Wednesday, July 3, 2019

মেক্সিকোর কবি কারমেন বুলোসা-র কবিতা ( ১৯৫৪ ) । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

মেক্সিকোর কবি কারমেন বুলোসা-র কবিতা (১৯৫৪ )

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী 

কুঠার

আমরা ইস্পাত আর আগুনের কুঠার ।
আমরা ফসল কাটা আর আলোকিত করার জন্যে বাঁচি ।
ধাতু দিয়ে,
আমরা গুড়িটাকে ফেলি ।
আগুন দিয়ে
আমরা কাটা অংশকে আলোকিত করি,
আমরা যা তাকে ফেলার জন্যই ।

ঘাগরা ফাঁপাবার ফ্রেমের বৈচিত্র
সবকিছুই তাড়াহুড়ো করে    
( মাছ, পিঁপড়ে )       
আর আমি কবরের উদ্দেশে,
আমার শেষ গন্তব্য ।  
আমি দৌড়োই, আমার পোশাকের ফোঁড় আর ব্যকরণ থেকে
গরিমা ফ্রেমের বৈচিত্রের      
মৃত মানুষের খুলিতে আঁকা হাসির দিকে     
“বিদায়”, মেয়েটির শেষ কথা । “ফ্রেমের বৈচিত্র্যের ক্ষমতার মৃত্যু হোক!”    
আমি আমার কবরে চেপে পর্যটন করি,
আমার সম্পূর্ণ জীবন ঘাগরা ফাঁপাবার ফ্রেমে  ।
“চুপ”,
মাছটা বলল,
আমি এখানে বাইরে এসেছি ফ্রেমে”
এটা বেড়িয়েছে আর বেড়িয়েছে,
তিমিমাছ ;
সমুদ্র ছিল তার ফ্রেম ।
সবকিছুই তাড়াহুড়ো করে,
আর আমি আমার কবরের উদ্দেশে
আমার ফ্রেম খুলে ফেলার জন্য 
ফ্রেমের শাসনের থেকে
ওরা আমার কাছ থেকে একটা দাঁড় নেয়
আর একটা চকোলেট ।                                

 বার্মুডা ট্র্যাঙ্গল

১ 

এক জোড়ার পরে আরেকটা ( এখন ওদের আমি তিন মাত্রার শব্দে বলতে পারি )

বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেলের নেমন্তন্ন ছিল ।       

আমি ভেসে পড়লুম ; আমি অসম্ভব জলে নিজেকে হারিয়ে ফেললুম ; আমি ডুবে গেলুম।  

আমি টিকে গেলুম, এক মরুদ্বীপের তীরে, আমার পোশাক ( এক জোড়ার সঙ্গে আরেকটা ) ছিড়ে ফর্দাফাঁই      

আমার থেকে অনেক দূরে ।                                   

২.

ট্র্যাঙ্গলটা আঁকা
স্কার্টগুলোর ওপর
আমার হৃদয়ের ।
স্কার্টগুলোতে
আমার হৃদয়ের
আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি
অনপনেয়ভাবে ।

৩.
আমার স্বামীর নিরেট দেহ আমাকে ভাসিয়ে রাখে,
কিন্তু আমার হৃদয় ডুবতে থাকে,
এর আগে উল্লেখ-করা ট্র্যাঙ্গেলের অবিরাম সন্ধানে
আমি নিজেকে খেয়ে ফেলার নির্ণয় নিই ।
আমার পক্ষে এটা জানা যথেষ্ট যে সেখানে সব শান্তি খোয়াতে হবে
আমি ভুল করি । আমি নিজেকে হারাই না । আমি আর তীরে যাবো না ।
আমি প্রতিরোধ করব ।
আমি জলের বাইরের মাছ হতে শিখব ।

আর শব্দ কখনও মাংস হলো না...   

আর শব্দ কখনও মাংস হলো না কেননা তা সুস্পষ্ট নয়, বরং অন্য কোনো মাংসকে দেয়া।   

আমি আগেই নিজেকে শব্দের মাধ্যমে মাংস করে তুলতে চেয়েছি।

কেবল   

আমি বেড়ে গেছি     

চিরকালের জন্য

আমার শুরু থেকে দূরত্বের ।   

উপসংহার

আমি যা বলতে চাই তার বিস্তার ঘটাতে চেষ্টা করছি,
কাপড়ে আমি একটা নতুন সুতো সেলাই করি,
ক্যানভাসে স্হবির পাখিগুলোকে জাগাই
মাঝ
উড়ালে
আর রাতে যে মহিলারা তাদের দিকে তাকায়
তারা উঠে পড়ে
জলের নিরীহ স্তর তাদের চোখ ঢেকে দ্যায়   
আর এক ডানার ঝাপটায় ছড়িয়ে পড়ে

আমি জানি আমি স্যাঁতসেতে জায়গায় পড়ে আছি…
আমি জানি আমি স্যাঁতসেতে জায়গায় পড়ে আছি
দুপুরের, ছড়িয়ে-পড়া আর নগ্ন, ঠিক ভাসমান 
নয় বরং নিরুদ্বেগ অনেকটা তাদের মতন
যারা ভূমাধ্যাকর্ষণ  আর
আবহাওয়া থেকে মুক্ত, কিছুই চায় না
তাদের তুলে ধরার জন্য ।         

