Thursday, May 23, 2019

গিয়ম অ্যাপলিনেয়ার-এর ( ১৮৮০ - ১৯১৮ ) কবিতা । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

গিয়ম অ্যাপলিনেয়ার-এর  ( ১৮৮০ - ১৯১৮ ) কবিতা
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
গোধুলী
শবদেহের ছায়া দিয়ে সরানো
ঘাসের ওপরে যেখানে দিন শেষ হয়
কোলোমবাইন মেয়েটা পোশাক খুলে
নিজের নগ্ন দেহকে পুকুরে আদর করে
গড়ে ওঠে নকল গোধুলী
যেসব খেলা দেখাবে তার বড়াই করে
আকাশে একটিও আঘাতের দাগ নেই
ছেয়ে আছে দুধসাদা নক্ষত্রমালায়
মঞ্চ থেকে ফ্যাকাশে মূক অভিনেতা
প্রথমে দর্শকদের সেলাম জানায়
ছন্নছাড়া দেশের মায়াবীরা
পরীর দল আর সন্মোহিনীরা
একটা তারা খসিয়ে আনে
ও হাত বাড়িয়ে তার দায়িত্ব নেয়
যখন কিনে এক ঝুলন্ত মানুষ তার পা দিয়ে
সুরে সুরে ঘণ্টাধ্বনি করে
অন্ধ লোকটা দোলনায় বাচ্চাকে দোলায়
হরিণী তার ছানাদের নিয়ে পাশ দিয়ে চলে যায়
বেটে লোকটা দুঃখে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে
কেমন করে জাদুবলে মূকঅভিনেতা দীর্ঘ হয়ে উঠছে


সাধ্বী ক্লোতিলদ
যে বায়ুপরাগিরা আর ফুলেরদল ফোঁপায়
বাগানের ঘাসে
যেখানে বিষাদবায়ু ঘুমায়
প্রণয় ও অবজ্ঞার মাঝে শুয়ে
আমাদের ছায়ারাও সেখানে ঘড়িমসি করে
মাঝরাত হয়তো এবার ছত্রভঙ্গ হবে
যে সূর্য ওদের দেহ কালো করে তোলে
তাদের সঙ্গে ডুবে যাবে অন্ধকারে
জীবন্ত শিশিরের প্রতিমার দল
চুল এলিয়ে দেবে
নিশ্চয়ই তুমি যাকে অনুসরণ করছো
মনোরম সেই ছায়াকেই তুমি চাও

শাদা তুষার
দেবদূতরা আকাশে দেবদূতের দল
একজন পরে আছে অফিসারের পোশাক
আরেকজন আজকে রাঁধুনির সাজে
অন্যেরা সবাই গান গায়
আশমানি রঙের সৌম্যকান্তি অফিসার
মিষ্টি বসন্তঋতু যখন ক্রিসমাস বহুদিন বিদায় নিয়েছে
সুন্দর সূর্য দিয়ে তোমাকে সাজাবে
এক মনোরম সূর্য
রাঁধুনি হাসের পালক ছাড়ায়
আহ ! তুষারপাতের ফিসফিস
হেমন্তে তোমাকে বড়ো মনে পড়ে
আমার প্রেমিকা আমার আলিঙ্গনে


বিদায়
আমি কুড়িয়েছি এই বিচিত্র গুল্মের ডাল
হেমন্তের মৃত্যু হয়েছে হয়তো তোমার মনে আছে
পৃথিবীতে  আমাদের দুজনার দেখা হবেনাকো কখনও
সময়ের সুগন্ধ বিচিত্র গুল্মের এই ডাল
মনে রেখো তোমার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকবো চিরকাল


