কিউবার কবি রবের্তো ফারনানডেজ রেতামার-এর কবিতা ( ১৯৩০ ) ।
অনুবাদ: মলয় রায়চৌধুরী
ভেদাও থেকে, একজন কিউবা-নিবাসী তার নিশ্চিত ইউরোপীয় বন্ধুকে লিখছে
আমি জানি তুমি চাইছ আমি তোমায় আমার রক্তের মাদলের কথা বলি,
দ্যুতিমান জঙ্গলের কথা যেখানে টিয়াপাখিরা নেমে আসে
চিৎকার করে,
বিদ্যুতের কথা যা আমার চোখের সামনে পড়েছে,
আর আকাশের ওবতালা দেবতা তুষারের মতন ধবধবে অগ্নিময়
( তার সঙ্গে আমার শার্টে ঝোলানো পাথরের কবচের স্মৃতি যা নিশ্চয়ই মনে রেখেছি, বারো বছর বয়সের একজনের শোধক অনুষ্ঠানের কথা )
আমি জানি, প্রিয় বন্ধু, আমি জানি তুমি চাইছো বুনো প্রাণরস
যা আমি তোমাকে এনে দিতে পারি, এক হাতে সূর্যের এক খাবলা
আর, অন্য হাতে, লাউয়ের দোতারা যার বাজনা কেবল ছায়াপথ স্তব্ধ করতে পারে ।
কিন্তু আমি কেমন করেই বা তোমাকে লিখব একটা দেউলিয়া এয়ারকাণ্ডিশানার চালিয়ে,
হোটেলের এই ঘরে, এই অসহ্য গ্রীষ্মের দিনে,
পুরোনো হাভানা আমার পায়ের কাছে ঝলমল করছে
গলার হারের মতন, ধুলোমাখা ঘড়ঘড়ে মোটরগাড়িতে ঠাশা,
ডজনখানেক রেস্তরাঁ আর মদের ভাটি আর একটা পামগাছ চোখে পড়ছে না ?
( পু : এটা কেবল আমি, নাকি বোগোটার কথাও হতে পারে ? )
তিনি হতে চান
তিনি হতে চান
এক কৃশতনু কবি
হতে চান সেই কমানদান্তে
হতে চান সেই দার্শনিক
হতে চান সেই রাজনৈতিক নেতা
যিনি ড্রয়ারে চাবি দিয়ে রাখেন
রাতের বেলায় লেখা কবিতাগুলো ।
( পু: সম্ভবত এটা চে গ্বেভারার প্রিয় ছিল )
অপর
( পয়লা জানুয়ারি, ১৯৫৯ )
আর তাই আমরা টিকে
কিন্তু আমাদের এই টিকে থাকার জন্য আমরা কার প্রতি ঋণী ?
কে আমার জন্যে নিজের কয়েদঘরে মারা গিয়েছিল ?
বুকে আমার হয়ে বুলেট নিয়েছিল, নিজের হৃদয়ে ?
কার হাড়গুলো আমার সঙ্গে তালাবন্ধ ?
কার উপড়ে তোলা চোখ
আমার মুখের মাধ্যমে দেখছে ?
কোন হাত, তার হাত নয়
কিন্তু এখন তা আমারও নয়,
এই ভাঙাচোরা শব্দগুলো লিখছে
এই অসম্ভাব্য দেশে, টিকে থাকা
যেখানে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না ?
( সব শেষে, এটা একটি আক্রমণাত্মক কিন্তু এটাই কিউবা… )
একজন আক্রমণকারীর এপিটাফ
তোমার দাদুর বাবা ঘোড়ায় চেপে টেক্সাস পার হয়েছিলেন
তামাটে মেকসিকান মেয়েদের ধর্ষণ করতে-করতে আর ঘোড়া চুরি করে
যতোদিন না মেরি স্টোনহিলের সঙ্গে সংসার বাঁধলে আর বাড়ি তৈরি করলে
ওক কাঠের আসবাব আর ঈশ্বর আমাদের বাড়িকে আশীর্বাদ করুন দিয়ে
তোমার দাদু স্যান্তিয়াগো দ্য কিউবাতে নামলো
দেখলো স্পেনের লোকগুলো হেরে গেছে, আর বাসা বাঁধলো
রাম-এর হাওয়া ওড়ানো গন্ধ আর বাদামি তরুণীদের শ্যামল মনকেমন ।
তোমার বাবা, শান্তিপ্রিয় মানুষ,
গুয়াতেমালার বারোজন যুবককে কেবল মজুরি দিতো
তোমাদের লোকেদের মতনই,
১৯৬২ সালের হেমন্তে তুমি কিউবা আক্রমণের দায়িত্ব নিজের ওপর চাপালে।
আজকে তুমি তুলোর গাছগুলোকে সার দিচ্ছ ।
কতো ভাগ্যবান ওরা, যারা স্বাভাবিক
কতো ভাগ্যবান ওরা, যারা স্বাভাবিক, ওই অদ্ভুত প্রাণীগুলো :
যাদের মায়ের মাথা গোলমেলে ছিল না, বাবার নামে একজন মাতাল,
এক অপরাধী ছেলে,
একটা বাড়ি নেই কোথাও, এক অজানা রোগ,
ক্ষয়াটে ভালোবাসা যাদের খেয়ে ফ্যালেনি,
যাদের সতেরোটা হাসিমুখ বা বেশি পরে থাকতে হয়েছে,
যাদের ঠাশা হয়েছে জুতোয়, যারা আকর্ষণীয়,
রিন-টিন-টিন আর তাদের সচিবরা, যারা বলে “নিশ্চয়ই, কেন হবে না ?
এই ভাবে,”
যারা টাকা রোজগার করে আর গলা পর্যন্ত ভালোবাসা পায়,
বাঁশিঅলাদের পেছনে ইঁদুরেরা,
ফেরিঅলারা আর তাদের খদ্দের,
সুপারম্যানের ছোঁয়া-লাগা ভদ্রলোক,
বজ্রের পোশাকে পুরুষেরা আর বিদ্যুতের পোশাকে নারীরা,
নম্রস্বভাবীরা, বিচক্ষণরা, রুচিবানরা,
যারা বিনীত, যারা মিষ্টিস্বভাব, যাদের খাওয়া যায় আর পান করা যায়,
কতো ভাগ্যবান তারা, পাখিরা আর জমির সার আর পাথরেরা ।
ওদের কেবল অন্যের পথা থেকে আলাদা থাকতে দাও, সেই যারা তৈরি করে জগতকে আর স্বপ্নদের আর বিভ্রমগুলো
আর সিমফনিগুলো, যেসব শব্দ আমাদের ছিঁড়ে ফ্যালে
আর আমাদের পুনর্নিমাণ করে, তাদের মায়ের চেয়েও বেশি মাথা খারাপ,
বাপের চেয়ে বেশি মাতাল, নিজের অপরাধী ছেলেদের তুলনায় বজ্জাত,
ভালোবাসা তাদের খেয়ে ফেলেছে আর আরও ক্ষয়াটে করেছে :
তারা এই সমস্ত ঘাটিগুলো নরকে ফেলে আসুক আর ভুলে যাক ।
No comments:
Post a Comment