Monday, May 20, 2019

জুল লাফর্গ-এর কবিতা ( ১৮৬০ - ১৮৮৭ ) । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী



জুল লাফর্গ-এর কবিতা ( ১৮৬০ - ১৮৮৭ )   

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

কবির ভ্রুণের অন্ত্যেষ্টিকালীন গান
আর আমোদ-প্রমোদ চাই না ! যথেষ্ট হয়েছে !
এগোও, আর রাতের মতন আঠালো এই শেকড়গুলো ছিঁড়ে ফ্যালো,
মায়ের মাধ্যমে, শাঁসের জন্য ভালোবাসা, আলোর প্রতি,
উজ্বলতার সমৃদ্ধ করুণাময় পুংকেশরের প্রতি
উদীয়মান সূর্য !

--প্রত্যেকের সময় আসে, আর এখন আমি তৈরি
আমার অসম্পাদিত ধাঁচের নরকের সীমান্ত থেকে জ্যোতির্ময়তার জন্য           

এগোও ! আড়াল ভেঙে ফ্যালো !
শ্লেষ্মার এই নিষ্পাদপ প্রান্তর থেকে সঞ্চয়িত, সাহসে সাঁতরিয়ে
সূর্যকে শুষে নেবার জন্য, এবং, সুনার দুধে মাতাল,
গড়িয়ে-দেয়া স্বর্গের ভেতর দিয়ে মেঘেদের স্তনে চুমুর লালা মাখানো
আর বহুদূরে  বেড়াতে যাওয়া !

--অন্য দিকে, আমি এক আত্মা হয়ে উঠব যে অন্ধভাবে-ভালোবাসবে
পেটিকোটের ভেতর দিয়ে ওড়ানো টাটকা বাতাসের ওপর !

এগোও, এগোও ! আর ঘুমোও
শুভমেঘের দইকাটা দুধ যা উড়িয়ে নিয়ে যায় তার ওপর
ঈশ্বরের নীল হাতে, যেখানে ওনার চোখ অযুতসংখ্যায় দীপ্ত হয়,
পৌরুষ-মদের দেশে জাহাজডুবির জন্য !
এবার হৃদয় নির্ভীক হও,
এবার, এবার, আমি বেরিয়ে পড়ছি...

আর আমি বার্তা পাঠাবো, পূর্বদিকে থাকবে আমার কপাল,
চুমুর প্রজাতির ঘেরাটোপে যা এই বিষয়ে কিচ্ছু জানে না !

অগ্রবর্তীরা ! স্বাধীন হও !
নাড়াও, রাতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘণ্টাধ্বনি ! ছেঁকে তোলো, স্বর্গের শক্তিমান সূর্যকে,
বিদায়, হে জলজ বনানী, যা, আমাকে দিম থেকে ফুটিয়ে তুলছে,
খমির মিশিয়েছে আমার শুঁয়াপোকায় !
আমি কি শীতল ? তাহলে এগোও ! আহ !
মা...

--আপনি, মহোদয়া, যতক্ষণ আপনার পক্ষে  সম্ভব, স্তনের দুধ খেতে দিন
এই বেচারা দুর্দশাগ্রস্ত খোকাকে যে অমন ক্ষুদেকে ফোলাতে পারে ।

