পাবলো পিকাসো-র কবিতা : অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
যা ছিল সুনসান রাস্তা তাতেই হেঁটেছি
আমি এক সুনসান রাস্তায় হাঁটি, এক এবং একমাত্র যা আমি জানি ।
আমি জানি না এটা কোথায় যায়, কিন্তু আমি হাঁটতেই থাকি হাঁটতেই থাকি।
আমি সুনসান আর না-হাঁটা রাস্তায় হেঁটেছি কেননা আমি ভাঙা স্বপ্নের সেতুর
ওপর দিয়ে হাঁটছিলুম ।
আমি জানি না কিসের জন্য পৃথিবী লড়ছে কিংবা কেন আমাকে প্ররোচিত করা হচ্ছে।
সেই জন্যই আমি এই সুনসান রাস্তায় হাঁটি কেননা আমি থাকতে চাই
একা !
তাই আমি ভেঙে ফেলছি ভেঙে ফেলছি।
আমি আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবকে ভয় পেয়েছি কেননা কিছু আছে যা
আমার মধ্যে আপৎকালকে টেনে তুলতে চায় উপরিতলে, শুষে নিয়ে, বিশৃঙ্খল,
যাকে বলা হচ্ছে অপার্থিব আমি হেঁটে যাই এই সুনসান রাস্তায় কেননা আমি ভাঙা স্বপ্নের
সীমায় ।
তাই হাঁটি এই সুনসান রাস্তায় যাতে সব সময় হেঁটে যেতে পারি
ভোর
ভোর সেই দিন জেগে উঠলো
রাতের কুয়াশার মতন
নামতে থাকা ফেনার মতন তলিয়ে গেল
সামনে দিকে পরিষ্কার জল মেলে ধরার জন্য
চাকের ভেতরে মৌমাছিগুলো স্পন্দিত হল
আরও মধু সংগ্রহ করার খাতিরে
সেই দিনই আমি তাকিয়েছিলুম
ভাগ্যের আয়নার দিকে ।
সময় কেটে যেতে লাগল
তপ্ত সূর্যের তলায় যখন মাছিরা উড়ছে
স্ফটিক-জলের ওপরে ফেনা আবার ভেসে উঠল
সন্ধ্যার কুয়াশা আমার ওপরে উঠে চলে গেল
আয়নার দৃঢ়তাকে চুরমার করে দিয়ে
আমি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়লুম
বিষণ্ণতার গভীরে
ঠিক তখনই আমি জানতে পারলুম
কোন দুর্ভোগ আমাকে পোয়াতে হয়েছে
ঠিক তখনই আমি চিৎকার করে উঠলুম
‘ওহে, দিন ! সেই তখনই আমি কেলাসিত করলুম
আমার মনের আয়নায় তোমার ক্ষমতা’
আর তার পর আমি বিষণ্ণতার চায়ারে বসলুম
সোনার আর রূপার রশ্মির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলুম
আরেকবার আয়নায় দীপ্ত হবার জন্য ।
মেয়েটি কি জানে আমি এখানে ? সন্দেহ হয়--
তুমি সৌন্দর্যের প্রতিমা. তুমি মুগ্ধতা নিয়তাকার ।
তুমি ছাড়া, প্রিয়তমা, এই রাতে চাঁদের আলো নেই।
আমি তোমাকে চিরকাল পাবার জন্য লড়ে বা লড়াই না করে
পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত যাবো । কিছু কি এসে যায় যদি অসীমঅনন্ত
ভেঙে পড়ে ?
কিছু কি এসে যায় যদি পৃথিবী ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ? তুমি আমার কাছে
একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ, প্রিয়তমা ।
আমার সমগ্র অস্তিত্ব তোমাকে চেনে আর তোমার প্রতি সাড়া দেয় ।
আমি তা জানি যখন তুমি কাছাকাছি থাকো ।
আমি আমার ঠোঁটে তোমার গাল অনুভব করতে পারি সেসময় ।
তোমার চুল আমার আহ্লাদের বনানী ।
তোমার হৃৎস্পন্দন একমাত্র শব্দ যার জন্য আমি সবকিছু ছেড়ে দেবো, প্রিয়তমা !