অন্ধকার জল   
তুমি সমতলের কথা বলো যা রাতে ভেঙে আলাদা হয়ে যায়,
সীমাহীন অন্ধকার,
দিগন্তের ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, প্রশান্ত আর তলহীন   

ভাঙা বৃত্ত, অবহেলিত মর্মরধ্বনির সংখ্যা অবিরাম বাড়তে থাকে,
একাধিক ব্যুহের সেনাবাহিনী হয়ে যায়,
অবিরাম শব্দ, অবিরাম ভুলবোঝাবুঝি    
( তোমার গন্ধই একমাত্র শক্তি 
টিকে যাওয়া দিনের একক নির্যাস )

আমার হাত খোলা রয়েছে অন্ধকার ঝর্ণা ছোঁবার জন্য
যাতে অজস্র  বয়নপ্রণালী নিজেদের মেলে ধরে
সচেতনভাবে আমি হাত খুলে রেখেছি : কিছুই আমাকে থামাতে পারে নাল
আমি কোনোকিছুই থামাই না । এই স্বচ্ছ অদম্য স্রোতে, আমি হারিয়ে ফেলেছি
এই দান খেলার উপায় ।
এই গতিবিধির সঙ্গে, আমি শেষ ভার্জিন প্রক্রিয়ার প্রমাণ ত্যাগ করেছি, এর
শেষ আর অনন্তকালীন আশ্রয় ।                                        

জগত থেকে কোনো কিছুই আমাকে আলাদা চিহ্ণিত করে না     

হ্যাঁ, তুমিই একমাত্র শক্তি, যে নিশ্চিত মুহূর্ত অপেক্ষা করে আমার জন্য রাতের এক দিকে আমাকে তুলে নেবার জন্য, কিন্তু তুমি ছিলে একমাত্র প্রতিধ্বনি নামকরণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন যা সমতলভূমিতে অন্ধকার বজায় রাখে       

হ্যাঁ জগত থেকে কোনো কিছুই আমাকে আলাদা চিহ্ণিত করে না কেননা আমার কিছুই নেই । 

কিন্তু ( ধীরে বাতাস বইতে থাকে ) ধূলির প্রতিটি কণা, জলের প্রতিটি ফোঁটা যা বাতাসের সঙ্গে আসে, আমার ভেতরে প্রবেশের আগের এক মুহূর্তে, প্রত্যেকে থেমে যায় । কোনোকিছুই আমাকে জগত থেকে আলাদা চিহ্ণিত করে না, তা সত্যি, কিন্তু কিছুই আমার মাধ্যমে বেরোয় না । সবকিছু, আমার ভেতরে প্রবেশের ঠিক আগের মুহূর্তে, আমাকে ইশারা করে, ধরে রাখে, প্রতিষ্ঠা করে, আমার সীমাগুলো ।

রাত   

রাত:

            অদ্ভুত পাপড়ি যা মরচেপড়া ডানার মতন ঝরে
           দেয়াল থেকে ঝরা মিহি মরচের মতন
খুলে ধরে     
                   ছড়িয়ে পড়ে
( কেমন শব্দ হয় তা আমি শুনতে পাই:                       

        একটা পাপড়ি, একটা ঢেউ, খসা পলেস্তারা, মরচে-পড়া পাপড়ি )

….অদ্ভুত বিরতি যা স্বয়ং হবার জন্য নাড়িভূঁড়িকে নগ্ন করে । 

সুতো ভুলে যায়

সুতো ভুলে যায়,

বিভিন্ন সুতো আর ফোঁড়ের নকশাকে নির্দেশ দিতে গিয়ে স্মৃতি হারিয়ে ফ্যালে

দুই টুকরো হয়,   

কেমন করে নাটাইয়ে পাক খেতে হবে তা না জেনেই   

পোষ না মেনে, সুতোটা মেলে ধরে আর ঘন সাভানায় মোটা ছুরির ধারের মতন     ঢুকে যায়, পেয়ারা পাতার ছবি আঁকা নির্দেশের বইতে,    শান্ত ডাঁটিতে যা নিজের ভার না কমিয়ে শেকড় হয়ে যায়, ভিজে মাটি হবার ইচ্ছায় ।

তবু এটা তোমার বিষয়ে নয় যে আমি আলোচনা করব কিন্তু বধির আওয়াজ আমার মগজ ভরে তুলেছে আজ ।
কান থেকে কানে যতো আমি দূরে যাই ।
ক্রোধের ভুলো অনুসরণ ।   
আর তুমি ঘুমোও ।                                                বাতাসের সঙ্গে তোমার শ্বাসের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তুমি ঘুমোও।
আমি নিজের মগজের ভেতর ছটফট করি ;   
আমার এগোনোকে কিছুই স্তিমিত করতে পারে না ; কিছুই একে আলগা করতে পারে না।
আর আমি একমাত্র সেই শব্দ শুনি না যা একে থামাতে পারবে
                                                           কুমারীত্ব নাশ করা স্তব্ধতা।   

( তুমি ঘুমোও   
তুমি আমার শরীরের দেহরেখাকে আদর করার
ভান করো )        
কান থেকে কানে।
কিছুই কান-থেকে-কানের নৈঃশব্দে ঢুকতে পারে না যা তোমার বধিরতার সবুজ আচ্ছাদন দিয়ে সুরক্ষিত ।

No comments:

Post a Comment