কিংবদন্তি
রক্তশূন্যতার কুলগৌরবের অস্ত্র !
হেমন্তের প্রার্থনাসঙ্গীতের বই !
আমার প্রতিভা ও ভাগ্যকে উৎসর্গ করছি, সম্পূর্ণ রাজছত্র,
সেই তাঁকে মেয়েলি হোটেলউলি
আর শুকনো, খুশখুশে কাশি
তুমি ফাঁকা দিনগুলোয় যাও, এক অজানা ঠিকানায়,
শীত কাছাকাছি হলে মেয়েটির আলমারির ছাইয়ে ঝুঁকে পড়ো,
সমুদ্রের অতিমানবিক কান্নার নাগাল এড়াতে ।
দারুন ভালোবাসা, তারা এখন কোথায় ?
তারা বেশ সরল ছিল যাই হোক না কেন :
যে সমস্ত ঠোঁটের পরিচয় দরকার হয় না,
যদিও গানখানা মারা গেছে আর বিদায় নিয়েছে
তবুও তাড়া করার জন্য আগ্রহী ।
কিন্তু সুন্দর, ভালোভাবে আটক মঠবাসী আত্মা ।
শেষপর্যন্ত, যুবতীটি আমাকে তার বিশ্বাসভাজন মনে করেছে ।
মেয়েটি অনুমান করতে পারবে না এতে আমি কতো যন্ত্রণা বোধ করছি।
“কিন্তু, আমার প্রিয় বেচারা, তোমার মতন বুদ্ধিমান মানুষ
আর তোমার চোখ যা ইস্পাতের মতন কেটে ফেলতে পারে,
কেমন করে ভান করার ব্যাপার টের পেলো না
একজন সুযোগসন্ধানীর, ভালো দেখতে গোড়ালির কারণে ?”
“ওই ছিল প্রথমজন, আমি একা ছিলুম, সেখানে ।
ওর ঘোড়া, গেটে বেঁধে রাখা
অবসাদে ডাকছিল ।”
“বেচারি মেয়ে, খুবই স্পর্শকাতর ব্যাপার !
আর তারপর ?
ওহ, সূর্যাস্তের ছদ্মবেশে উপসংহারের দিকে তাকাও !
তাহলে, এটাই রেওয়াজ,
হেমন্তের প্রথম স্পর্শে...হেমন্ত !
ক্যাসিনোগুলো
যেগুলোকে বাতিল করা হয়েছে
সেগুলোর পিয়ানোগুলো রেখে এসো ।
গতকালের অর্কেস্ট্রা
যাযাবর নাচের সুরকে আক্রমণ করেছিল ।
গতকাল শেষ হইচই
ফুঁপিয়ে স্টেশনে চলে গেলো…...।”
( ওহ, মেয়েটা কতো রোগা হয়ে গেছে !
কি হবে মেয়েটার তাহলে ?
তুমি স্মৃতির জমাট-রক্ত,
কঠিন হও, পাথরের মতন নিরেট হও ! )
“এবার এসো ! টেলিগ্রাফের থামগুলো
নির্বাসনের ধূসরতায়
অন্ত্যেষ্টির সময়ে শোকপালনকারীদের ভূমিকা নেবে ।
আমার কথা যদি বলো, ঋতু চাইছে আমি চলে যাই ।
শীত শীঘ্রই এসে হাজির হবে ।
তাহলে তাই হোক ।
আহ, নিজের যত্ন নাও ! ভালো থেকো ।
যথেষ্ট, যথেষ্ট !
তুমিই তো এটা আরম্ভ করেছিলে !
কথা বোলো না ! তোমার চোখের ছোট্ট পলক পড়াও মিথ্যা ।
কেটে পড়ো ! তোমার সঙ্গে কোনোকিছুর নিশ্চয়তা নেই ।
যাও ! যদি তোমাকে ভালোবেসে থাকি, দিব্বি করে বলছি
আমাকে তাহলে বাজি রাখতে হবে ।
চুপ করো ! চুপ করো !