যখনই আমাদের চোখাচোখি হয় , আমার হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে ওঠে,
আমি কেবল চাই আমাদের দুজনার হৃদয়ের মিলন হোক ।
কে বলেছে ঈর্ষার রঙ সবুজ ? তার রং জ্বলন্ত লাল ।
প্রতিবার আমি তোমাকে ওখানে দেখি, আড়চোখে আমাকে দেখছ,
আমার হৃদয় আমার শিরায় দুঃখ ভরে দেয় । তোমার সঙ্গে কথা বলতে
পারি না বলে আফশোষ হয় । কেমন করে আমি তোমাকে আমার
ভালোবাসার কথা জানাব ?
প্রতিদিন আমি এখানে এসে দাঁড়াই, আশা করি যে কোনও দিন,
দূরত্ব হয়ে উঠবে বন্ধন । তোমার মুখভাব আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে।
কেন আমার ওজন বেড়ে গেছে ?
ওহ, হ্যাঁ !
কারণ আমি কাউকে আমার ভেতরে বহন করছি,
আমার হৃদয় যা তোমার দখলে।
মর্মযন্ত্রণা ? না, মন খারাপ
সেই সময়ে সবকিছুই ছিল আনন্দময়,
হাসিখুশির ঢেউয়ে ঝাঁপ দেবার দিনগুলো।
যখন বেঁচে থাকার কোনো গুরুত্ব ছিল না আমার এই জীবনে,
তা আরম্ভ হয়েছিল সেই সময়ে যখন ভাবতুম এইটুকুই আমি চেয়েছিলুম।
তুমি শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে আছো, কিংবা তাইই আমি মনে করেছিলুম ।
শেষে, জীবন এই দিকে মোড় নিলো, আমার জন্য কোনো পথ রাখলো না,
তখন আমি দুঃখের অতলে ডুব দিচ্ছিলুম -- মর্মযন্ত্রণার সীমাহীন গভীরতায়।
এখানে আমার হৃদয় তোমার জন্য কাঁদছিল, যখন এখানে আমি ছিলুম পরিত্যক্ত।
এবার আমার হৃদয় নিজেকে অসহায় মনে করে । তবু তুমি আমাকে সাহায্য করো না।
জন্ম আর মৃত্যু আমার কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে এখন ।
তাছাড়া, এখন মর্মার্থের প্রয়োজনই বা কি যখন সবকিছু ফুরিয়ে গেছে?
দয়া করুন, জীবন তোমাকে কেন এর ভেতরে একে ফেললো ?
এখন কি তা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে ?
তুমি কেন তেমন নয় যেমনটি আমি তোমায় আশা করেছিলুম ?
কেন আমি এখন ভুল ? কেন ?
আমার অনুমান আমি তোমার জন্য সঠিক লোক কখনও ছিলুম না ।
আমার অনুমান তোমার জন্য আমার চেয়ে ভালো লোক এই জীবনে ছিল।
তাহলে কেন আমি চিন্তা করব যখন তোমার জীবনে যখন আমি নেই ?
হয়তো পাশে অবহেলিত থাকা আমার নিয়তি যেমন চিরকাল ছিলুম !
কেন আমার জীবনে এতো বেশি প্রশ্ন যার উত্তর তুমি দিতে পারবে না ?
কেন এতো ব্যাপারে ভরা যা তুমি অস্বীকার করেছ ?
এরকমই কি হবার ছিল ?
