Sunday, May 12, 2019

সিলভিয়া প্লাথ : টিউলিপ ফুল


images
টিউলিপ ফুলগুলো বেশ উত্তেজক, এখন এখানে শীতকাল ।
দ্যাখো সবকিছু কেমন ধবধবে, কতো শান্ত, কতো তুষার ঝরেছে ।
আমি শান্তিময়তা শিখছি, নিজের পাশে শুয়ে আছি চুপচাপ
আলো যেমন ছেয়ে আছে দেয়ালের গায়ে, এই বিছানায়, দুই হাতে ।
আমি কেউ নই ; বিস্ফোরণ নিয়ে আমার কিছু করবার নেই ।
আমি আমার নাম আর রোজকার পোশাক নার্সদের বিলিয়ে দিয়েছি
আর আমার ইতিহাস দিয়েছি অনুভূতি-নাশককে  দেহ শল্যচিকিৎসকদের ।
.
ওরা আমার মাথা বালিশ আর চাদরের মাঝে তুলে রেখেছে
দুই শাদা পাতার তলায় একটা চোখের মতো যা বন্ধ হবে না ।
মূর্খ চোখের তারা, ওকে সবকিছু নিজের ভেতরে পুরে নিতে হবে
নার্সরা পাশ দিয়ে যায় আর যায়, তারা  সমস্যা নয় কোনো,
শাদা টুপি-পরা শঙ্খচিলের মতো ডাঙায় উড়ে চলে যায় তারা
হাত দিয়ে নিজেদের কাজ করে, একজন হুবহু আরেকজনের মতন,
তাই বলা অসম্ভব ওরা সবসুদ্ধ মিলে কতোজন  ।
.
ওদের কাছে আমার দেহ একটা নুড়ি, জলের মতন শুশ্রুষা করে
ওপর দিয়ে বয়ে যাবে এমন ভাবে শুশ্রুষা করে, আস্তে পালিশ করে ।
ওদের উজ্বল ছুঁচ  আমায় অসাড়তা এনে দেয়,  ঘুমও পাড়িয়ে দেয় ।
এখন আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি ভার সামাল দিতে বিরক্ত—-
আমার রাতভরের পালিশ-করা চামড়ার বাক্স যেন ওষুধের গুলি রাখার ডিবে,
পারিবারিক ফোটো থেকে আমার স্বামী আর বাচ্চা হাসছে ;
ওদের হাসি আমার ত্বকে বসে যায়, ছোটোছোটো হাসিমুখ বঁড়শি ।
.
আমি সবকিছু ফসকে যেতে দিয়েছি, তিরিশ বছরের মালটানা নৌকা
আমার নাম আর ঠিকানায় একগুঁয়ে হয়ে ঝুলছে ।
আমার স্নেহের সম্পর্কগুলোকে ওরা ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছে ।
ভীত আর নগ্ন সবুজ প্লা্টিক-বালিশ ট্রলি থেকে
আমি আমার টি-সেট, লিনেনের থাক, আমার বইগুলোকে দেখলুম
দৃষ্টির বাইরে উধাও হয়ে যাচ্ছে, আর জল আমার মাথার ওপর দিয়ে বয়ে গেলো ।
আমি এখন একজন নান, এর আগে আমি এতো পবিত্র হইনি ।
.
আমি কোনো রকমের ফুল চাইনি, কেবল চেয়েছিলাম
দুই হাত ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে আর পুরো নিরুদ্বেগ ।
এটা কতো স্বাধীন, তোমার ধারণা নেই কতোটা স্বাধীন—
শান্তিময়তা এতো বিশাল যে তা তোমায় হতবুদ্ধি করে দেবে,
আর তা কোনো প্রশ্ন তোলে না, একটা নামের ট্যাগ, কয়েকটা তুচ্ছ গয়না ।
এটাই মৃতদের কাছাকাছি পৌঁছোয়, শেষ পর্যন্ত ; আমি তাদের কল্পনা করি
এর ওপরে তাদের মুখ বন্ধ করে দিই, খ্রিস্টদীক্ষার বড়ির মতন ।
.
প্রথমত টিউলিপফুল বড়ো বেশি লাল,  আমাকে বিক্ষত করে ওরা।
এমনকি উপহারের কাগজের ভেতর থেকে ওদের শ্বাস শুনতে পাই
মৃদুমন্দ, তাদের বাঁধা শাদা ফিতে থেকে বেরিয়ে, এক বিরক্তিকর শিশুর মতন ।
ওদের লালরঙ আমার জখমের সঙ্গে কথা বলে, আলাপ করে ।
তারা বেশ তনুকৃত : যেন ভেসে যায়, তবু আমাকে বিদ্ধস্ত রাখে ওরা,
তাদের আকস্মিক জিভ আর রঙ দিয়ে আমাকে বিপর্যস্ত করে,
আমার গলাকে ঘিরে ছিপের সুতায় বাঁধা লালরঙ সীসার সীতাহার ।
.
আমায় লক্ষ করেনি কেউ আগে, এখন লক্ষ রাখা হচ্ছে আমাকে ।
টিউলিপগুলো তাকায় আমার দিকে, আমার পেছনে জানালার দিকে
যেখানে দিনে একবার আলো মন্হরভাবে নিজেকে ছড়ায় আর ক্ষীণ হয়ে যায়,
এবং নিজেকে চেয়ে দেখি আমি, হাস্যকর, এক কাগজ-কাটা ছায়া
সূর্যের চোখ আর টিউলিপের চোখগুলোর মাঝে,
আর আমার মুখশ্রী তো নেই, আমি নিজেকে মুছে ফেলতে চেয়েছি ।
প্রাণবন্ত টিউলিপগুলো আমার অক্সিজেন শুষে নেয় ।
.
ওদের আসার আগে বাতাস যথেষ্ট শান্ত ছিল,
আসা আর যাওয়া, শ্বাসের পর শ্বাসে, হইচইহীন ।
তারপর টিউলিপগুলো তাদের ভরে তুললো তীব্র আওয়াজে ।
এখন তাদের চারিপাশে বাতাস থম মেরে থাকে আর ঘুরে-ঘুরে চলে যেন কোনো নদী
জলের তলায় মরচে পড়া লালরঙা ইঞ্জিন ঘিরে থম মারে ঘিরে পাক খায় ।
ওরা আমার মনোযোগ একাগ্র করে, তা ছিল বেশ সুখের
খেলছিল বিশ্রাম নিচ্ছিল আত্মসমর্পণহীন ।
.
দেয়ালগুলোও, নিজেদের উষ্ণ করে নিচ্ছে মনে হয় ।
টিউলিপগুলোকে খাঁচায় পোরা দরকার ছিল ভয়ঙ্কর জন্তুর মতো ;
আফ্রিকার বিশাল সিংহের মতো মুখ খুলছে ওরা,
আর আমি আমার হৃদয় সম্পর্কে সচেতন : তা খোলে আর বন্ধ হয়
স্রেফ আমাকে ভালোবাসার জন্যই তার লালরঙা পাত্র মঞ্জরিত হয় ।
যে জলের স্বাদ নিই তা গরম ও নোনতা, সমুদ্রের মতন,
আর স্বাস্হ্যের মতন এক বহুদূর দেশ থেকে আসে ।
                                                            Malay Roychoudhury

No comments:

Post a Comment