একজন কেবল একবারই ভালোবাসে !”
আর ওইভাবের ওরা আমার হিসেবের খাতা মেলালো !
আহ, তাহলে হেমন্ত আর নেই
কিংবা নির্বাসনে, কিন্তু মিষ্টতা
কিংবদন্তিগুলোর, আরেকবার সোনার যুগ…
অ্যান্টিগোনদের কিংবদন্তি,
এক মিষ্টতা যা অবাক করে,
“কখনই বা তা ঘটেছিল ?”
এটা কিংবদন্তির বিষয়, যেমন কাহিনি আমাকে বলা হয়েছিল,
শৈশবের মণিমুক্তো ।
ওহ, আমি তোমায় বলছি, কোনও ছবিতে
আকাশের পাখিদের আর জানোয়ারের বিষয় নেই ।
গির্জার নিত্যকর্মপদ্ধতির বইতে বড়ো অক্ষরগুলোকে মালা পরিয়ে
এমনকিছু কি আছে যার দরুন তোমার এরকম রক্ত বেরোবে।
রক্ত বেরোবে ? আমি পাহাড়ি মায়ের বিশুদ্ধ কাদায় ঢাকা !
আমি যে কিনা হতে পারতো, আদম-এর যাবতীয় শিল্পকলা নিয়ে
ইডেনে, যুবতীটির কাছে ততোটাই সৎ, অতিশয়োক্তি করতে হলে,
প্রতি সন্ধ্যায় সূর্য যেমন পশ্চিমে ।
অক্টোবরের ছোটো দুর্দশাগুলো                                    প্রতি অক্টোবরে আমার মনখারাপ হওয়া আরম্ভ হয় ।                        কারখানাগুলোর শয়েশয়ে কন্ঠ আকাশে ধোঁয়া ওগরায় ।Share on Twitter
মুর্গিগুলো মোটা হচ্ছে
খ্রিসমাসের জন্য ।   
তাই আমি আমাদের ধোপদোরস্ত আর ক্ষয়িষ্ণু আত্মার উদ্দেশে গাধার ডাক পাড়বো        আর পুরোনো পুঁথির ওপরে হাজার তুষারস্তুপ গলাবো
ধর্মের   
কোনো শোভন প্রাণচাঞ্চল্য পেয়েছো ? বেশ কঠিন ।
বৈধতা ? নিশ্চয়ই । ওটা ভালোভাবে রাখা কর্মাঙ্গন ।
কিন্তু কে আমাদের রান্নাঘরকে আশীর্বাদ করবেন
শেষের দিন পর্যন্ত ?
আমি আবার তুষারযুগের তুষারকে প্রার্থনা শোনাবো,
আর বাতাসের কাছে চেঁচাবো, ‘তুইও, বুড়ো বজ্জাত কোথাকার !’
কেননা তোর থেকে ওজন নামিয়ে নেয়া হবে না
অমনভাবে ।
( আর তুষারপাতের সঙ্গে, পড়ে দরদ । ক্ষয়িষ্ণু ধরনের ।
চামড়ার হৃদয়ের যে লোকগুলোকে তুমি দেখতে পাও, সেগুলো নাকি ?
কারোর উচিত আমার দিকে একটা রশি ফেলা
কিন্তু কখনও তা করবে কি ? )
হ্যাঁ, ঠিক তাই । তুমি নিজের কানের কাছে চেঁচাতে পারো, কিন্তু এটা মূর্খদের খেলা ।
কেননা কিচুই নয় -- ঋতুরাও নয়, শিল্প, আকাশ --
দুশো টাকার শাড়ি
আর এক জোড়া চোখ ।
চেয়ে দ্যাখো, মিষ্টি । দুশো টাকার শাড়ি আর তাজাগরম খোলা
আর দুশো টাকা দামের চাউনি আর তারপর যা আসে…
নিঃসন্দেহে সেটাই উপশম
অবসাদের ।

