উইঘুর কবি ওসমানজান মুহেম্মেদ পাসআন-এর কবিতা
ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
ঠিক সেই মুহূর্তেও
আমি এক অন্ধের চোখবন্ধু ছিলুম
আর তোমাদের দলে গিয়েছিলুম
তোমরা নিশ্চয়ই ভেবেছিলে যে আমরা দেখতে পাই না
তোমাদের কয়েকজন বলেছিল যে আমাদের ঈশ্বরের বাড়ি দেখাবে,
তারপর তাড়িয়ে নিয়ে গেলে অট্টালিকায় যা কয়েক শতক পরে গড়ছো
আমরা গা করিনি
তোমাদের কয়েকজন আরেবার চিন্তা না করেই
বলল যে তোমাদের রোজনামচা আর স্ত্রীরা
তোমাদের পবিত্র রীতিনীতি
আমরা গা করিনি
তোমাদের কয়েকজন ভালোবাসার কথা বলা দাবি করেছিল
আর তোমাদের শরীরের গিঁটগুলো একত্র করেছিল
আর আমাদের ওপরে ফুলের ঝাড় পুঁতে সেখানেই গজিয়ে উঠতে দিয়েছিল
আমরা গা করিনি
বলেছিলুম, “এই ভাবেই আমাদের লেখালিখি হয়”,
তোমরা টেবিলের ওপরে বই রাখলে
আর আমাদের নিয়ে গেলে তার মধ্যে
আমরা দুই অন্ধ দেখলুম, কিন্তু
দোমড়ানো হলুদ দেয়ালে ছবি ঝুলছিল
পয়গম্বররা ছবিতে জল খুঁজছেন
পাহাড়চূড়ায় দেবদূতের দল, স্বর্গকে হাত দিয়ে ধরে রেখেছে
পোড়া নীড়ে প্রেমে চুমুক দিচ্ছে ফর্সা তরুণীরা
মাছেরা আকাশে রূপান্তরিত হবার জন্যে তৈরি
যে যাজকদের মদ খাবার তেষ্টা সমুদ্র থেকে আসে
কেউই সেখানে ছিল না
আমরা গা করিনি
তোমাদের কয়েকজন অদৃষ্টকে হাতে নিয়ে হাঁটছিলে,
আমাদের অদৃষ্ট পড়ে গেছে দেখে চমকে উঠেছিলে
তোমাদের হাতে যা ছিল তা ঘটা করে আমাদের দিলে
আমরা তোমাদের অদৃষ্ট গায়ে চাপিয়ে নিলুম
আমরা আগুনে পড়ে গিয়ে তা জ্বালিয়ে ফেললুম
…..আমরা গা করিনি
কিন্তু এমন একটা জিনিস ছিল যা তোমরা কেউই দিচ্ছিলে না
তোমাদের আত্মার তোরঙ্গে
একটা কালো বয়াম ছিল
আমাদের কাছে সেই বয়ামের চাবিকাঠি ছিল
তা ছিল আমাদের অন্ধ চোখে
আমরা সেই বয়ামের কথা বলতুম
তোমরা বললে যে আমরা অন্ধ
আে বললে, “আমাদের অমন বয়াম কখনও ছিল না,
তোমরা পর্যটক নও, তোমরা এমন ক্ষত যা কখনও সারবে না
তোমরা মানুষ নই, তোমরা শয়তানের টুকরো
তোমরা মোটেই অন্ধ নও, তোমরা গাঁটকাটা, তোমরা হলে অশান্তির দাঁড়কাক”,
তোমরা আমাদের তাড়িয়ে দিলে
আমরা গা করিনি
এটা সত্যি যে আমাদের ভালোবাসা নেই, অভিশাপও নেই
এটা সত্যি যে আমাদের ঐতিহ্য নেই, ভাঙচুরও নেই
এটা সত্যি যে আমাদের অদৃষ্ট নেই, অন্ধত্বও নেই
সেসব ব্যাপার নিয়ে আমরা গা করিনি
কিন্তু যা কৌতূহলোদ্দীপক মনে হলো
ঠিক সেই মুহূর্তে যে
আমাদের চোখ দেখতে পায়…..
No comments:
Post a Comment