দড়াবাজিকর
ঘাসে যারা পায়চারি করছে
পুরো বাগানে ঘুরে বেড়ায়
ধূসর সরাইখানার দরোজার সামনে
গির্জাহীন গ্রামের ভেতর দিয়ে
আর বাচ্চারা আগেই চলে গেছে
অন্যেরা স্বপ্ন দেখতে-দেখতে অনুসরণ করেছে
প্রতিটি ফলের গাছ অবসর নেয়
যখন তারা বহু দূর থেকে ইশারা করে
গোল বা চারচৌকো ভার বইতে হয় তাদের
ঢোল আর সোনার খঞ্জনি
বাঁদর আর ভাল্লুকরা জ্ঞানী জানোয়ার
এগোতে-এগোতে পয়সা কুড়োয়

গির্জার ঘণ্টা

আমার জিপসি যুবতী আমার প্রেমিকা
আমাদের ওপরে ঘণ্টাধ্বনি শোনে
আমরা অশেষ কামনায় ভালোবাসতুম
এই ভেবে যে কেউ আমাদের দেখতে পাবে না
কিন্তু আমরা এমন বোকার মতন লুকিয়েছিলুম
ঘণ্টাধ্বনি তাদের গানে
স্বর্গের উচ্চতা থেকে দেখতে পেতো
আর সবাইকে বলে দিতো
আগামিকাল সিপ্রিয়েন অঁরি
মারি উরসুলা ক্যাথারিন
পাঁউরুটিঅলার বউ তার বর
আর গেরট্রুড মানে আমার খুঢ়তুতো বোন
ওদের পাশ দিয়ে গেলে মুচকি হাসবে
জানি না কোথায় লুকোবো
তুমি তখন অনেক দূরে আর আমি কাঁদবো
হয়তো মরেই যাবো

যাযাবর মেয়ে
যাযাবর মেয়েটা আগেই জানতো
আমাদের দুজনার জীবন রাতের দুর্ভাগ্যে আক্রান্ত
আমরা ওকে বিদায় জানালুম আর তারপর
সেই গভীর জলাশয় থেকে আশার জন্ম হলো
প্রেম এক ভারি সক্রিয় ভাল্লুক
আমরা চাইলে দাঁড়িয়ে নাচতো
আর নীলপাখিটা খসিয়ে ফেললো নিজের পালক
আর ভিখারিরা হারিয়ে ফেললো তাদের “হুজুর”
আমরা ভালো করেই জানতুম যে আমরা নিন্দিত
কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভালোবাসা
আমাদের হাতে হাত দিয়ে ভাবতে শেখালো
যা যাযাবর মেয়েটি আগেই আঁচ করেছিল

চিহ্ণ
হেমন্তের চিহ্ণের রাজার পপতি আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
ছেড়ে যাবার সময়ে আমি ফলগুলোকে ভালোবাসি ফুলগুলোকে অপছন্দ করি
আমি যতো চুমু আজ পর্যন্ত খেয়েছি তার সবকয়টার জন্য আফশোষ করি
অতো তেতো আখরোট বৃষ্টিকে নিজের দুঃখের কথা বলে
আমার হেমন্তকাল শাশ্বত ও আমার আধ্যাত্মিক ঋতু
নিরুদ্দিষ্ট প্রেমিকাদের হাত সূর্যকে নিয়ে ভোজবাজি দেখায়
এক পত্নী আমায় অনুসরণ করে যা আমার মারাত্মক ছায়া
পায়রারা উড়াল দেয় এই সন্ধ্যায় তাদের শেষষতম


