Friday, May 17, 2019

নিকানোর পাররা-র কবিতা : মলয় রায়চৌধুরী

           

নিকানোর পাররা-র কবিতা

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
               
ম্যানিফেস্টো   
মহোদয়া ও মহাশয়গণ   
এটা আমাদের শেষ কথা ।
--আমাদের প্রথম ও শেষকথা ---
কবিরা অলিমপাস থেকে নেমে এসেছেন ।
আমাদের বুড়োবুড়িদের জন্য
কবিতা ছিল বিলাসের জিনিস
কিন্তু আমাদের জন্য
এটা একটা বনিয়াদি প্রয়োজন :
আমরা কবিতা ছাড়া বাঁচতে পারি না ।
আমাদের বুড়োবুড়ির থেকে আলাদা
--আর আমি বেশ শ্রদ্ধা সহকারেই বলছি --
আমরা মনে করি
একজন কবি রাসায়নিক নন
একজন কবি অন্য যেকোনো মানুষের মতন
একজন রাজমিস্ত্রি যে দেয়াল গাঁথে :
যে দরোজা আর জানালা তৈরি করে
আমরা কথা বলি
প্রতিদিনের ভাষায়
আমরা গুপ্ত চিহ্ণে বিশ্বাস করি না
তাছাড়া, আরেকটা ব্যাপার :
একজন কবি বেঁচে থাকেন
যাতে গাছটা তেএঁটেভাবে না বড়ো হয় ।
এ হলো আমাদের বার্তা ।
আমরা সৃষ্টিকর্তা কবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জন করি
সস্তা কবি
গ্রন্হাগারের ইঁদুর কবি ।
এই সব বাবুদের
--আর আমি তা শ্রদ্ধা সহকারেই বলছি --
অভিযুক্ত ও বিচার করা দরকার
হাওয়ায় দুর্গ খাড়া করার জন্য
জায়গা আর সময় নষ্ট করার জন্য
যাহোক-তাহোক শব্দ জড়ো করার জন্য
প্যারিসের সাম্প্রতিক ফ্যাশান অনুযায়ী ।
আমাদের জন্য নয় :
ভাবনাচিন্তা মুখের ভেতরে জন্মায় না
তা হৃদয়ের হৃদয়ে জন্মায়
আমরা অগ্রাহ্য করি
রোদচশমা কবিতা
তরোয়াল আর ফতুয়া কবিতা
বড়ো ডানা কবিতার ছায়াকে
পরিবর্তে, আমরা পছন্দ করি
খোলা চোখের জন্য কবিতা
ঢাকা না-দেয়া বুকের কবিতা
নগ্ন মাথার কবিতা
আমরা মায়াপরী আর শুশুক-দেবতায় বিশ্বাস করি না ।
কবিতাকে এরকম হতে হবে :
ঝর্ণায় ঘেরা এক যুবতী
কিংবা কোনো কিছুই হবে না ।
সুতরাং এখন, রাজনীতির এলাকায়
ওনারা, আমাদের দাদুদিদারা,
আমদের ভালো দাদুদিদারা !
প্রতিসরিত আর ছড়িয়ে-পড়া
যখন তাঁরা কাচের স্ফটিকের ভেতর দিয়ে গেলেন
তাঁদের কয়েকজন সাম্যবাদী হয়ে গেলেন ।
আমি জানি না তাঁরা সত্যই তা ছিলেন কিনা।
ভেবে নেয়া যাক তাঁরা সাম্যবাদী ছিলেন
আমি একটা ব্যাপার জানি :
তাঁরা ঘাসভূমির কবি ছিলেন না,
তাঁরা ছিলেন শ্রদ্ধেয় বুর্জোয়া কবি ।
তাঁরা কেমন ছিলেন তা বলা জরুরি :
সময়ে সময়ে
তাঁরা জানতেন কেমন করে জনগণের হৃদয়ে প্রবেশ করতে হয় ।
প্রতিবার তাঁরা যদি পারতেন
তাঁরা শব্দ আর কাজের মাধ্যমে নিজেদের ঘোষণা করতেন
পথনির্দেশিত কবিতার বিরুদ্ধে
বর্তমানকালের কবিতার বিরুদ্ধে
শ্রমিকশ্রেনির কবিতার বিরুদ্ধে ।
মেনে নেয়া যাক তাঁরা সাম্যবাদী ছিলেন ।
কিন্তু কবিতা হয়ে উঠেছিল দুর্বিপাক
সেকেণ্ডহ্যাণ্ড পরাবাস্তববাদ
থার্ডহ্যাণ্ড ডেকাডেন্টিজম,
সমুদ্রের ফেরত-পাঠানো পুরোনো কাঠের পাটাতন ।
বিশেষণ কবিতা
নাকিসুর আর কুলকুচির কবিতা
স্বেচ্ছাচারী কবিতা
বই থেকে জড়ো করা কবিতা
বিপ্লব শব্দের ওপর
নির্ভর করা কবিতা
পরিস্হিতি অনুযায়ী তা হওয়া উচিত ছিল
বিপ্লবের ধারণায় নির্ভর
কবিতার বজ্জাত গোষ্ঠীচক্র
আধডজন নির্বাচিতদের
“আত্মপ্রকাশের চরম স্বাধীনতা”
এখন আমরা নিজেদের জেরাই করে জানতে চাই
এসব তাঁরা কিসের জন্য লিখেছিলেন,
পাতিবুর্জোয়াদের ভয় দেখাবার জন্য ?
ফালতু সময় নষ্ট !
পাতিবুর্জোয়ারা প্রতিক্রিয়া জানায় না
যদি না তা তাদের পেটের ব্যাপার হয় ।
তারা কবিতার ফলে আঁৎকে উঠবে !
এটাই অবস্হা দাঁড়িয়েছে :
তারা যখন সমর্থন করেছিল
এক গোধূলীর কবিতা
এক রাতের কবিতা
আমরা সমর্থন করেছিলুম
এক ভোরের কবিতা ।
এটাই আমাদের বার্তা, কবিতা ঔজ্বল্য
সকলের কাছে পৌঁছোনো দরকার, সমানভাবে
কবিতা সকলের জন্য যথেষ্ট ।
আর কিছু নয়, সহকর্মীবৃন্দ
আমরা অগ্রাহ্য করি
-- আর আমি তা শ্রদ্ধা সহকারে বলছি --
ছোটো-দেবতা কবিতা
পবিত্র গরু কবিতা
ক্ষ্যাপা ষাঁড় কবিতা
আমরা বিরোধিতা করি
মেঘের কবিতা
শক্তমাটি কবিতা
--ঠাণ্ডা মাথা, উষ্ণ হৃদয় --
আমরা নিশ্চিতভাবে শক্তমাটির
কফি কবিতার বিরুদ্ধে -- প্রকৃতির কবিতা
বৈঠকখানা কবিতার বিরুদ্ধে -- রাস্তার মোড়ের কবিতা
সামাজিক প্রতিবাদের কবিতা ।
কবিরা অলিম্পাস থেকে নেমে এসেছেন ।

