Sunday, May 26, 2019

মার্ক শাগাল-এর কবিতা ( ১৮৮৭ - ১৯৮৫ ) । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী


মার্ক শাগাল-এর কবিতা ( ১৮৮৭ - ১৯৮৫ )
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী   
       
        আমার আত্মায় দেশ কেবল আমার
কেবল আমার
আত্মায় আমার দেশ
আমি সেখানে বিনা পাসপোর্টে প্রবেশ করি
যেন তা আমার বাড়ি ।
তা আমার দুঃখকে দ্যাখে
এবং আমার নিঃসঙ্গতা
ঘুমপড়ানি গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়
আর তীব্র সুগন্ধে আমাকে ঢেকে দ্যায় ।
আমার বাগানে ফোটে
ফুলগুলো আমার তৈরি
রাস্তাগুলো আমার
কিন্তু সেখানে কোনো বাড়ি নেই,
তাদের শৈশবে তাদের নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল।
নিবাসীরা বাতাসে ঘুরে বেড়ায়
বাড়ির খোঁজে ;
তারা আমার আত্মায় বসবাস করে।
এইজন্যই আমি মৃদু হাসি
যখন আমার সূর্য তেমন ঝলমল করে না
কিংবা কাঁদে
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো
রাতের বেলায়।
এমন এক সময় ছিল যখন আমার ছিল দুটো মাথা।
এমন এক সময় ছিল যখন এই দুটো মুখাবয়ব
কামনার শিশিরে নিজেদের ঢেকে ফেলতো
আর গলে যেতো গোলাপজলের সুগন্ধে।
এখন আমার মনে হয়
   যখন আমি পিছিয়ে যাই তখনও
আমি এগিয়ে চলি
মহিমান্বিত তোরণের দিকে
যার ভেতরে চারিধারের দেয়ালগুলো
যেখানে ঘুম বজ্রপাতকে অজ্ঞান করে দ্যায়
আর বিদ্যুতের টুকরো ছড়িয়ে পড়ে।
কেবল আমার
আত্মায় প্রতিষ্ঠিত আমার দেশ ।

আমার বিষাদের রঙবৈচিত্র্য
রাতের ঘুর্ণিতে, তাদের হেঁয়ালিময় ভাববিহ্বলতায়
পাপড়িদের সাহস ধোয়া ছায়ায় গলে যায়,
যেমন নিশ্চুপ বিষাদের বিভিন্ন রঙে খোদাইকরা মুখগুলো
চলকানো তেলকে ধরে রাখে, নিরপেক্ষ আর উজ্বল
আমি মনকেমন নিয়ে একটা পোরট্রেটের দিকে তাকিয়ে থাকি…
মানুষ আর স্ত্রী, যেন একটা শিশুকে প্রায় কোলে নিয়ে
অদেখা….নীল-শাদা ভেলার ভেতরে লুকিয়ে।

স্তিমিত ব্যথার মাঝে, একটা দৃশ্য কিছুক্ষণের জন্য আলোকিত হয়
যেখানে চাঁদের আলোর কমলা চুপচাপ চলে যায়
এই শোভাবর্ধনকারী গোলাপের বিস্ফোরণ আর বেদনাময় রুপালি প্রজাপতির মাঝে,
ফিকে মোমবাতির আলোর ধারেধারে ছড়ানো ফুলদল…
অলস রঙেরা কামার চিন্তাকে কেমন প্রভাবিত করে
একাকীত্বের যন্ত্রণায় ডুবতে-ডুবতে...আমি জিগ্যেস করি
নিঃশব্দে..দম্পতি কি, শিশুটা কি মারা যাচ্ছে ?...মারা গেছে ?
আর কোমল, নিঃসঙ্গ দ্রবণের উপাদান আমাকে অনুমতি দ্যায়
এককোণে দাঁড়িয়ে কাঁদতে, বদ্ধশ্বাস গোঙানিতে আটক...যে আদরা
জীবন ও এলেজির মাঝে স্বরভঙ্গীকে আদল দ্যায়।

নীল সার্কাস
আমার কাছে সার্কাস হল ইন্দ্রজাল যা পৃথিবীর মতো দেখা দেয় আর উবে যায়।
সার্কাস বেশ গোলমেলে । তা নিগূঢ় ।
আমি এখনও ভিতেবস্কে দেখতে পাই, আমার দেশের বাড়ি, গরিবদের এক গলিতে কেবল তিন বা চারজন দর্শক, একজন লোক
একটা ছোটো ছেলে আর ছোটো মেয়েকে নিয়ে খেলা দেখাচ্ছে । জোকার, ঘোড়ার খালি পিঠের সওয়ার আর দড়াবাজিকররা
আমার দিব্যদৃষ্টিতে জায়গা করে নিয়েছে । কেন ? কেন আমি ওদের মুখের রঙচঙ আর ভেঙচিতে স্পর্শকাতর ?
ওদের সঙ্গে আমি নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। ওদের রঙঢঙ আর মুখের রঙের আকর্ষণে, আমি স্বপ্ন দেখি
নতুন মানসিক বিকৃতি আঁকার। হায়, আমার জীবনে আমি দেখেছি এক অদ্ভুত সার্কাস : একজন মানুষ [ হিটলার ] জগতকে ভয় দেখাবার জন্য গর্জন করেছিল।
যে বিপ্লব তার আদর্শে পৌঁছোয় না তাও, হয়তো, সার্কাস।
আমি ভাবি যদি এইসব কষ্টদায়ক চিন্তা আর অনুভবকে যদি একটা সার্কাসের ঘোড়ার ঐশ্বর্যময় লেজে লুকিয়ে রাখতে পারতুম
আর তার পেছনে দৌড়োতুম, ক্লাউনের মতন, দয়াভিক্ষার জন্য, পৃথিবী থেকে দুঃখকে তাড়াবার জন্য দয়াভিক্ষা ।


No comments:

Post a Comment