এক সন্ধ্যায়
আকাশ থেকে এক ঈগল নামে ধবধবে দেবদূতদের নিয়ে
আর তুমি আমার ভরণ-পোষণ করো
ওদের কাঁপতে দাও অনেকক্ষণ এই গ্যাসবাতিগুলো
প্রার্থনা প্রার্থনা করো আমার জন্য
শহরের ধাতব আর এটাই একমাত্র নক্ষত্র
তোমার নীল চোখে ডুবে গেছে
ট্রামগুলো যখন ফ্যালাশে আগুন ঝরিয়ে ছোটে
কিচিরমিচির পাখিদের ওপরে
আর তোমার চোখে আমার যে স্বপ্নগুলো কাঁপে
যা এক একা মানুষ বসে পান করে
নকল সকালের মতন লাল গ্যাসের শিখার তলায়
ওহো পোশাক পরা তোমার বাহু ওঠানো
শ্রোতাদের মুখ থেকে দ্যাখো বক্তার জিভ বেরিয়ে আছে
আত্মহত্যা করেছেন এক মায়াপুরুষ
ডুমুর গাছের খ্রিস্টশিষ্য ঝুলে আছেন আর ক্রমে শুকোচ্ছেন
চলো এই প্রণয়লীলা শেষমুহূর্ত পযফণ্ত খেলা যাক
ঘণ্টাদের সুস্পষ্ট ধ্বনি তোমার জন্মের ঘোষণা করে
দ্যাখো
রাসতাগুলোকে মালা পরানো হয়েছে আর খেজুরগাছ এগিয়ে আসছে
তোমার দিকে

চাঁদের আলো
উন্মাদের ঠোঁটে মধু-ঝরানো চাঁদ
ফলবাগান আর শহরগুলো আজ রাতে বড়োই লোভি
নক্ষত্রগুলো মৌমাছিদের মতন দেখা দেয়
এই জ্যোতির্ময় মধু যা আঙুরলতাদের মর্মাহত করে
কেননা এখন যাবতীয় মিষ্টতা আকাশ থেকে ঝরে
চাঁদের প্রতিটি রশ্মি মধুর রশ্মি
এখন লুকিয়ে আমি সবচেয়ে মধুর অ্যাডভেঞ্চারের আঁক কষি
মরু-অঞ্চলের মৌমাছিদের হুলের আগুনকে আমার ভয় করে
যা আমার হাতে প্রবঞ্চক রশ্মি এঁকে দ্যায়
আর তার চাঁদের-মধু নিয়ে যায় বাতাসের গোলাপের কাছে

অসুস্হ হেমন্তকাল

হেমন্তকাল অসুস্হ আর আদর পাচ্ছে
ঝড় যখন জপের মালায় বইবে তখন তুমি মারা যাবে
যখন তুষারপাত হয়েছে
ফলবাগানের গাছে
বেচারা হেমন্তকাল
শাদারঙে আর বৈভবে মৃত
তুষারের আর পাকা ফলের
আকাশের গভীরে
বাজপাখিরা কাঁদে
বেঁটে মানুষেরা সবুজ চুলে ভুতের দলের ওপরে
যারা কখনও ভালোবাসা পায়নি
বহুদূরের গাছের সারিতে
পুংহরিণরা গোঁঙাচ্ছে
আর কতো ভালোবাসি  হে ঋতু কতো ভালোবাসি তোমার গুরুগুরু শব্দ
ফল ঝরে পড়ে যা কেউ তোলে না
বাতাস বনাঞ্চল আন্দোলিত হচ্ছে
পাতায় পাতায় তাদের হেমন্তের কান্না
পাতাগুলো
তুমি চাপ দাও
জনগণ
যা বয়ে যাচ্ছে
জীবন
যা চলে যায়

হোটেল
ঘরের ভাড়া লাগবে না
যে যার নিজের
নতুন কেউ এলে
এক মাসের ভাড়া দেয়
মালিক সন্দেহ করে
তুমি ভাড়া দেবে কি না
লাট্টুর মতো
আমি পথে পাক খাই
গাড়িঘোড়ার আওয়াজ
পাশের ঘরের লোকটা চটা
যে বেশ কড়া
ইংলন্ডিয় ধোঁয়া ফোঁকে
আমাদের প্রিয় ভ্যালেরি
খোঁড়ায় আর মিচকি মিচকি হাসে
আমার পপার্থনায়
বিছানার পাশের টেবিলে
আর যতো লোকজন
এই হোটেলের
সব ভাষাগুলো জানে
ব্যাবেল মিনারের
চলো দরোজা বন্ধ করা যাক
দুটো করে তালা দেয়া হোক
আর যে যার আদর করুক
তার নিঃসঙ্গ ভালোবাসাকে

