কুর্দিস্তানের কবি কাজল আহমদ-এর কবিতা ( ১৯৬৭ )
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
যদি শহিদ হতুম
আমি ফুল চাই না,
মিলনের উৎসব চাই না,
সম্পর্কভাঙার ভোর চাই না।
আমি ফুল চাই না
কেননা আমিই সবচেয়ে প্রিয় ফুল।
আমি চুমু চাই না
সত্যিকার কবজির জন্য
আমি কোনও যোদ্ধাকে পেতে চাইবো--
কোনো বিয়ের ঘটনা নয়
কোনো ডিভোর্সের ভোর নয়,
কোনো বিধবার জ্বর নয় ।
আমি কোনো চুমু চাই না
যদি, প্রেমের সঙ্গে আমি শহিদ হয়ে যাই।
আমি কান্না চাই না
কফিন বা আমাকে নিয়ে, এক শব ।
আমি সহানুভুতির চেরিগাছ চাই না
আমার কবর পর্যন্ত যা টেনে নিয়ে যাবে,
কোনো ফুল কিংবা চুমু নয়,
কোনো কান্না বা দুর্দশা নয় ।
কিচ্ছু এনো না ।
কিচ্ছু ধরে থেকো না ।
আমি পতাকাহীন এক স্বদেশের জন্য মরি, কন্ঠস্বরহীন ।
আমি কৃতজ্ঞ ।
আমি কিছুই চাই না ।
আমি কিচ্ছু নেবো না ।
বোতাম
নির্দোষ চুমুগুলোর মধ্যে
আমার গোলাপি শার্টের প্রথম বোতাম
খসে পড়ল ।
পরে, সেলাই করার সময়ে
মেয়েটির চশমা লেজার-রশ্মির মতন ওর চোখে আটকে রইলো
মেয়েটির হাতে ছুঁচ, ওর আঙুলের মতন,
হুমকি দিয়ে, মেয়েটি বলে উঠল,
“এই ঘটনা কবিতায় আনবেনা কক্ষনো!”
সন্ত্রাসের দেশে পুরুষের চেয়ে পথগুলোকে বেশি ভালোবাসি
পথগুলো জানতে চায় না, তুমি এখন কোথায় ? আর কোথায় যাচ্ছ
পাগল মেয়ে ?
পথ তো কখনও অন্যায় করে না আর হুমকিও দেয় না ।
সন্ত্রাস জানে না ।
পথের কোনো-কিছুই পুরুষের মতন দেখতে নয় আর
পুরুষদের কোনো-কিছুই পথের মতন দেখতে নয় ।
তা আমাকে বলে:
যাও, আমাকে পেরিয়ে চলে যাও।
বড়ো হও:
ভালোবাসো
সামান্যতম ভার বইতে হবে না তোমাকে।
যে মেয়েরা ওড়ে তাদের ডানা আর তাজা থাকে না
সেই সময়ে যখন তারা ভালোবাসার পাড়ার ভেতর দিয়ে যায়
অন্ধকারে গড়া এক অহংকারী পুরুষ, এক অশিক্ষিত বালক
জীবনের কাচের বাসন ভেঙে যায়
নিঃসন্দেহে নিজের হৃদয়ের হাতে।
ওই পথ--
তাকে পার হতে বেশ ভালো লেগেছিল একজনের সঙ্গে।
পরস্পরকে ভালোবাসতে নিষিদ্ধ করল অদৃষ্ট ।
আমার হৃদয়ে উড়াল উঠেছিল যখন তার সঙ্গে হেঁটেছিলুম।
পুরুষ ইচ্ছে করে পিছিয়ে পড়তে চাইলো
যাতে ও আমাকে পেরিয়ে যেতে না পারে, যাতে আমি ওর চেয়ে আগে দৌড়োতে পারি।
একটা পথই যথেষ্ট
স্বাধীনতা উদযাপন করার জন্য আর পেরিয়ে যাবার জন্য,
শিশুদের জন্য যাতে পেরিয়ে স্কুলে যেতে পারে,
ছেলেদের জন্য যাতে মেয়েদের দিকে চেয়ে দেখতে পারে আর
মেয়েদের জন্য যাতে হাসাহাসি করতে পারে।
একটা পথ যা আমার নামে
তাতে কোনো বিখ্যাত পুরুষের মূর্তি কোথাও থাকবে না ।
তাকে প্রশস্ত হতে হবে, তাকে প্রশস্ত হতে হবে, প্রশস্ত
আমার হৃদয়ের মতন।
সকাল আর সন্ধ্যায় তাকে ফাঁকা থাকতে দাও
কবিতার বাড়ির মতন শান্ত আর
অন্য সময়ে তা থাকুক হইচই-ভরা
আমার অন্তরজগতের মতন । ঠোঁটের মধ্যে ঠোঁট।
আমার একটা পথ দরকার
রক্তের দাগ যেখানে নেই,
এমন এক পথ যা কখনও দ্যাখেনি
বা জানেনি সন্ত্রাস কাকে বলে ।
তা হোক খুঁতহীন, তা হোক খুঁতহীন, খুঁতহীন
এই মেয়েগুলোর যৌনতার মতন যাদের অন্যায়ভাবে খুন করা হয় ।
তা হোক অনেক দীর্ঘ, তা হোক অনেক দীর্ঘ, দীর্ঘ
ওদের অন্তর্বেদনার মতন ।
ওই পথে
আমরা সবাই পর্যটক
কিন্তু আমি একজন পর্যটক থেকে যাবো।
নিশাপুরের চতুষ্পদী শ্লোক
হঠাৎই নিজেদের বিশ্বাস করবে না
আর ভালোবাসায় মাতাল
আমার বাহুতে বাহু দিয়ে হাঁটবে ।
আয়না
আমার সময়ের অস্পষ্ট আয়না
ভেঙে গেছে কারন
যা ছোটো তাকে বড়ো করতে চাইছিল
আর যা বড়ো তাকে ছোটো করতে চাইছিল।
স্বৈরাচারী আর রাক্ষসরা তার মুখতল দখল করে নিয়েছিল।
এমনকি এখনও যখন আমি শ্বাস নিচ্ছি
এর ছুঁচোলো টুকরোগুলো আমার হৃদয়ে বিঁথছে
আর ঘামের বদলে
আমি কাচ গলিয়ে বের করছি ।
Kajal Ahmad was born in 1967 in Kirkuk, a disputed city in Iraq with a strong Kurdish population. A poet, journalist and social critic, she has published four books: Benderî Bermoda (1999), Wutekanî Wutin (1999), Qaweyek le gel ev da (2001), and Awênem şikand (2004). Ahmad worked for over a decade as the Editor-in-Chief of Kurdistani Nwe and at times has worked as a TV host for KurdSat.
No comments:
Post a Comment