হয়তো । আমি, কিন্তি, কখনও নালিশ করিনি ।
এই কবিতার জন্য কোনো শব্দ নেই
একবারের জন্য, বিশুদ্ধে দৃষ্টিতে দেখে, ঠোঁট চাটার জন্য জিভ বের করে, আমি আনন্দ
পাচ্ছি।স্পন্দন আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যায় এই অচেনা অনুভব কাতুকুতু দেয় ।
ঠোঁটদুটো কাঁপে আর চোখ ধনুকাকৃতি হয়ে ওঠে যেমন-যেমন এই অনুভূতি আমার ভেতরে ফুলে
ওঠে । নাক লাল হয়ে যায়, আর কান চুলকোয়।
এটা কি আনন্দ ? এতো ভালো লাগে, কতো শান্তি । চোখ ঝলমলে নীল হয়ে ওঠে, কোনো সূত্র
ছাড়াই দীপ্ত হয় ।
মৃদুমন্দ বাতাস বয় আর হাওয়া স্তিমিত হয়ে যায় । এসব প্রয়োজনের কথা না জেনেই হৃদয়
হয়ে ওঠে গতিশীল। এই আনন্দ সবচেয়ে নিখুঁত অনুভব যা কখনও ঘটেছে। মৌমাছিরা ঝাঁক
বাঁধে, মৃদুমন্দ বাতাস উষ্ণ হয় । আমি যখন এই অনুভবকে শুষে নিই তখন চোখ পিটপিট
করে আর হৃদয় ফরফর করে।
অঙ্গচ্ছেদের অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে আলোর রশ্মি অনুভব করি । চোখ জলে ভরে যায়। তবু,
এটা আলাদা । তার স্বাদ মধুর । এটা উল্লাস ।
এরকম কিছু কি এখনও বেঁচে আছে ।
তোমার জন্য ঋতুগুলো
ওনার নির্দেশে আমি এই পৃথিবীতে এসেছি ।
যখন আমি নামলুম, শীত এসে পড়েছিল ।
ঠাণ্ডায় কাঁপতে থাকা দেবদূতের মতন ঝলমল করছিল,
ছড়িয়ে দিচ্ছিল চোখ ধাঁধানো আলোর রঙ যা ভেতরে প্রবেশ করে।
আমার হৃদয়, আমি এ-পর্যন্ত উষ্ণ আর আরামে ছিলুম, কিন্তু এখন
এই জগতে যা বড়োই নিঃসঙ্গ, আমাকে নিজের তাপের রশ্মি সৃষ্টি করতে হয়েছে
যার জন্য আমার অক্ষমতা আমাকে প্রতিরোধ করেছে ।
আমি আমার অভিভাবকের থেকে তা ধার নিয়েছিলুম
আর হয়ে উঠলুম উষ্ণ, আরামপ্রিয়
দেবদূতের অবশিষ্ট সময়ের জন্য ।
তখনই গ্রীষ্ম এসে পড়ল।
তা যুদ্ধবর্মের ওপরে আলোকচ্ছটার মতন ঝলমল করছিল
আলোর দরুন গড়ে ওঠা ছায়ার মতন।
আমি তাপরশ্মির বন্ধন খুলে ফেললুম কেননা আমি তা যথেষ্ট পেয়েছি।
কিন্তু পরে বুঝতে পারলুম তা এক দীপ্তিমান ছুরিকাঘাত
শীর্ষবিন্দুতে কয়েকফোঁটা মধু ছাড়া
বন্ধগণ এইভাবেই আমি বুঝতে পারলুম
গ্রীষ্মকাল আর শীতকাল কেমন হয় ।
ক্লান্ত অসুস্হ
যখন তোমার কাছে সেরকম কিছু নেই যা সবাই চায়,
তখন সমস্যার ঢেউ ওঠে।
ঘড়ি জোরে জোরে আর শব্দ করে টিকটক করে
তখন তুমি ক্লান্ত অসুস্হ হয়ে পড়ো।
তুমি এমনকিছু করো যা অন্যদের ওপর নির্ভর করে
তাড়াতাড়ি করো নয়তো মায়েরা অমত দেবেন।
ছন্দ তোমার উপকার করে না,
মনে হয় যেন যা পাওয়া যায় তাই খাদ্য ।
তাদের নতুন-পাওয়া মজার চারিধারে পৃথিবী স্পন্দিত হয়
তুমি তখন একা সেখানে বসে থাকো, একক ও একা।
ঘড়ি জোরে শব্দ করে
তোমাকে অসুস্হ করে অসুস্হ করে
মজায় ক্লান্ত, তুমি গিয়ে একা বসে পড়ো,
সঙ্গীত স্তিমিত হয় আর তোমাকে ছেড়ে চলে যায়,
যা তুমি চাও তা ।
ঘড়ি টিকটক করে,
তোমাকে ক্লান্ত অসুস্হ করে ।
No comments:
Post a Comment