শিকারের শিঙা

আমাদের গল্পটা যেমন আকর্ষণীয় তেমনই বিয়োগান্তক
একজন স্বৈরাচারীর ভেঙচির মতন
নাটুকেপনার সম্ভাবনা নেই কিংবা জাদুর
কোনো বর্ণনা নেই যা উদাসীন
আমাদের প্রগাঢ় ভালোবাসাকে মর্মন্তুদ করে তোলে
আর টমাস ডি কুইনসি পান করছেন
আফিমের বিষ মিষ্টি আর পবিত্র
তাঁর বেচারি অ্যানি স্বপ্ন দেখতে লাগলো
আমরা চলে যাই আমরা চলে যাই সবাইকে যেতে হবে
আমি কখনও বা ফিরবো
স্মৃতিরা শিকারের শিঙা হায়
যাদের স্বরলিপি বাতাসের সঙ্গে মারা যাচ্ছে

ভালোবাসার জীবনে অন্তর্ঘাত
তোমার আলিঙ্গনে ভালোবাসা মারা গেছে
তার সঙ্গে যুদ্ধ তোমার কি মনে আছে
সে মারা গেছে তুমি আকর্ষণশক্তি ফিরিয়ে দাও
ও তোমার যুদ্ধ ফিরিয়ে দেবে
আরেকটা বসন্তঋতুর বসন্তঋতু চলেব গেলো
আমি তার যাবতীয় কোমলতা নিয়ে ভাবি
শেষ পর্যন্ত বিদায়ের ঋতু বিদায় নিয়েছে
তুমি তেমন অভিমানে ফিরে আসবে
◇◇◇◇
সন্ধ্যার যে আলো ফিকে হয়ে এসেছে
যেখান দিয়ে আমাদের বহু প্রণয়লীলা চলে গেছে
তোমার স্মৃতি পড়ে আছে শেকলবাঁধা
আমাদের যে ছায়া মারা যায় তা থেকে বেশ দূরে
স্মৃতিতে বাঁধা হে হাত
চিতার মতন জ্বলছে
যেখানে শেষ কালো ফিনিক্সপাখি
শ্বাস নেবার জন্য পূর্ণতাপ্রাপ্তি ফিরে আসে
আঙটার পর আঙটা শেকল ক্ষয়ে যায়
তোমার স্মৃতি থেকে আমাদের বঞ্চিত করে
মাচিরা তা শুনতে পায় যাদের বিদ্রুপ করো
আমি আবার তোমার পায়ের কাছে হাঁটুগেড়ে বসি
◇◇◇◇
তুমি আমার রহস্যকে এখনও অবাক করোনি
মৃতের গাড়ি আগেই চলে গেছে
আমাদের কাছে রেখে গেছে আফশোষ
আর কোনও ষড়যন্ত্র নেই নাহ
জলের কিনারায় গোলাপফুল ভাসে
মুখোশধারীরা ভিড়ের ভেতর দিয়ে চলে গেছে
তা আমার ভেতরে ঘণ্টার মতন কাঁপে
এই গূঢ় রহস্য তুমি এখন জানতে চাও
◇◇◇◇
সন্ধ্যা ঝরে পড়ে আর তা বাগানময়
নারীরা তাদের ইতিহাস বর্ণনা করেন
রাতকে যা অবজ্ঞা বাদ দিয়ে নয়
তাদের কালো চুলের রহস্য ফাঁস করে
ছোটো বাচ্চারা ছোটো বাচ্চারা
তোমাদের ডানা উড়ে চলে গেছে
কিন্তু তোমরা গোলাপ নিজেদের রক্ষা করতে জানো
ছুঁড়ে দাও তোমাদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুগন্ধ
কেননা এখন মামুলি চুরিচামারির সময়
পালকগুলোর ফুলের আর বিনুনির
ঝর্ণার উৎসকে একত্র করো যা মাঙানায়
গোলাপফুলেরা যাদের রক্ষিতা
◇◇◇◇
তুমি জলপরিষ্কার থেকে নেমে এলে
আমি তোমার চাউনিতে তাই ডুবে গেলুম
সেনা-জওয়ান যায় মেয়েটি হেলে থাকে
গুরে একটা গাছের ডাল ভাঙে
তুমি রাতের ঢেউগুলোয় ভাসো
আগুনের শিখা আমার নিজের হৃদয় ওলটানো
ওই চিরুনির কচ্ছপকোলের মতন রঙিন
যে ঢেউ তোমায় স্নান করায় তার প্রতিফলন ভালো
◇◇◇◇
ওহো আমার পরিত্যক্ত যৌবন মারা গেছে
শুকনো মালার মতন
এখন ঋতু আবার এসে পড়লো
সন্দেহের আর অবজ্ঞার
কভানভা দিয়ে গড়া চারণভূমি
এক নকল রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে
আর গাছের তলায় নক্ষত্রেরা ঝিকমিক করে তরোতাজা
একমাত্র লোক যে পাশ কাটালো সে একজন সঙ
ফ্রেমের কাচে ফাটল ধরেছে
এক হাওয়া অনিশ্চয়তায় সংজ্ঞায়িত
আওয়াজ আর চিন্তার মাঝে ঘোরাফেরা করে
‘হয়ে ওঠা’ আর স্মৃতির মাঝে
ওহো আমার পরিত্যক্ত যৌবন মারা গেছে
শুকনো মালার মতন
এখন ঋতু আবার এসে পড়লো
সন্দেহ আর অবজ্ঞার
Here the season comes again
Of suspicion and disdain