সেইরকমই কিছু

পাররা হাসেন যেন তাঁকে নরকে নির্বাসিত করা হয়েছে
কিন্তু কবেই বা কবিরা হাসেননি ?
তিনি অন্তত ঘোষণা করছেন যে তিনি হাসছেন

তারা যেতে দেয় বছরগুলোকে যেতে দেয়
বছরগুলো
অন্তত মনে হব তারা যাচ্ছে
প্রকল্পের আমি ভান করি না
সবকিছু চলে যায় যেন চলে যাচ্ছে
এখন উনি কাঁদতে আরম্ভ করেন
ভুলে যান যে উনি একজন অ্যান্টিপোয়েট
0
মাথা ঘামানো থামান
আজকাল কেউই কবিতা পড়ে না
তা ভালো না খারাপ তাতে কিছুই আসে-যায় না
0
চারটে খুঁত যার কারণে আমার ওফেলিয়া আমাকে ক্ষমা করবে না :
বুড়ো
নীচুস্তরের জীবন
সাম্যবাদী
আর জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার
<<আমার পরিবার হয়তো আপনাকে ক্ষমা করতে পারেন
প্রথম তিনটির কারণে
কিন্তু শেষটির জন্য একেবারেই নয়>>
0
আমার শব আর আমি
ভালোভাবে নিজেদের বুঝতে পারি
আমার শব আমাকে জিগ্যেস করে : তুমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো ?
আমি জোরগলায় বলি না
আমার শব জিগ্যেস করে । তুমি সরকারকে বিশ্বাস করো ?
আমি কাস্তে আর হাতুড়ি দেখিয়ে জবাব দিই
আমার শব জিগ্যেস করে । তুমি পুলিশকে বিশ্বাস করো ?
আমি ওর মুখে ঘুষি মেরে জবাব দিই
তারপর ও কফিন থেকে উঠে বেরিয়ে আসে
আর আমরা বাহুতে বাহু গলিয়ে বেদিতে যাই