শীতকালের আগমন
কোমলতাপূর্ণ অবরোধ ! পূর্বদেশ থেকে বাষ্পের জাহাজ !
বৃষ্টি ! রাতের প্রবলবর্ষণ !
আর হাওয়া !...
সন্তদের দিন, ক্রিসমাস আর নববর্ষের, সবগুলো বিদায় নিচ্ছে,   
আর বৃষ্টিধারায়, আমার বাড়ির চিমনিগুলো….
বসার জায়গা নেই কোথাও, সব কয়টা বেঞ্চ ভিজে ;
শোনো, আগামী বছর পর্যন্ত সব শেষ,
সব শাখাগুলো ভিজে, বনানী মরচেরঙা,   
শিকারের ভেঁপুগুলো  দীর্ঘ দুঃখি গানে হারিয়ে গেছে ।
খালের সামনে তুমি ঝড় হয়ে আসো,
তুমি আমাদের গত রবিবার নষ্ট করে দিয়েছ ।
বৃষ্টিধারা বজায় আছে ;
জঙ্গলে, মাকড়সার জাল
বৃষ্টিফোঁটার তলায় পড়ে, তারা ধ্বংস হয়ে গেল ।
তোমরা পূর্ণক্ষমতাপপাপ্ত সূর্যেরা  ফুলেফেঁপে উঠেছ   
আমাদের গ্রামের বিখ্যার মেলার সোনার নদীগুলো,
তোমাকে এখন কোথায় গোর দেয়া হয়েছে ?
আজকে আমি তোমাকে দেখি, ফুরোনো এক সূর্য মরে যাচ্ছো
পাহাড়ের শীর্ষে অসহায়,
ও পাশ ফিরে শুয়ে আছে, ফুলেদের মাঝে,
ওর দীর্ঘ পোশাক ওর তলায় জঞ্জালের মতন,
স্নানঘরের মেঝেতে ও থুতুর মতন শাদা,
আর ও পড়ে আছে হলুদ ঝাঁটার জঞ্জালে,
হেমন্তের হলুদ ঝাঁটার ওপরে ।
ভেঁপুগুলো যখন ওকে ডাক দিচ্ছে,
ওরা চাইছে ও ফিরে আসুক !.....
নিজের মধ্যে ফিরে আসুক !
কিন্তু শোনো ! শোনো ! এটা মৃত্যুর ডাক !
হে দুঃখি স্তবগান, তুমি কি কেবল গেয়ে শেষ হবে না !...
হে সঙ্গীত, সবাই পাগল হয়ে গেছে !
আর ও ওখানে পড়ে আছে গলা থেকে ছিঁড়ে নেয়া নলির মতন,
আর ও কাঁপতে থাকে, বন্ধুহীন !...
তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি করো, কেননা এটা মৃত্যুর ডাক !
এ হলো সেই শীত যাকে আমরা ভালোকরে জানি এসে পড়ল এবার ;
বড়ো রাস্তার বাঁকে,
নিরীহতা কতো মিষ্টি সেখানে,
রূপকথার কোনো খরগোশ সেখানে আসছে না !...
গতমাসের ঠেলাগাড়ির চাকার দাগ এখনও রাস্তায় রয়েছে,
রেললাইনের মতন উঠে পড়ছে, স্বপ্নের মতন, বাহাদুরি দেখিয়ে,
ঝোড়ো মেঘের পলাতক পাহারাদারদের পেছন পেছন
বাতাস যেখানে পাঢায় সেখানেই ওরা যায়,
অতলান্তিকের ওপরে ভেড়াদের খোঁয়াড়ে !...
তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি করো, কেননা আমরা এই ঋতুকে চিনি, ভালো করে চিনি।
কেননা আজ রাতে বাতাস কতো সুন্দর মেঘ তৈরি করেছে !
হে সর্বনাশ, হে পাখির বাসা, হে সুন্দর ছোটো বাগানেরা !
হে আমার হৃদয় আর আমার ঘুম : হে কুঠারের প্রতিধ্বনি !...
শাখাগুলোয় এখনও সবুজ পাতা,
ঝোপগুলো মরা পাতদের ডাঁই ছাড়া আর কিছু নয় ;
পাতারা, ছোটো পাতারা, প্রার্থনা করি যেন শুভ বাতাস তোমাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়
পুকুরের দিকে দল বেঁধে,
কিংবা পাহারাদারের আগুনে,
কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের তোশকে
ফ্রান্স থেকে বহুদূরের সেনাদের জন্য ।
এটাই ঋতু, ঋতু, মরচে সবাইকে আক্রমণ করে,
তাদের ছোটো অণুপরিমাণ বিষণ্ণতাকে মরচে যন্ত্রণা দেয়,
রাজপথে টেলিগ্রাফের তার যেখানে কেউ যায় না ।
ভেঁপুগুলো, ভেঁপুগুলো -- বড়ো দুঃখি !...
বড়োই দুঃখের সময় !...
ওরা চলে যাচ্ছে, যেতে যেতে ওরা স্বর বদলে ফেলছে,
ওরা সুর আর ওদের সঙ্গীত বদলে ফেলছে,
এখন দীর্ঘ আওয়াজ বদলে যাচ্ছে,
ভেঁপুগুলো, ভেঁপুগুলো,
উত্তরের বাতাসে চেপে চলে গেছে কন্ঠস্বরগুলো ।
কিন্তু আমি ওদের ছাড়তে পারি না, এই কবিতা, এই প্রতিধ্বনিদের !...
এটাই ঋতু, আমার ঋতু, বিদায় আঙুরের ফসল,
দেবদূতদের বহুক্ষণের ধৈর্য নিয়ে এসে পড়ল বৃষ্টি,
বিদায় আঙুরের ফসল, আর বিদায় ফসলতুলিয়ের ঝুড়ি,
বিদায় ওয়াতেওর আঁকা তৈলচিত্রের ঝুড়ি
আর চেস্টনাট গাছের নীচে নর্তকীদের ঘাঘরা,
এখন হাইস্কুলের হস্টেলঘরে কাশবার সময়,
অপরিচিত বাসায় ওষুধ-মেশানো চা খাবার সময়,
পড়াপ্রতিবেশীদের দুঃখ দিচ্ছে যক্ষ্মারোগ,
যেখানে লোকে কাছাকাছি থাকে সেখানকার দুঃখদুর্দশা ।
তুমি, পশম, রবার, ওষুধ, স্বপ্ন,
সমুদ্রতীরের বাড়ির বারান্দায় সরানো পর্দা
শ্রমিকপাড়ার ছাদের ওপরে সমুদ্রের মুখোমুখি
লন্ঠন, ছাপা, চা, পেটিসফোর কেক,
তোমরা হবে আমার একমাত্র ভালোবাসা !...
( ও, আর তুমি কি এগুলো দেখেছ, এখানে পিয়ানোর পাশে,
কোমল আর গির্জাসুলভ রহস্য
সাপ্তাহিক পত্রিকায় পয়ঃপ্রণালীর সংখ্যা ? )
না ! না ! এটা ঋতুর আর অদ্ভুত গ্রহের ব্যাপার ।
ঝড়, ঝড়ই না হয় করে দিক
বাজেভাবে বোনা চটির সময় !
এই হলো ঋতু, ওহ বিচ্ছেদ ! ওহ হৃদয়বিদার, এই ঋতু !
প্রতি বচে আমার প্রতিটি বছরের জন্য.
দেখি সত্যকার কোরাস গাওয়ার চেষ্টা করে আর সঠিক কন্ঠস্বরে !