পশুদের কথামালা : অথবা অরফিয়াসের মিছিল

অরফিয়াস
সঞ্জীবনী ক্ষমতার সমাদর করুন
এবং বংশের আভিজাত্য :
কন্ঠস্বর যে আলো তৈরি করেছে এখানে আমাদের বুঝতে পারে
যে হারমেস ট্রিসমেজিসটাস ‘পিমানদের’ বইতে লিখেছিলেন ।

কচ্ছপ

হে বিভ্রম, থ্রাসের ইন্দ্রজাল থেকে !
আমার নিশ্চিত আঙুলগুলো তারে সুর তোলে ।
প্রাণীরা শব্দে পৌঁছে দ্যায়
আমার কচ্ছপের, আর যে গান আমি গাই ।

ঘোড়া
আমার রূঢ় স্বপ্ন জানতো তোমার পিঠে চড়া
আমার সোনা-রথের অদৃষ্ট হবে তোমার মনোরম গাড়ি
লাগাম ধরে থাকবে শক্ত করে প্রবল উত্তেজনা,
আমার ছন্দমালা, যাবতীয় কবিতার নকশা ।

তিব্বতি ছাগল
এই ছাগলের সলোম চামড়া এবং আরও
ওই সোনার তৈরি যা এতো কষ্ট দিলো
জভাসনকে যার দাম কপর্দকও নয়
যে থোকা থোকা চুল দিয়ে আমাকে নেয়া হয়েছে

সাপ

তুমি সৌন্দর্যের বিরুদ্ধে নিজেকে তুলে ধরো ।
আর কতোজন নারী তোমার নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন !
ইভ, ইউরিডাইস, ক্লিওপেট্রা :
আমি আরও তিন বা চারজনকে জানি এর পরে ।

বিড়াল
আমি চাই আমার বাসায় থাকতে :
একজন নারী যাঁর যুক্তিতর্ক আছে,
বইয়ের পাশ দিয়ে চলে গেল এক বিড়াল,
প্রতিটি সময়ের বন্ধু
সে না থাকলে আমি বাঁচতে পারব না ।

সিংহ
হে সিংহ, দুর্দশাগ্রস্ত ভাস্কর্য
শোচনীয়ভাবে বাছাই করা রাজাদের,
এখন তুমি কেবল খাঁচাতেই জন্মাও
হ্যামবুর্গে, জার্মানদের মাঝে ।