0
দর্শনের আসল সমস্যা হল
যে থালাগুলো কে ধোবে

কিচুই অন্যজগতের নয়

ঈশ্বর
     সত্য
       সময়ের চলে যাওয়া
চরম
কিন্তু প্রথম, থালাগুলো কে ধোবে

যে কেউই করতে চাক না কেন, যাও করো
পরে তোমার সঙ্গে দেখা হবে, কুমির
        আর আমরা আবার পরস্পরের শত্রু হয়ে গেছি
     
0
হোমওয়র্কের কাজ
একটি সনেট লিখো
   যা এই লাইনের ছন্দে লিখতে হবে :
         আমি তোমার আগে মরে যেতে চাই
আর শেষ হবে এই লাইন দিয়ে
         আমি চাইবো তুমি প্রথমে মারা যাও :
  
0
তুমি জানো কী ঘটেছে
যখন আমি হাঁটু মুড়ে বসেছিলুম
ক্রসের সামনে
      ওনার আঘাতের দিকে তাকিয়ে ?

উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন আর চোখ মারলেন !

আমি ভাবার আগেই যে উনি কখনও হাসেননি
কিন্তু এখন হ্যাঁ আমি মনে করি সত্যি
0
একটা জরাজীর্ণ বুড়ো লোক
ওর প্রিয় মায়ের কফিনে
লাল কারনেশন ফুল ছোঁড়ে

আপনারা কি শুনছেন মহোদয়া এবং মহাশয়গণ :
এক বুড়ো বেহেড মাতাল
তার মায়ের সমাধিতে বোমা ফেলছে
ফিতেবাঁধা আর লাল কারনেশানসহ

0
ধর্মের খাতিরে আমি খেলাধুলো ছেড়েছিলুম
( প্রতি রবিবার গির্জায় যেতুম )
আমি ধর্মকে বর্জন করলুম শিল্পের খাতিরে
গণিতবিজ্ঞানের শিল্পের খাতিরে

যখন শেষে ঔজ্বল্য আক্রমণ করলো

আর এখন আমি একজন যে কেবল ছলেই চলেছে
যার সমগ্রতে আর অংশতে কোনো বিশ্বাস নেই

কোনো রাষ্টপতির মূর্তি পার পায় না
ওই  অব্যর্থ পায়রাগুলো থেকে
ক্লারা সানদোভাল আমাদের বলতেন :

ওই পায়রাগুলো জানে ওরা ঠিক কোন কাজ করছে

                                  হুঁশিয়ারি                                                
 আগুন লাগলে
লিফ্ট ব্যবহার করবেন না
সিঁড়ি দিয়ে যাবেন
যদি না অন্য কোনো নির্দেশ থাকে   
সিগারেট ফুঁকবেন না
কাগজ ছড়াবেন না
হাগবেন না
রেডিও বাজাবেন না    
যদি না অন্য কোনো নির্দেশ থাকে   
পায়খানায় জল ঢালবেন
প্রতিবার ব্যবহার করার পর
কেবল যখন স্টেশানে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে তখন নয়   
ভাবনাচিন্তা করবেন
পরবর্তী যাত্রির জন্য
খ্রিস্টধর্মী সেনারা এগোও
দুনিয়ার শ্রমিক এক হও
আমাদের কিছুই হারাবার নেই
পিতার প্রতি আমাদের জীবনগৌরব ছাড়া
এবং পুত্রের প্রতি ও ঈশ্বরের তৃতীয়রূপ ছাড়া
যদি না অন্যরকম নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে
আচ্ছা যা বলছিলুম
আমরা এই সত্যগুলোকে স্বসমর্থিত বলে মনে করি
যে সমস্ত মানুষের সৃষ্টি হয়েছে
তাদের ওপরে বর্তেছে
তাদের সৃষ্টিকর্তার দ্বারা
কিছু অপসারণের অসাধ্য অধিকার
তাদের মধ্যে হলো : জীবন
মুক্তি ও আনন্দের প্রয়াস করা
এবং শেষটি যদিও তা ক্ষুদ্রতম নয়
যে ২ + ২ যোগ করলে ৪ হয়
যদি না অন্যরকম নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে

                            ফাঁদ
               সেই সময়ে যখন আমি পরিস্হিতিগুলো থেকে নিজেকে
সরিয়ে রাখতুম যা অত্যন্ত রহস্যময়   
ঠিক যেমন পেটরোগা লোকেরা বেশি খানাপিনা এড়িয়ে যায়
আমি বাড়িতে থাকা পছন্দ করতুম  বিশেষকিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে
মাকড়সাদের বংশবৃদ্ধি সংক্রান্ত   
বাগানের কোন কোনায় আমি নিজেকে আড়াল করে রাখবো
আর রাত না হওয়া পর্যন্ত জনগণের সামনে বেরোবো না ;                       
কিংবা, পুরোহাতা শার্ট পরে, অবজ্ঞায়,
চাঁদের দিকে রাগি চাউনি ছুঁড়ে দেবো,
ওই সমস্ত খিটখিটে কল্পনা থেকে মুক্ত হবার জন্য
যা মানুষের আত্মায় এঁটুলির মতন আঁকড়ে থাকে ।
যখন একলা ছিলুম তখন আমি একেবারে আত্মঅধিকারে থাকতুম,
নিজের কাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এগোতুম আর পেছোতুম                         
 কিংবা নিচুতলার মদের ঘরে পাটাতনের ওপরে হাতপা ছড়িয়ে শুতুম   
আর স্বপ্ন দেখতুম, উপায় খোঁজার কথা ভাবতুম,
ছোটোখাটো জরুরি সমস্যা সমাধান করতুম।
ঠিক সেই সময়েই আমি স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার
আমার বিখ্যাত প্রক্রিয়কে কাজে লাগানো আরম্ভ করলুম
যা হলো নিজের প্রতি হিংস্রতা আর চিন্তা করা যে অন্য লোকে কি চাইবে,
দৃশ্য গড়তে চাইবে       
যা আমি আগেই  অন্যজগতের ক্ষমতা থেকে আদায় করে রেখেছি ।   
এই উপায়ে আমি অসামান্য তথ্য যোগাড় করতে পেরেছি                        
 আমাদের অস্তিত্বকে যে উদ্বেগ কাঁপিয়ে দেয় সেসব সম্পর্কে :                         
বিদেশ ভ্রমণ, যৌন বিকৃতি, ধার্মিক জটিলতা ।           
কিন্তু সব সতর্কতাই ছিল অপর্যাপ্ত,
কেননা, কারণ ব্যাখ্যা করা কঠিন বলে,
আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢালু পাটাতনে পিছলে যেতে লাগলুম ।
আমার আত্মা ফুটো বেলুনের মতন দ্রাঘিমা হারিয়ে ফেললো,
আত্মসংরক্ষণের প্রবৃত্তি কাজ করা বন্ধ করে দিলো
আর, আমার জরুরি পক্ষপাত থেকে বঞ্চিত,
আমি অপরিহার্যভাবে টেলিফোনের ফাঁদে পড়লুম
যা তার চারিপাশের সবকিছুকে শুষে নেয়, ভ্যাকুয়ামের মতন,
আর কাঁপতে-থাকা হাতে অভিশপ্ত নম্বরে ডায়াল করলুম
যা আমি এখনও ঘুমের মধ্যে আপনা থেকে বারবার করি ।
পরের মুহূর্তগুলো ভরে উঠলো অনিশ্চয়তা আর দুর্দশায়,
যখন কিনা আমি, নরকের ওই টেবিলের সামনে কঙ্কালের মতন দাঁড়িয়ে
হলদে সুতি-কাপড়ে ঢাকা,
পৃথিবীর অন্য পার থেকে উত্তরের জন্য অপেক্যা করতে লাগলুম,
আমার অ্স্তিত্বের বাকি অর্ধাংশ, আকটা গর্তে কারারুদ্ধ ছিল ।
টেলিফোনের ওই স্পন্দিত আওয়াজ
আমার ওপরে ডেন্টিস্টের ছ্যাঁদা করার মতন কাজ করতে লাগলো,
আকাশ থেকে ছোঁড়া ছুঁচের মতন তারা আমার আত্মায় ঢুকে গেলো
যতক্ষণ না, মুহূর্ত নিজেই এসে আবির্ভুত হলো,
আমি রোগির মতন ঘামতে  আর তোতলাতে লাগলুম
আমার জিভ বাছুরছানার মাংসের মতন
যে যুবতী শুনছিল আর আমার মাঝে ঝুলে রইলো,
সেই কালো পর্দার মতন যা আমাদের থেকে মৃতদের আলাদা করে।
আমি অমন অতি-অন্তরঙ্গ বার্তালাপ করতে চাইনি
যার উৎস আমিই ছিলুম, যাই হোক না কেন, আমার বোকামিতে,
আমার কন্ঠস্বর আবেগে ঘন, আর বিদ্যুৎপ্রবাহ সঞ্চারিত ।
আমার ডাকনামে আহ্বান শুনে
তা কি জোর করে জাগানো পরিচয়ের সুর
আমাকে অস্পষ্ট অস্বস্তিতে ফেললো,
স্হানিক গোলমালের মানসিক পীড়াসহ যা আমি থামাবার প্যাঁচ কষছিলুম
প্রশ্ন আর উত্তরের দ্রুতি-প্রণালীসহ
যা যুবতীটির মধ্যে নকল-যৌনতায় ফেনায়িত হয়ে উঠলো
যা শেষ পর্যন্ত আমাকেও প্রভাবিত করল
সর্বনাশের অনুভূতি টের পেলুম ।
তারপরে নিজেকে হাসালুম আর তার দরুন মানসিকভাবে সটান শুয়ে পড়লুম
এই মজাদার ক্ষুদে আলাপগুলো কয়েক ঘণ্টা চললো
যতক্ষণ না যুবতীটি যিনি পেনশন প্রকল্প সামলান পর্দার পেছনে দেখা দিলেন
আমাদের বোকা-বোকা কাব্যি আচমকা বন্ধ করলেন ।
স্বর্গের দরোজায় একজন দরখাস্তকারীর ওইসব প্রবল মোচড়
আর ওই পরিণতি যা আমার তেজকে দমিয়ে ফেললো
তখনও সম্পূর্ণ থামেনি যখন টেলিফোন রেখে দিলুম
কেননা আমরা নির্ণয় নিলুম
পরের দিন সোডা ফাউন্টেনে দেখা করব
কিংবা এক গির্জার দরোজায় যার নাম আমি ভুলে যেতে চাই ।
   