তিনটি ভেঁপুর রহস্য
সমতলভূমিতে এক ভেঁপু
শ্বাস না ফুরোনো অব্দি বাজানো
আরেকটা, জঙ্গলের হৃদয় থেকে,
জবাব দেয় ;
একটা নিজের গানের মন্ত্র
পাশের বনানীকে শোনায়,
অন্যটা জবাবি গান শোনায়
প্রতিধ্বনির পাহাড়গুলোকে ।
যে ভেঁপু সমতলভূমিতে
নিজের কপালের শিরাকে অনুভব করলো
ফুলে রয়েছে ;
বনানীতে অন্যজন
নিজের ক্ষমতাকে সঞ্চয় করে রাখলো
পরে কোনো সময়ের জন্য ।
---কোথায় লুকিয়ে আছো,
আমার সুন্দর ভেঁপু ?
তুমি সত্যিই বজ্জাত !
---আমি আমার প্রেমিকাকে খুঁজছি,
নীচে ওইখানে, আমাকে ডাকছে
সূর্যাস্ত দেখার জন্য ।
---আমি তোমায় শুনতে পাচ্ছি ! আমি তোমায় ভালোবাসি !
হে রঁসেভু পর্বতমালা !
---প্রেমে পড়া, হ্যাঁ, বেশ মিষ্টি ব্যাপার ;
কিন্তু দ্যাখো : সূর্য তো নিজেকে মেরে ফেলছে, ঠিক তোমার সামনে !
সূর্য ওর যাজকীয় উত্তরীয় নামিয়ে রাখছে,
চুল খুলে ফেলেছে,
আর হাজার নদী
জ্বলন্ত সোনা
আকাশের তলা দিয়ে বইছে,
জাগিয়ে তুলছে জানলাগুলোকে
শৈল্পিক মদ-বিক্রেতাদের
একশো বোতল বিদেশি গন্ধকবিষে!...
আর পুকুরটা, রক্তরঙা, হঠাৎ খুলে গেছে, ছড়িয়ে দিয়েছে,
আর সূর্যের রথের ঘোটকিগুলো তাতে ডুবছে,
পেছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছে, জলে খেলছে, শেষে স্হির হয়েছে
কারখানাগুলোর ছাই আর সুরাসারের কাদায় !...
দিগন্তের কঠিন বালিয়াড়ি আর কাঠের স্ফূলিঙ্গ
দ্রুত শুষে ফেলছে বিষের প্রদর্শনী ।
হ্যাঁ ঠিক তাই,
ওনাদের শৌর্যের গান গান গান !...
হঠাৎ  আতঙ্কিত ভেঁপুগুলো
নাকে নাক ঠেকানো অবস্হায় নিজেদের আবিষ্কার করে ;
ওরা তিনজন !
বাতাস বইতে থাকে, হঠাৎই ঠাণ্ডা লাগে ।
তুমি কি গান শুনতে পাচ্ছো, ওনাদের শৌর্যের গান !
হাতে হাত জড়িয়ে সবাই চলে যাচ্ছে
তাদের বাড়িতে ফিরছে,
---”আমরা কি কোথাও বিশ্রাম নিতে পারি না
একটি গলা ভেজাবার জন্য ?”
বেচারা ভেঁপু ! বেচারা ভেঁপু !
কতো তিক্ত হয়ে উঠলো ওদের হাসি ।
( আমি এখনও শুনতে পাচ্ছি )।
পরের দিন, গ্রঁ-স-য়ুবার-এর বাড়িউলি
ওদের খুঁজে পেলেন, তিনজনকেই, মৃত ।
তাই কয়েকজন গিয়ে কর্তৃপক্ষকে নিয়ে এলো
যাঁরা সেই অঞ্চলের
যাঁরা এদের ইতিহাস খুঁজতে লাগলেন
এই অনৈতিক রহস্য জানার জন্য ।

No comments:

Post a Comment