শশক
ভীত আর কামুক হয়োনা
শশক আর প্রণয়ীর মতন ।
বরং সবসময় তোমার মগজকে বুনতে দাও
পুর্ণ আঙ্গিক যা কল্পনাসাধ্য ।

খরগোশ
আরেকটা প্রতারকের কথা মনে আছে
যাকে আমি জীবন্ত ধরতে চাইবো ।
ঝোপের ভেতরে ও ঢুকে থাকে
কোমলতার দেশের চারণভূমিতে ।
উট
ওর চারটে উট নিয়ে
আলফারুবেরিয়ার ডন পেদ্রো
পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় আর সমাদর করে ।
ও যা করে আমিও তাই করতুম
যদি ওই চারটে উট আমার থাকতো ।

ইঁদুর
মিষ্টি দিন, সময়ের শেষ
আমার জীবন তুমি কুরে খাও, চাঁদের পর চাঁদ
ঈশ্বর ! এবার আমার আঠাশ বচর হবে,
মনে হব তার অনেকগুলো খারাপভাবে কাটানো ।

হাতি
আমি আমার মুখের ভেতরে ঐশ্বর্য রাখতে পারি,
যেম হাতি তার দাঁত ।
বহমান শব্দের দামে,
বেগুনি মৃত্যু !...আমি নিজের গৌরবকে কিনি ।

অরফিয়াস
এই ক্ষতিকর জাতটাকে দ্যাখো
এর হাজারটা পা, এর একশো চোখ :
গুবরেপোকা, কীট, উকুন
আর আরও বিস্ময়কর জীবানু
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য থেকেও
আর রোজামুণ্ডের প্রাসাদ !

গুটিপোকা
কাজ আমাদের ধনী করে ।
বেচারা কবির দল, খেটে মরো !
গুটিপোকার অবিরাম দীর্ঘশ্বাস
মনোরম প্রজাপতি হয়ে ওঠে ।

মাছি
যে গানগুলো আমাদের মাছিরা জানে
তাদের নরওয়েতে শেখানো হয়েছিল
মাছির উড়ালকে তারা বলে
তুষারের দৈবতা ।

এঁটুলি
এঁটুলিরা, বন্ধুগণ, প্রেমিকাও বটে,
আমাদের যারা ভালোবাসে কতো নিষ্ঠুর !
আমাদের রক্ত তাদের দেহ থেকে ঝরে
তার মানে প্রিয়তমারা  জঘন্য ।

ঘাসফড়িঙ
এই যে রোগা ঘাসফড়িঙ
যে খাদ্য সন্ত জনকে খাইয়েছিল ।
আমার কবিতাও সেরকম হোক
সবচেয়ে ভালো মানুষদের জন্য উৎসব ।

অরফিয়াস
ওর হৃদয় ছিল টোপ : স্বর্গ ছিল পুকুর !
কেননা, জেলেদের জন্য, মিষ্টিজল বা নোনাজলের ফসল
তাঁর সমান, আঙ্গিকে হোক বা খোরাক হিসাবে,
যেই মনোরম দৈব মাছ, যিশু, আমার ত্রাণকারী নাকি ?

শুশুক
শুশুকরা, সমুদ্রে খেলছে
ঢেউগুলো বড়োই আঠালো
আমার আনন্দ কি কখনও লাফিয়ে ওঠে ?
তবু জীবন কতো নিষ্ঠুর ।

অক্টোপাস
ওপরে আকাশে ওর কালি ছুঁড়ে মারে,
যাকে ভালোবাসে তার রক্ত চোষে
আর তা বেশ স্বাদু মনে হয় ওর,
নিজেই এক রাক্ষস, হিংস্র ।

জেলিফিশ
মেডুসার দল, ভয়ঙ্কর মাথা
তাতে বেগুনি রঙের চুল
তুমি ঝড়কে পছন্দ করো
আর আমিও তাকে পছন্দ করি ।