কাল্পনিক মানুষ
কাল্পনিক মানুষটা
এক কাল্পনিক প্রাসাদে থাকে
কাল্পনিক গাছে ঘেরা   
কাল্পনিক নদীর তীরে
কাল্পনিক দেয়ালগুলোতে   
কাল্পনিক পুরোনো তৈলচিত্র ঝোলে    
সারাবার অসাধ্য কাল্পনিক ফাটল   
যা কাল্পনিক ঘটনাবলীর কথা বলে   
যা কাল্পনিক জগতে ঘটেছে   
কাল্পনিক সময়ে আর জায়গায়
প্রতি দুপুরে এক কাল্পনিক দুপুর
ও কাল্পনিক সিঁড়ি চড়ে   
আর কাল্পনিক বারান্দায় হেলান দেয়    
কাল্পনিক দৃশ্য দেখার জন্য   
যেখানে রয়েছে এক কাল্পনিক পাহাড়তলি
কাল্পনিক পাহাড়া ঘেরা
কাল্পনিক ছায়ায়
সোজা চলে গেছে কাল্পনিক পথ
কাল্পনিক গান গাইছে
কাল্পনিক সূর্যের মৃত্যুর জন্য
আর কাল্পনিক চাঁদনি চাঁদের রাতে
ও কাল্পনিক যুবতীটির স্বপ্ন দেখে
যা ওকে দিয়েছিল কাল্পনিক ভালোবাসা
আরেকবার পুরোনো ব্যথা অনুভব করে
সেই কাল্পনিক আনন্দ
আর কাল্পনিক মানুষের হৃদয়
আরেকবার স্পন্দিত 

                          আমি যা-কিছু বলেছি সব ফিরিয়ে নিচ্ছি
যাবার আগে
আমার একটা শেষ ইচ্ছা প্রাপ্য মনে করা হয়       
দয়ালু পাঠক
এই বইটা পুড়িয়ে ফেলুন
আমি যা বলতে চেয়েছিলুম তা এটা মোটেই নয়
যদিও এটা রক্ত দিয়ে লেখা
আমি যা বলতে চেয়েছিলুম তা এটা নয়
আমার চেয়ে দুঃখি আর কেউ হতে পারে না
আমি আমার ছায়ার কাছে পরাজিত হয়েছিলুম :
আমার শব্দেরা আমার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিলো ।
ক্ষমা করে দিন, পাঠক, প্রিয় পাঠক
যদি আমি আপনাকে ছেড়ে যেতে না পারি   
উষ্ণ আলিঙ্গন দিয়ে, আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছে   
জোর করে আর দুঃখি হাসি হেসে ।
হতে পারে যে আমি কেবল এইটুকুই
কিন্তু আমার শেষ কথাটা শুনুন :
আমি যা বলেছি তা সমস্ত ফিরিয়ে নিচ্ছি :
জগতের সমস্ত তিক্ততা নিয়ে
আমি যা বলেছি তার সব কিছু ফিরিয়ে নিচ্ছি ।                                                   
       
                   
       
       
       
                                       

       
                                       
                                   
                            Share on Twitter                                    
       
               
   
         

No comments:

Post a Comment