খুঁজে পাচ্ছি ।
আমার আত্মায় পাচ্ছি আমাদের যৌবন ।
হৃদয়কে আহ্বান জানাও দেহের উৎসবে ।
.
আমি জানি
আমাদের প্রত্যেককে এক নারীর জন্য চড়া দাম দিতে হবে ।
তুমি কি কিছু মনে করবে
যদি, ইতিমধ্যে,
তোমাকে তামাক-ধোঁয়ার পোশাকে মুড়ে দিই
প্যারিসের ফ্যাশনের বদলে ?
.
প্রিয়তমাষু,
প্রাচীনকালে যিশুর বার্তাবাহকদের মতন,
আমি হাজার হাজার পথ দিয়ে হাঁটবো ।
অনন্তকাল তোমার জন্য এক মুকুট তৈরি করেছে,
সেই মুকুটে আমার শব্দাবলী
শিহরণের রামধনুর জাদু তৈরি করে ।
.
হাতির দল যেমন শতমণ ওজনের খেলায়
পুরুর রাজার বিজয় সম্পূর্ণ করেছিল,
আমি তোমার মগজে ভরে দিয়েছি প্রতিভার পদধ্বনি ।
কিন্তু সবই বৃথা ।
আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে আনতে পারি না ।
.
আনন্দ করো !
আনন্দ করো,
এখন
তুমি আমাকে শেষ করে দিয়েছ !
আমার মানসিক যন্ত্রণা এতোটাই তীক্ষ্ণ,
আমি ছুটে চলে যাবো খালের দিকে
আর মাথা চুবিয়ে দেবো তার অপূরণীয় গর্তে ।
.
তুমি তোমার ঠোঁট দিয়েছিলে ।
তুমি ওদের সঙ্গে বেশ রুক্ষ ছিলে ।
আমি হিম হয়ে গেলুম ছুঁয়ে ।
অনুতপ্ত ঠোঁটে আমি বরং চুমু খেতে পারতুম
জমাট পাথর ভেঙে তৈরি সন্ন্যাসিনীদের মঠকে ।
.
দরোজায়
ধাক্কা ।
পুরুষটি প্রবেশ করলো,
রাস্তার হইচইয়ে আচ্ছাদিত ।
আমি
টুকরো হয়ে গেলুম হাহাকারে ।
কেঁদে পুরুষটিকে বললুম :
“ঠিক আছে,
আমি চলে যাবো,
ঠিক আছে !
মেয়েটি তোমার কাছেই থাকবে ।
মেয়েটিকে সুচারু ছেঁড়া পোশাকে সাজিয়ে তোলো,
আর লাজুক ডানা দুটো, রেশমে মোড়া, মোটা হয়ে উঠুক।
নজর রাখো যাতে না মেয়েটি ভেসে চলে যায় ।
তোমার স্ত্রীর গলা ঘিরে
পাথরের মতন, ঝুলিয়ে দাও মুক্তোর হার ।”
.

ওহ, কেমনতর
এক রাত !
আমি নিজেই হতাশার ফাঁস শক্ত করে বেঁধে নিয়েছি ।
আমার ফোঁপানি আর হাসি
আতঙ্কে শোচনীয় করে তুলেছে ঘরের মুখ ।
তোমার দৃষ্টিপ্রতিভার বিধুর মুখাকৃতি জেগে উঠলো ;
তোমার চোখদুটি জাজিমের ওপরে দীপ্ত
যেন কোনো নতুন জাদুগর ভেলকি দেখিয়ে উপস্হিত করেছে
ইহুদি স্বর্গরাজ্যের ঝলমলে রানিকে ।
.
নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায়
মেয়েটির সামনে যাকে আমি সমর্পণ করে দিয়েছি
আমি হাঁটু গেড়ে বসি ।
রাজা অ্যালবার্ট
তাঁর শহরগুলোকে
সমর্পণের পর
আমার তুলনায় ছিলেন উপহারে মোড়া জন্মদিনের খোকা ।
.
ফুলেরা আর ঘাসভূমি, সূর্যালোকে সোনার হয়ে গেল !
বাসন্তী হয়ে ওঠো, সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তির জীবন !
আমি চাই একটিমাত্র বিষ--
কবিতার একটানা গভীর চুমুক ।
.

আমার হৃদয়ের চোর,
যে তার সমস্তকিছু ছিনতাই করেছে,
যে আমার আত্মাকে পীড়ন করে চিত্তবিভ্রম ঘটিয়েছে,
গ্রহণ করো, প্রিয়তমা, এই উপহার--
আর কখনও, হয়তো, আমি অন্যকিছু সম্পর্কে ভাববো না ।
.
এই দিনটিকে উজ্বল ছুটির দিনে রাঙিয়ে দাও ।
হে ক্রুশবিদ্ধসম ইন্দ্রজাল,
তোমার সৃষ্টি বজায় রাখো ।
যেমনটা দেখছো--
শব্দাবলীর পেরেকগুচ্ছ
আমাকে কাগজে গিঁথে দাও ।
.

( ইংরেজিতে এই কবিতাটির অনুবাদ অনেকে করেছেন । তাদের মধ্যে প্রচুর তফাত । আমি বেছে নিয়েছি Live Journal-এর ভার্সান )


No comments:

Post a Comment