লবস্টার
অনিশ্চয়তা, হে আমার পরমানন্দ
তুমি আর আমি আমরা যাই
যেমন লবস্টাররা সামনে দিকে যায়, বাস্তবিকই
পেছনদিকে, পেছনদিকে, হে ।

পোনামাছ
তোমার পুকুরে, আর তোমাদের পুকুরে,
পোনামাছ, তুমি সত্যিই অনেকদিন বাঁচো !
তা কি এই জন্য যে মৃত্যু মুক্তি দিতে ভুলে যায়
তোমাদের মাছেদের দৌর্মনস্য থেকে ।

অরফিয়াস
মাছরাঙা মাদিদের,
প্রেম, ফোসলানো রাক্ষসীরা,
তারা মারাত্মক গান জানে
বিপজ্জনক আর অমানবিক ।
ওই অভিশপ্ত পাখিদের শুনো না
স্বর্গীয় দেবদূতদের শব্দাবলী ।

কুহকিনী সাইরেন
আমি কি জানি তোমার অবসাদ কোথা থেকে আসে, কুহকিনী,
যখন তুমি নক্ষত্রদের নীচের দুঃখদুর্দশায় ভোগো ?
সমুদ্র, আমো তোমার মতন, ভাঙা কন্ঠস্বরে ঠাশা,
আর আমার জাহাজেরা, গান গেয়ে, বছরদের নামকরণ করে ।

পায়রা
পায়রা, প্রেম আর আত্মা দুইই
যে যিশুকে বিপদে ফেলেছিল,
তোমার মতন আমিও একজন মেরিকে ভালোবাসি
আর তাই তাকে বিয়ে করতে চাই ।

ময়ূর
তার পাখনা মেলতে, এই পাখি
যার পালক মাটিতে ছড়িয়ে থাকে, আমার ভয় করে,
আগের থেকেও মনোরম দেখায়,
কিন্তু তার পেছনদিক চাপা দেয়া থাকে না ।

পেঁচা
বেচারা আমার হৃদয় একটা পেঁচা
কখনও উউ করে, উউ করে না, আবার উউ করে ।
রক্তের, কামনার, ওই মরদপাখি ।
যারা আমায় ভালোবাসে তাদের  প্রশংসা করি, আমিও ।

আইবিস
হ্যাঁ, ভীতিকর ছায়াদের আমি কাটিয়ে উঠব
হে নিশ্চিত মৃত্যু, তবে তাই ওক !
লাতিন নশ্বর ভয়ঙ্কর শব্দ,
আইবিস, নীলনদের নিবাসী পাখি ।

ষাঁড়
স্বর্গীয় দেবদূত বন্দনাগান গায়
স্বর্গোদ্যানের যেখানে, দেবদূতদের সঙ্গে
আমরা আরেকবার বসবাস করব, বন্ধুগণ,
যখন শুভ ঈশ্বর তাঁর অনুমতি দেবেন।

ঋতুগুলো
তা ছিল পবিত্র সময় আমরা সমুদ্রতীরে
ভোরবেলা বেরিয়ে পড়তুম জুতোহীন হ্যাটহীন টাইহীন
আর ব্যাঙের জিভের দ্রুতি নিয়ে পৌঁছোতুম
পাগল আর জ্ঞানীদের হৃদয়কে জখম করে দিয়েছিল প্রেম

তুমি কি ঘোড়সওয়ারকে চেনো যখন ও পাশ দিয়ে গেলো
তখন ও সৈন্যবাহিনীর সদস্য ছিল
তুমি কি ঘোড়সওয়ারকে চেনো যখন ও পাশ দিয়ে গেলো
তখন ও কারিগর ছিল
যুদ্ধে

তা ছিল পবিত্র সময় ডাক-শোনার
আমরা বাসের ভিড়ের চেয়ের ঠাশাঠাশি ছিলুম
আর নক্ষত্রেরা চলে-যাওয়াকে অনুকরণ করতো ঝিনুকেরা
যখন রাতের বেলায় কামানগুলো চালিয়ে আনা হতো

তুমি কি ঘোড়সওয়ারকে চেনো যখন ও পাস দিয়ে গেলো
তখন ও  সৈন্যবাহিনীর সদস্য ছিল
তুমি কি ঘোড়সওয়ারকে চেনো যখন ও পাশ দিয়ে গেলো
তখন ও কারিগর ছিল
যুদ্ধে

তা ছিল পবিত্র সময় দিন ও রাত মিশে যাচ্ছিল
স্ট্যু রাঁধার বাসন ফাঁস করছিল আমাদের খোঁড়া ট্রেঞ্চ
অ্যালুমিনিয়াম পেরেকগুলো যা তুমি ছড়িয়ে রেখেছিলে
সমস্ত দিনকে অচেনা বৃত্তে নরম করে তলছিল

তুমি কি ঘোড়সওয়ারকে চেনো যখন ও পাশ দিয়ে গেলো
তখন ও সৈন্যবাহিনীর সদস্য ছিল
তুমি কি ঘোড়সওয়ারকে চেনো যখন ও পাঠশ দিয়ে গেলো
তখন ও কারিগর ছিল
যুদ্ধে

তা ছিল পবিত্র সময় যুদ্ধ হয়েই চলেছে
বন্দুকধারীরা বছরের একটা অংশ সারিদিয়ে হেঁটেছে
জঙ্গলে নিরাপদ চালক শুনতে পায়
এক অজানা নক্ষত্র গানটা গেয়েই চলেছে

তুমি কি ঘোড়সওয়ারকে চেনো যখন ও পাশ দিয়ে গেলো
তখন ও সৈন্যবাহিনির সদস্য ছিল
তুমি কি ঘোড়সওয়ারকে চেনো যখন ও পাশ দিয়ে গেলো
তখন ও কারিগর ছিল
যুদ্ধে

মিহাবু সেতু
মিহাবু সেতুর তলা দিয়ে সিন নদী বয়ে চলে
আমাদের ভালোবাসার কথা বলতে হলে
আমি কি তাহলে স্মরণ করব কেমন করে
প্রতিটি দুঃখের পর আনন্দ পুনরায় ফেরে

রাত চলে আসুক সময়ের কাঁসর বাজিয়ে
দিন পাশ দিয়ে চলে যায়  আমি এখানে ঠায় দাঁড়িয়ে

হাতে হাত মুখোমুখি এইখানে থাকা যাক
যখন নীচের দিকে ধরে থাক
আমাদের আলিঙ্গন-সেতু
ঢেউরা ক্লান্ত আমাদের অনন্ত চাউনির হেতু

রাত চলে আসুক সময়ের কাঁসর বাজিয়ে
দিন পাশ দিয়ে চলে যায় আমি থাকি ঠায় দাঁড়িয়ে

যেভাবে নদীর স্রোত সেইভাবে প্রেমও চলে যায়
ভালোবাসা চলে যায়
জীবন বড়োই  দীর্ঘ আর কাটে ধীরে
কেন জীবনের আশা এরকম নিষ্ঠুর আঘাত দিতে পারে

রাত চলে আসুক সময়ের কাঁসর বাজিয়ে
দিন পাশ দিয়ে চলে যায় আমি থাকি ঠায় দাঁড়িয়ে

দিনগুলো সপ্তাহেরা  আমাদের জ্ঞানের সীমা ছেড়ে যায়
সময়ের চলে যাবার পর যেরকম
ভালোবাসা ফেরে না সেরকম
মিহাবু সেতুর তলা দিয়ে সিন নদী বয়ে যায়

রাত চলে আসুক সময়ের কাঁসর বাজিয়ে
দিন পাশ দিয়ে চলে যায় আমি থাকি ঠায় দাঁড়িয়ে


No comments:

Post a Comment